পাট্টার জমিতে বৃদ্ধাকে চাষ করতে বাধা

মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগপত্রে প্রতিভাদেবী জানিয়েছেন, আশির দশকে চন্দ্রি মৌজায় ২.৪৭ একর (প্রায় ৬ বিঘে) জমি পাট্টা পান তাঁর স্বামী পরীক্ষিত দাশ।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৭ ০১:০১
Share:

দখল: এই জমি নিয়েই বিতর্ক দেখা দিয়েছে। নিজস্ব চিত্র।

সরকার থেকে জমির পাট্টা পেয়েছেন। তবু সেই জমি চাষ করতে পারছেন না স্বামীহারা ছিয়াত্তর বছরের বৃদ্ধা। জমিতে চাষ করতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। সুবিচার চেয়ে শাসকদলের স্থানীয় নেতৃত্ব এবং প্রশাসনের শরণাপন্ন হয়েছিলেন বৃদ্ধা। কিন্তু এক বছর ধরে ঘোরাঘুরি করেও কোনও সুরাহা না হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছেন ঝাড়গ্রাম ব্লকের চন্দ্রি গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা প্রতিভা দাশ।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়ার বিষয়টি জানাজানি হতেই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক নকুলচন্দ্র মাহাতো বলেন, “প্রতিভা দেবীর অভিযোগের শুনানি করে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার জন্য ভূমি সংস্কার আধিকারিককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগপত্রে প্রতিভাদেবী জানিয়েছেন, আশির দশকে চন্দ্রি মৌজায় ২.৪৭ একর (প্রায় ৬ বিঘে) জমি পাট্টা পান তাঁর স্বামী পরীক্ষিত দাশ। ২০০৩ সালে স্বামী মারা যাওয়ার পর তাঁরাই ওই জমিতে চাষবাস করছিলেন। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় ২০১৬-র বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর। শাসক দলের স্থানীয় কিছু লোকজন তাঁর জমিতে দলের ঝাণ্ডা পুঁতে চাষ করতে বাধা দেন। যার জেরে তার পর ওই জমিতে তাঁরা চাষ করতে পারেননি। এবারও বর্ষার মরসুমে জমিতে আমন ধান রোয়ার কাজ করতে গেলে তাঁকে শুধু বাধা নয়, হুমকিও দেওয়া হয় বলে প্রতিভাদেবীর অভিযোগ।

Advertisement

প্রতিভাদেবী। চাষের বাধা উঠবে কি?

এ বিষয়ে স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধান অলকা দাসকে জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁর যুক্তি, ‘‘প্রতিভা দেবীর স্বামী পরীক্ষিত দাশ ওই জমির পাট্টা পেয়েছিলেন এটা সত্যি। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর ওই জমির উপর তাঁর পরিবার তাঁদের অধিকার প্রতিষ্ঠা না করায় স্থানীয় কিছু লোক তা দখল করে চাষ করছে।’’ যদিও ঝাড়গ্রাম ব্লক তৃণমূল সভাপতি অনিল মণ্ডল বলেন, ‘‘মুখমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের আমলে সত্তরের দশকের শেষদিকে ভূমি বোর্ডের পক্ষ থেকে পরীক্ষিতবাবুর নামে জমির পাট্টা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। পরে বাম আমলে তিনি ওই জমির পাট্টা পান। আইনগত ভাবে জমিটি প্রয়াত পরীক্ষিতবাবুর উত্তরাধিকারীদের। ওই জমিতে চাষ করতে তাঁকে যাতে কোনও বাধার মুখে না পড়তে হয় সেজন্য স্থানীয় কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” দলের ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি চুড়ামনি মাহাতোর কথায়, ‘‘এটা অন্যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে ওই জমিতে প্রতিভাদেবীই চাষ করবেন। কারও বাধা দেওয়া উচিত নয়। এ ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছি।’’

কিন্তু প্রতিভাদেবী ভূমি সংস্কার দফতরে অভিযোগ করার পরেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন?

এ প্রসঙ্গে ঝাড়গ্রাম ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক মনোতোষ মণ্ডল বলেন, “আমি কয়েক মাস হল এখানে এসেছি। বিষয়টি জানতে পেরে খোঁজ নিয়েছি। ওই বৃদ্ধার অভিযোগের শুনানির জন্য শীঘ্রই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে।”

আর প্রতিভাদেবীর বক্তব্য, ‘‘ছেলে-বৌমা ও নাতিকে নিয়ে সংসারে আয় বলতে চাষবাস। অথচ নিজের জমিতেই চাষের অধিকার নেই। মুখ্যমন্ত্রীকে না জানালে হয়তো এমন নড়েচড়ে বসত না প্রশাসন। এখন জমি ফিরে পাওয়াই একমাত্র লক্ষ্য। পরিবারটা বাঁচে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন