ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে জমি নিয়ে বিবাদ স্কুলের

সরকারি জমির দখল নিয়ে বিরোধ বাধল একটি সরকারি স্কুল ও ব্লক প্রশাসনের মধ্যে। শনিবার পটাশপুর-২ ব্লকের তাহালিয়া এলাকার এই ঘটনা ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায়। স্কুলের এলাকা দখল হয়ে যাচ্ছে এই অভিযোগে স্কুল ছাত্রী, প্রধান শিক্ষিকা-সহ অন্য শিক্ষিকারা কাজে বাধা দেন ব্লক স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ ও অন্যান্য ব্লক আধিকারিকদের। দু’পক্ষের বচসা ক্রমে গড়ায় হাতাহাতিতে। তবে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গরা শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৩৪
Share:

সরকারি জমির দখল নিয়ে বিরোধ বাধল একটি সরকারি স্কুল ও ব্লক প্রশাসনের মধ্যে। শনিবার পটাশপুর-২ ব্লকের তাহালিয়া এলাকার এই ঘটনা ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায়। স্কুলের এলাকা দখল হয়ে যাচ্ছে এই অভিযোগে স্কুল ছাত্রী, প্রধান শিক্ষিকা-সহ অন্য শিক্ষিকারা কাজে বাধা দেন ব্লক স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ ও অন্যান্য ব্লক আধিকারিকদের। দু’পক্ষের বচসা ক্রমে গড়ায় হাতাহাতিতে। তবে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৭ সালে তাহালিয়া শোভাময়ী বালিকা বিদ্যালয়ের পরিচালন কমিটি, পাশের ৬ ডেসিমিল স্কুলের জায়গা ব্লক উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নামে দান করেন। এরপর টাকা না থাকায় ঘর হয়নি বলে জায়গাটি খালি পড়েছিল। আগের স্কুল পরিচালন কর্তৃপক্ষ মাসিক ভাড়ার বিনিময়ে ঐ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি স্কুলের একটি ঘরে চালানোর অনুমতি দেন। তবে বর্তমান স্কুল কর্তৃপক্ষ ছাত্রীদের পঠনপাঠনের সমস্যায় আগের সিদ্ধান্ত বাতিল করে টাকা না নিয়ে ব্লক প্রশাসনকে ঘরটি খালি করতে বলেন। এ বার ব্লক স্বাস্থ্য দফতর, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নামে নথিভুক্ত জায়গায় ঘর করতে গেলে এ দিন স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিরোধ বাধে।

স্কুলের তরফে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা লক্ষ্মী অট্ট বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলের জায়গা খুব কম। তাছাড়া জায়গাটি দানের প্রক্রিয়া নিয়ে আইনি জটিলটা রয়েছে। তাই আমরা চেয়েছিলাম ভালো করে আলোচনার পর জায়গা নিয়ে যা করার করুক ব্লক প্রশাসন। কিন্তু জোর করে ওরা ওখানে দখলদারি করছিল। কথা বলতে যেতেই আমাকে ও আমার শিক্ষিকা-সহ ছাত্রীদের কটূক্তি ও হুমকি শুরু হয়।’’ পুলিশের কাছে তিনি লিখিত অভিযোগ করেছেন। এমনকী বিষয়টি জানানো হয়েছে মহকুমাশাসক ও বিডিওকেও।’’ জমি দান করার আইনি জটিলতা প্রসঙ্গে তিনি জানান, মূল দলিলে ১৯৬৬ সালে এলাকার জানা পরিবারের ৬ সদস্য জায়গাটি শুধুমাত্র মহিলা শিক্ষা প্রসারে দান করেন বলে উল্লেখ রয়েছে।তবে কীভাবে তা নারী শিক্ষা ছাড়া অন্য বিষয়ে দান করা হল? তিনি আরও বলেন- ‘‘আসলে ওই জায়গায় আমার ব্যক্তিগত স্বার্থ নেই। তবে স্কুলের স্বার্থ রক্ষা করা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে আমার দায়িত্ব। এখন পুরোপুরি আইনের জটিলতা কাটিয়ে না নিলে পরে আমার সময়ে স্কুলের জায়গাটি অন্য কাজে দেওয়া হয়েছে বলে আমাকেই পরে দায়ী করা হবে।’’

Advertisement

অন্য দিকে পটাশপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ তাপস বেরার কথায়, ‘‘প্রথমে আমাদের স্কুলের ঘর থেকে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি তুলে নিতে বলা হল। এবার উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির নামে সরকারি রেকর্ড থাকা জায়গাটিতে ঘর করতে যেতেই বেআইনিভাবে বাধা দেওয়া হল।’’ তাঁর অভিযোগ, এ দিন স্কুলের শিক্ষিকা ও স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের অপমান করে। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করার কথাও জানিয়েছেন তিনি। পটাশপুর-২ এর সভাপতি চন্দন সাউ বলেন, ‘‘আমাদের কাছে জায়গাটির সরকারি রেকর্ড থাকা সত্ত্বেও স্কুলের শিক্ষিকারা অন্যায়ভাবে বাধা দিলেন।’’ বিডিও শুভজিৎ কুণ্ডু বলেন, ‘‘শুনেছি জায়গাটির বর্তমান মালিকানা ব্লক উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের। তবে ওখানে দুই পক্ষের গোলমালের খবর পেয়ে পরিস্থিতি শান্ত করতে পুলিশ পাঠাই। এছাড়া বিষয়টি মহকুমাশাসককে সবিস্তারে জানিয়েছি।’’

ব্লক ভূমি সংস্কার আধিকারিক বিকাশ নন্দী জানিয়েছেন, গত সপ্তাহে ব্লক স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ স্কুলের দান করা জায়গাটির মালিকানা সংক্রান্ত জরুরি নথি দেখিয়ে নিয়ম মেনে রেকর্ড করেছেন।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, তাহালিয়া বালিকা বিদ্যালয়টির পরিচালক নির্বাচন না হওয়ায় স্কুলের বর্তমান প্রশাসক মহকুমাশাসক অসীম কুমার বিশ্বাস। তিনি এ দিনের বিষয়টি প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘ঘটনাটি অনভিপ্রেত। আমি ঘটনার খবর পেয়ে স্কুল ও ব্লক কর্তৃপক্ষকে শান্ত থাকার নির্দেশ দিয়েছি। আশাকরি আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন