হাতুড়ে-হাতে বাবার মৃত্যু

হাসপাতালে মেয়ে এল তিনদিন পর

রবিবার সকালে প্রবল জ্বর নিয়ে হাসপাতালের শিশু বিভাগে ভর্তি হয় সুমি মুর্মু নামে বছর এক শিশু। শহরের কাছে সুয়াবাসা গ্রামে তার বাড়ি। গত বুধবার সকালে দশদিন জ্বরে ভুগে বাড়িতেই মৃত্যু হয়েছে সুমির বাবা মঙ্গল মুর্মুর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৭ ০০:৪৪
Share:

জ্বরের-ঘোরে: জেলা হাসপাতালে সুমি। নিজস্ব চিত্র

তিনদিন ধরে জ্বরে ভুগছিল ছ’বছরের ছোট্ট মেয়েটি। ঝাড়গ্রাম শহর থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে এক আদিবাসী গ্রামে তার বাড়ি। তবু চিকিৎসা করছিলেন স্থানীয় এক হাতুড়ে। অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে দেখে শেষ পর্যন্ত তার জেঠু তাকে নিয়ে আসে হাসপাতালে। ততক্ষণে আচ্ছন্ন হয়ে প়ড়েছে সে।

Advertisement

রবিবার সকালে প্রবল জ্বর নিয়ে হাসপাতালের শিশু বিভাগে ভর্তি হয় সুমি মুর্মু নামে বছর এক শিশু। শহরের কাছে সুয়াবাসা গ্রামে তার বাড়ি। গত বুধবার সকালে দশদিন জ্বরে ভুগে বাড়িতেই মৃত্যু হয়েছে সুমির বাবা মঙ্গল মুর্মুর। মঙ্গলকেও হাতুড়ে দেখানো হয়েছিল। জ্বর সারেনি।

ওই দিন থেকেই জ্বরে পড়ে সুমি। একই হাতুড়েকে ডাকেন পরিজনরা। জ্বর সারেনি। উল্টে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, রক্ত পরীক্ষায় সুমির ম্যালেরিয়া ও জন্ডিস ধরা পড়েছে। হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার প্রসূন ঘোষ বলেন, “অবস্থা সঙ্কটজনক। সাধ্যমত চেষ্টা করছি।”

Advertisement

হাসপাতালের শিশুবিভাগে গিয়ে দেখা গেল মশারির ভিতর শুয়ে রয়েছে সুমি। পাশে বসেছিলেন মা বালি মুর্মু। স্বামীর জ্বর সারছিল না, তবু তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাননি কেন? বালিদেবী বলেন, “ধারে কাছে স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই। জ্বর-সর্দিকাশি হলে হাতুড়েকেই আমরা দেখাই। হাতুড়ে বলেছিলেন কয়েকদিন ওষুধ খেলে ভাল হয়ে যাবে।”

তবে এটুকুই শেষ নয়। এরপর বালিদেবী বলেন, “হাতুড়েদের সরকার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। কখন হাসপাতালে দেখাতে হবে, সেটা তো উনিই বলে দেবেন শুনেছি। আমরা অতশত বুঝি না।” বাড়িতে মশারি টাঙানোর অভ্যাস নেই বলেও জানিয়েছেন তিনি।

রবিবার অবশ্য উদ্যোগী হন মঙ্গলবাবুর দাদা মানু মুর্মু। তিনিই ভাইঝিকে নিয়ে ছুটে আসেন হাসপাতালে। তাঁর কথায়, “গ্রামে আশাকর্মীরা মাঝে মধ্যে আসেন। সচেতনতা প্রচার সে ভাবে চোখে পড়েনি।”

ঝাড়গ্রাম শহরের জামদা এলাকার হাতুড়ে ছোটনকুমারই মঙ্গল ও সুমির চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কেন রোগীদের রক্ত পরীক্ষা করাতে বলেননি। কেনই বা সরকারি হাসপাতালে পাঠাননি? আমতা আমতা করে হাতুড়ের জবাব, “আমি তো প্রাথমিক চিকিৎসাটুকু করেছিলাম। এমন হয়ে যাবে বুঝতে পারিনি।”

মাঝেমধ্যেই অভিযোগ আসে, টাকা রোজগারের জন্যই হাতুড়েরা জ্বরের রোগীদের হাসপাতালে পাঠাতে চান না। চলতি বছরেই ঝাড়গ্রাম জেলায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই হাতুড়ের হাত ঘুরে আসায় রোগীর অবস্থা সঙ্কটজনক ছিল।

ঝাড়গ্রামের ভারপ্রাপ্ত উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, “এত প্রচারের মাঝে এমন ঘটনা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। ওই হাতুড়ের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপের সুপারিশ করা হবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে।’’ আশাকর্মীরা কেন সুয়াবাসার বিষয়টি নজরে আনেননি, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে বলে তিনি জানান। ওই এলাকায় আরও আক্রান্ত আছেন কি না চিকিৎসক দল পাঠিয়ে দেখা হবে।

ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে এখন ম্যালেরিয়া আক্রান্ত এক শিশু-সহ ছ’জন চিকিৎসাধীন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন