খালের জল চুরি করছে ভেড়ি

সেচ না পেয়ে মাথায় হাত বোরোচাষির

চাষিদের অভিযোগ, মাছের ভেড়ির জন্য এলাকার শঙ্করআড়া খাল থেকে বড়  পাম্প বসিয়ে জল তুলে নেওয়ার জেরেই গ্রামের নাসাখাল শুকিয়ে গিয়েছে। ফলে বোরো চাষের জমিতে সেচের জন্য জল পাওয়া যাচ্ছে না। এ নিয়ে পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে জানিয়েও কোনও সুরাহা হচ্ছে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৪৩
Share:

জমিতে জল নেই। রোপণ বাঁচবে কি, প্রশ্ন জয়কৃষ্ণপুরে। নিজস্ব চিত্র

সপ্তাহখানেক আগে নিজের ২৭ ডেসিমাল জমিতে বোরোধান রোপণ করেছিলেন জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের শঙ্করপ্রসাদ দাস। কিন্তু মাঠে জলের অভাবে সেই চারা শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম। জল না পেলে চাষ বাঁচাবেন কী করে, সেই চিন্তায় মাথায় হাত পড়েছে শঙ্করের। শুধু শঙ্কর নয়, তমলুক ব্লকের পদুমপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের জয়কৃষ্ণপুর, কালিকাপুর, মির্জাপুর প্রভৃতি গ্রামের কয়েকশো চাষির ধানজমি সেচের অভাবে শুকিয়ে যেতে বসেছে। জমিতে জলের অভাবে বীজতলা তৈরি থাকা সত্ত্বেও ধানের চারা রোয়ার কাজ করতে পারছেন বহু বোরোচাষি।

Advertisement

চাষিদের অভিযোগ, মাছের ভেড়ির জন্য এলাকার শঙ্করআড়া খাল থেকে বড় পাম্প বসিয়ে জল তুলে নেওয়ার জেরেই গ্রামের নাসাখাল শুকিয়ে গিয়েছে। ফলে বোরো চাষের জমিতে সেচের জন্য জল পাওয়া যাচ্ছে না। এ নিয়ে পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে জানিয়েও কোনও সুরাহা হচ্ছে না।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, তমলুক ব্লকের পদুমপুর-১ ও ২ পঞ্চায়েতের গ্রামগুলির মাঠের নাসা খালগুলি শঙ্করআড়া খালের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। তমলুক শহরে দক্ষিণচড়া শঙ্করআড়ায় রূপনারায়ণ নদের কাছে লকগেটের মাধ্যমে শঙ্করআড়া খালে নদীর মিষ্টি জল ঢোকে। সেই জল তমলুক ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় বোরো চাষের কাজে ব্যবহার করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে ওই জলের উপর ভরসা করেই চাষ করে আসছেন চাষিরা। কিন্তু কয়েক বছর ধরে এলাকার ধানজমিতে একের পর এক মাছের ভেড়ি তৈরির ফলে জমির পরিমাণ কমেছে। যে সব জমিতে এখনও ধান চাষ করা সেখানে বর্ষায় নিকাশি ও শীতকালে বোরোচাষে সেচের সমস্যা বাড়ছে বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মাছের ভেড়ি ভরার জন্য ধান চাষের চেয়ে পাঁচ-গুণ বেশি জলের প্রয়োজন হয়। এর জন্য বড় বড় পাম্প বসিয়ে শঙ্করআড়া খাল থেকে প্রচুর পরিমাণে জল তুলে নেওয়া হচ্ছে। তার ফলে শঙ্করআড়া খালের সঙ্গে যুক্ত গ্রামীণ নাসা খালগুলিতে আর জল ঢুকছে না। এতেই চাষের জমিতে জলের সঙ্কট তৈরি হয়েছে।

Advertisement

জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের চণ্ডীচরণ বেরা বলেন, ‘‘বীজতলা তৈরি হয়ে রয়েছে জমিতে রোপণের জন্য। কিন্তু গত দু’টি কোটালের জন্য অপেক্ষা করলেও গ্রামের খালে জল আসেনি। জলের অভাবে জমিতে হাল করতেই পারছি না। কী ভাবে রোপণ হবে তা নিয়ে খুবই চিন্তায় পড়েছি। পঞ্চায়েত থেকেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।’’ জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের নির্দল পঞ্চায়েত সদস্য প্রদীপ দাস বলেন, ‘‘গ্রামে দুটি মাঠ মিলিয়ে প্রায় ৯০ বিঘা ধানজমি ছিল। কিন্তু ৫০ বিঘার প্রায় পুরোটাই মাছের ভেড়ি তৈরি হয়েছে। বাকি ৪০ বিঘা জমিতে জলের অভাবে ধানচাষ নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন একশোর বেশি চাষি। একই ভাবে সমস্যায় পড়েছেন পাশের কালিকাপুর ও মির্জাপুর গ্রামের চাষিরাও। পঞ্চায়েত সমিতিকে সব জানানো হয়েছে।’’

গ্রামের চাষি সুকুমার বালা বলেন, ‘‘গত বছর পর্যন্তও ধান চাষে জলের সমস্যা এত প্রকট ছিল না। কিন্তু এ বছর এখনও গ্রামের খালে জল আসেনি। ফলে চাষের জন্য জল সঙ্কটে পড়তে হয়েছে।’’

তমলুক পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কাজল কর বলেন, ‘‘রূপনারায়ণ নদে জোয়ারের জল কম আসায় শঙ্করআড়ার খাল দিয়ে জল অনেক কম আসছে। ফলে ব্লকের প্রায় সব এলাকায় চাষের জলের সমস্যা হচ্ছে। মাছের ভেড়ির জন্যই জলের সমস্যা হচ্ছে এমনটা ঠিক নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন