পাহাড়ি গ্রামে আদিবাসী বাড়ির উঠোনেই গণ ভাইফোঁটা

তিন গ্রামের লক্ষ্মীমণি, পূজা, কল্পনাদের মতো জনা পঞ্চাশ আদিবাসী কিশোরী ও তরুণীরা ঘটা করে ভাইফোঁটা দিল। তাদের কাছ থেকে গ্রামের ছেলে-বুড়োরা যেমন ফোঁটা নিলেন, তেমনই বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া ও প্রাক্তনীরাও ফোঁটা দিলেন ও পাহাড়ি গ্রামের বোনেদের কাছ থেকে। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বেলপাহাড়ি শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৮ ০১:০০
Share:

বেলপাহাড়িতে গণভাইফোঁটা। নিজস্ব চিত্র

অভাবের সংসার। তাই ভাইফোঁটার দিনটা আলাদা তাৎপর্য ছিল না লক্ষ্মীমণি সরেন, পূজা শবর, কল্পনা শবরদের কাছে। কিন্তু শুক্রবার দিনটা স্মরণীয় হয়ে রইল তাদের কাছে। শবর ও আদিবাসী অধ্যুষিত পাটাঘর, বরাপাল ও লাগাদড়ি গ্রামের বাসিন্দাদের নিয়ে ভাইফোঁটার আনন্দে মাতলেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একঝাঁক তরুণ পড়ুয়া ও প্রাক্তনী।

Advertisement

এ দিন ওই তিন গ্রামের লক্ষ্মীমণি, পূজা, কল্পনাদের মতো জনা পঞ্চাশ আদিবাসী কিশোরী ও তরুণীরা ঘটা করে ভাইফোঁটা দিল। তাদের কাছ থেকে গ্রামের ছেলে-বুড়োরা যেমন ফোঁটা নিলেন, তেমনই বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া ও প্রাক্তনীরাও ফোঁটা দিলেন ও পাহাড়ি গ্রামের বোনেদের কাছ থেকে।

লালজলের দেব পাহাড়ে রয়েছে প্রাগৈতিহাসিক যুগের গুহা। সেই গুহার ভিতর রয়েছে আদিম নীল গাইয়ের চিত্র। সারা বছর বহু পর্যটক লালজলে আসেন। কিন্তু সেভাবে পর্যটনকেন্দ্রিক শিল্প গড়ে না ওঠায় স্থানীয় আদিবাসী মূলবাসীদের জীবন যাত্রার মানোন্নয়ন হয়নি বলে অভিযোগ। এলাকায় সেচের ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি নির্ভর চাষাবাদ হয়। মাঠের ফসলের বেশিরভাগটাই খেয়ে নেয় দলমা থেকে আসা হাতির দল। তবে এখন পরিস্থিতি কিছুটা বদলাচ্ছে। কল্পনা শবরের মতো এলাকার কিছু তরুণী উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন দেখছেন। কল্পনা উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হওয়ার পরে বাঁকুড়ার রাউতারা কলেজে পড়ছেন। ওই এলাকায় বিভিন্ন সচেতনতা কর্মসূচি করার সুবাদে নিয়মিত যাতায়াত করেন ঝাড়গ্রামের সমাজকর্মী ঝর্না আচার্য। তাঁর মাধ্যমেই বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের একটি সংগঠনের সদস্যেরা জেনেছিলেন পূজা, লক্ষ্মীমণিদের কথা। ঝর্না বলেন, ‘‘ওই ছাত্র সংগঠনটি নানা ধরনের সেবামূলক কাজ করে। লালজল এলাকার বাসিন্দাদের কথা জেনে তাঁরা ভাইফোঁটা উপলক্ষে পাহাড়ি এলাকার বোনেদের কাছে ফোঁটা নিতে চান। গণ ভাইফোঁটার আয়োজন করতে চান।’’ এ দিন দেব পাহাড়ের পাদদেশে এক আদিবাসীর বাড়ির উঠোনে গণ ভাইফোঁটার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে ছিলেন ভুলাভেদার প্রাক্তন প্রধান নিত্যানন্দ শবর। আদিবাসী ও আদিম শবর সম্প্রদায়ের বোনেরা ভাইদের মঙ্গল কামনা করে ফোঁটা দিল। আর সদ্য স্কুল শিক্ষকতার পেশায় নিযুক্ত কৃষ্ণগোপাল চক্রবর্তী, স্নাতকোত্তর স্তরের ছাত্র অনিমেষ বৈদ্যরা আপ্লুত হয়ে বললেন, ‘‘আগামী বছর আবার বোনেদের কাছে ফোঁটা নিতে আসব।’’

Advertisement

ওই ছাত্র সংগঠনটির উদ্যোগে গ্রামবাসীদের জন্য নানা উপহার নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বোনেদের জন্য ছিল নতুন পোশাক আর মিষ্টি। ভাইফোঁটায় মিষ্টি মুখের পরে দুপুরের পাতে ছিল ভাত, ডাল আর মাছের ঝোল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন