কাঁথিতে বন্ধ ওষুধ দোকান। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
করোনা দাপটে ওষুধের আকাল দেখা দিয়েছে। ঝাঁপ বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছে একাধিক খুচরো দোকান।
একা করোনা নয়, সঙ্গে নানা অসুখ দোসর হিসেবে জুটেছে এই মুহূর্তে। কিন্তু করোনার প্রকোপ বাড়ায় মুশকিলে পড়েছেন সেইসব রোগীরা। কাঁথি শহরের অধিকাংশ ওষুধের দোকানের বন্ধ বলে অভিযোগ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু কাঁথি শহরে ৭৫-৮০টি খুচরো ওষুধের দোকান রয়েছে। শহরের স্কুল বাজার, টাউনহলের সামনে, সরস্বতী তলা, উদয়ন রোড—এরকম বহু এলাকায় গত দু’দিন ধরে খুচরো ওষুধের দোকান বন্ধ। সাতমাইল থেকে বাবার জন্য ওষুধ কিনতে গিয়েছিলেন অরুণ জানা। তাঁর দাবি, ‘‘কমপক্ষে ১০টি দোকানে ঘুরেছি। কিন্তু সব জায়গাতেই বন্ধ ছিল দোকান। পরে অনেক খোঁজাখুঁজি করে একটি ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ জোগাড় করেছি।’’
করোনা আতঙ্কে যখন দেশজুড়ে লকডাউন শুরু হয়েছে, তখন অন্যান্য অসুখে আক্রান্ত রোগী এবং তাঁর পরিবারের লোকেরা ওষুধ কিনতে গিয়ে বাজারে হয়রান হচ্ছেন। কাঁথির এক খুচরো ওষুধ দোকানদার শিবশঙ্কর প্রধান বলেন, ‘‘হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের নিয়মিত ওষুধ লাগে। অর্থ বর্ষ শেষ হতে চলার কারণে ওই ওষুধ এমনিতেই বাড়ন্ত। তারপর ওষুধ সংস্থাগুলি সেই সব ওষুধ আপাতত সরবরাহ করছে না।’’
ইদানীং প্যারাসিটামল এবং ক্লোরোকুইন-এর মতো ওষুধের চাহিদা তুঙ্গে। কিন্তু ক্রেতাদের চাহিদামত ওষুধ একেবারেই নেই বলে জানা গিয়েছে ওষুধ ব্যবসায়ীদের মারফত। শুধু খুচরো ওষুধ দোকানদার নয়, লকডাউনের পর থেকে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে ওষুধের স্টকিস্ট এবং পাইকারি দোকানগুলিও। কাঁথি শহর ও আশপাশের এলাকা মিলিয়ে প্রায় ৩০০ জন স্টকিস্ট এবং ৫০ জন পাইকারি দোকানদার রয়েছেন। কিন্তু বিভিন্ন ওষুধের জোগান না থাকায় মাথায় হাত পড়েছে তাঁদের।কাঁথি শহরের অন্যতম বড় পাইকারি ওষুধ বিক্রেতা তথা কাঁথি বাজার ব্যবসায়ী সমন্বয় কমিটির সম্পাদক জগদীশ দিন্দা বলেন, ‘‘কয়েকদিন ধরে ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি লকডাউন করে দিয়েছে। ফলে অত্যাবশ্যকীয় ওযুধপত্র সরবরাহ বন্ধ। তাই বাজারে ওষুধ সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
এদিকে একের পর এক খুচরো ওষুধের দোকানের ঝাঁপ বন্ধ হতে শুরু করায় রোগীদের সঙ্কটের কথা ভেবে উদ্বেগ বাড়ছে ব্যবসায়ী সমন্বয় কমিটির।কমিটির সম্পাদক জগদীশবাবুর দাবি, ড্রাগ অ্যাসোসিয়েশনকে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে বলা হয়েছে। যাতে ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধপত্র সরবরাহ স্বাভাবিক রাখে।
কাঁথিতে প্রায় সমস্ত খুচরো ওষুধের দোকান বন্ধ থাকার বিষয়টি জানার পর মহকুমাশাসক শুভময় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘খুচরো ওষুধ দোকান বন্ধ থাকার বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি।রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে যাতে ওষুধের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকে সে জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’’