Vidyasagar University

তিন জেলাশাসক নিহত হন ‘সন্ত্রাসবাদী’দের দ্বারা, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের প্রশ্নপত্রে বিতর্ক

দেশপ্রেমী স্বাধীনতা সংগ্রামী ও শহিদদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলা হয়েছে দাবি করে প্রতিবাদ জানিয়েছে ‘শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ’। জেলা জুড়ে শিক্ষা ও রাজনৈতিক মহলেও প্রতিবাদ দেখা গিয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৫ ০২:৩৩
Share:

বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়। —ফাইল চিত্র।

বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের ষষ্ঠ সেমিস্টারের ইতিহাসের প্রশ্নপত্রকে কেন্দ্র করে বিতর্ক ছড়াল। ১২ নম্বর দাগের প্রশ্ন, ‘‘মেদিনীপুরের তিনজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নাম কর যারা সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা নিহত হন?’’ দেশপ্রেমী স্বাধীনতা সংগ্রামী ও শহিদদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ হিসাবে অভিহিত করার প্রতিবাদ জানিয়েছে ‘শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ’। জেলা জুড়ে শিক্ষা ও রাজনৈতিক মহলেও প্রতিবাদ দেখা গিয়েছে।

Advertisement

শিক্ষামহলের দাবি, ইতিহাসের প্রশ্নপত্র বলেই মনে করা হচ্ছে ওই ‘তিনজন’ ছিলেন অত্যাচারী ব্রিটিশ জেলাশাসক বার্জ (১৯৩৩), পেডি (১৯৩১) ও ডগলাস (১৯৩২)। পেডিকে হত্যা করেছিলেন বিমল দাশগুপ্ত ও জ্যোতিজীবন ঘোষ। ডগলাসকে হত্যা করেছিলেন প্রভাংশুশেখর পাল, সঙ্গী ছিলেন প্রদ্যোৎকুমার ভট্টাচার্য। বার্জকে হত্যা করেছিলেন অনাথবন্ধু পাঁজা, মৃগেন্দ্রনাথ দত্ত, রামকৃষ্ণ রায়, নির্মলজীবন ঘোষ, ব্রজকিশোর চক্রবর্তী প্রমুখ। বিচারে প্রদ্যোৎ, রামকৃষ্ণ, নির্মলজীবন, ব্রজকিশোরের ফাঁসি হয়েছিল। বিমল, জ্যোতিজীবন, প্রভাংশুর কারাদণ্ড হয়েছিল। বার্জকে হত্যা করার পরে পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই অনাথবন্ধু শহিদ হন। পরের দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মৃগেন্দ্রনাথ। উল্লেখ্য, তিন অত্যাচারী জেলাশাসকের সমাধি এখনও রয়েছে শহরের সেখপুরার গির্জাপ্রাঙ্গণে, যা মনে করিয়ে দেয় স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস। অন্য দিকে, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মূর্তি মেদিনীপুর শহর-সহ বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত। তাঁরা শ্রদ্ধার সঙ্গে আজও স্মরণীয়। উল্লেখ্য, পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পরিষদের যে ভবনে ডগলাসকে হত্যা করা হয়েছিল ওই ভবনকে ‘হেরিটেজ’ স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি দীর্ঘ বছর ধরে জানিয়ে আসছেন শহরের বাসিন্দাদের একাংশ।

সেই বিতর্কিত প্রশ্নপত্র। —নিজস্ব চিত্র।

বিতর্কিত প্রশ্ন প্রসঙ্গে অধ্যাপক নির্মল মাহাত বলেন, ‘‘পরীক্ষা চলছে। তবে ওই ধরনের কোনও লাইন আছে কি না তা দেখার পরেই বলতে পারব। যদি থাকে তা হলে বন্ধনী বা ঊর্ধ্বকমার মধ্যে থাকার কথা। যদি তা না দেওয়া থাকে তা হলে ছাপার ভুল।’’ তবে ‘সন্ত্রাসবাদী’ শব্দচয়নই কেন তার উত্তর মেলেনি। যদিও প্রশ্নপত্রে কোথাও ‘ব্রিটিশ-ভারতে মেদিনীপুরে কর্মরত অত্যাচারী জেলাশাসক’দের কথা উল্লেখ নেই। তবু প্রতিবাদকারীরা মনে করছেন বার্জ-পেডি-ডগলাস হত্যার কথাই বলা হয়েছে। ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলে আসলে ‘স্বাধীনতা সংগ্রামী’দের নাম জানতে চাওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, একই প্রশ্নপত্রে ইংরেজি মাধ্যমের প্রশ্নে আবার ‘জঙ্গি জাতীয়তাবাদী’ উল্লেখ করা হয়েছে।

Advertisement

ইংরেজি মাধ্যমে প্রশ্ন। —নিজস্ব চিত্র।

এই প্রসঙ্গে শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের পক্ষ থেকে সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, ‘‘ইতিহাস বিভাগ-সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ভুল স্বীকার করে ক্ষমাপ্রার্থনা করা হোক। ইতিহাস-চেতনা বিষয়ে এই ধরনের ভুল যাতে আর না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement