অধ্যক্ষকে চড় মামলা

অভিযোগকারী গরহাজির, বেকসুর খালাস সৌমেন

কলেজ চত্বরে অধ্যক্ষকে চড় মারার মামলায় অভিযুক্ত টিএমসিপি নেতা সৌমেন আচার্যকে বেকসুর খালাস দিল আদালত। মঙ্গলবার ঝাড়গ্রাম প্রথম এসিজেএম আদালতের বিচারক প্রসূন ঘোষ সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে সৌমেনকে বেকসুর খালাস দেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৬ ০১:১৫
Share:

আদালতের রায় শোনার পরে অনুগামীদের সঙ্গে সৌমেন। নিজস্ব চিত্র

কলেজ চত্বরে অধ্যক্ষকে চড় মারার মামলায় অভিযুক্ত টিএমসিপি নেতা সৌমেন আচার্যকে বেকসুর খালাস দিল আদালত। মঙ্গলবার ঝাড়গ্রাম প্রথম এসিজেএম আদালতের বিচারক প্রসূন ঘোষ সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে সৌমেনকে বেকসুর খালাস দেন।

Advertisement

২০১২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজে ছাত্র সংসদের নির্বাচন সংক্রান্ত একটি সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছিলেন তৎকালীন অধ্যক্ষ কিশোরকুমার রাঢ়ী। বৈঠক শুরুর আগে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে কলেজ চত্বর। দু’দল ছাত্রের মারামারি থামাতে প্রাঙ্গণে ছুটে আসেন অধ্যক্ষ কিশোরবাবু। অভিযোগ, ওই সময় অধ্যক্ষকে সপাটে চড় ও ঘুসি মারেন সৌমেন। অসুস্থ হয়ে পড়েন কিশোরবাবু। বিরোধীপক্ষের মারধরে সৌমেনও পাল্টা জখম হন। ওই দিনই সৌমেনের বিরুদ্ধে ঝাড়গ্রাম থানায় অভিযোগ দায়ের করেন কিশোরবাবু। জামিনযোগ্য লঘু ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ। ওই সময় সৌমেন ছিলেন টিএমসিপি-র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সহ-সভাপতি।

ওই সময় অবশ্য তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ঘটনার প্রসঙ্গে বলেছিলেন, “শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে কেবল শিক্ষকরাই হেনস্থা হচ্ছেন তা নয়, ছাত্র হেনস্থার ঘটনাও ঘটছে।” এরপর এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও সৌমেনকে অবশ্য ‘ফেরার’ দেখিয়ে আদালতে চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ। পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়ে যান সৌমেন।

Advertisement

গত বছর মার্চে ঝাড়গ্রাম প্রথম এসিজেএম আদালতে মামলাটির বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য বার বার আদালত তলব করা সত্ত্বেও অভিযোগকারী কিশোরবাবু আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসেননি। কিশোরবাবু ছাড়াও বাকি পাঁচজন সাক্ষীদের তালিকায় ছিলেন মামলার রেকর্ডিং অফিসার নবীনচন্দ্র পাত্র, তদন্তকারী অফিসার প্রদীপ রথ এবং কলেজের তিন জন কর্মী-- রজত চক্রবর্তী, নির্মল মাহাতো ও বিদ্যুৎ কপাট। নির্মলবাবু ও বিদ্যুৎবাবু অবশ্য সাক্ষ্য দেন। বাকিরা আদালতের সমন পেয়েও হাজির হননি। সরকারি কৌঁসুলি অনিল মণ্ডল বলেন, “মূল অভিযোগকারী অধ্যক্ষকে বার বার আদালত সমন পাঠানো সত্ত্বেও তিনি সাক্ষ্য দিতে আসেননি। দু’জন সাক্ষী আদালতে এসে ঘটনার সম্পর্কে কিছু জানেন না বলে দাবি করেন। ফলে বিচারক অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন।” সৌমেনের আইনজীবী হিমেল ছেত্রী বলেন, “আদালতের রায়েই প্রমাণ হয়ে গেল, আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে সাজানো অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল।”

অধ্যক্ষকে মারধরের ঘটনার অভিযোগ ওঠার পরে সৌমেনের বিরুদ্ধে কোনও রকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং ২০১২-র ডিসেম্বরে কিশোরবাবুকে কোচবিহারের এবিএন শীল কলেজে ভাষাতত্ত্বের বিভাগ না থাকা সত্ত্বেও তাঁকে সেখানে শিক্ষক পদে বদলি করা হয়। গত বছর নভেম্বরে ওই কলেজ থেকেই তিনি অবসর নেন। এ দিন ফোনে কিশোরবাবু অবশ্য দাবি করেন,“আমি আদালতের কোনও সমন পাইনি। এ বিষয়ে আমার আর কিছু বলারও নেই। অবসর নিয়েছি। আর কোনও ঝামেলা চাই না।”

সৌমেনও বলেন, “উনি (কিশোরবাবু) পিতৃতুল্য ব্যক্তি। এমন জঘন্য অভিযোগ থেকে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পেরেছি। সেটাই বড় প্রাপ্তি।” টিএমসিপি-র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভানেত্রী দেবলীনা নন্দী বলেন, “আইন আইনের পথে চলেছে। তাই সৌমেন বেকসুর খালাস পেয়েছেন।” ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি দুর্গেশ মল্লদেব বলেন, “সৌমেন নির্দোষ প্রমাণিত। এবার তাঁকে দলের কাজে লাগানো হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন