Coronavirus

বিদেশ ফেরতের খোঁজ দিচ্ছেন এলাকাবাসীই 

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা মানছেন, ‘‘স্থানীয়দের থেকে এখন অনেক খবর আসছে। লোকজন সচেতন হচ্ছেন। বিদেশ ও ভিন্ রাজ্য থেকে যাঁরা ফিরেছেন, তাঁদের অন্তত দু’সপ্তাহ হোম আইসোলেশনে থাকতে বলা হচ্ছে। তাঁদের উপরে নজরও রাখা হচ্ছে।’’ 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর ও খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২০ ০২:০৮
Share:

প্রতীকী ছবি

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার স্বাস্থ্য ভবনের কন্ট্রোল রুমের ফোন বেজেই চলেছে। এখানে ফোন করে বিদেশ ও ভিন্ রাজ্য থেকে ফিরে আসা লোকজনদের খোঁজখবর দিচ্ছেন অনেকে। সূত্রের খবর, মেদিনীপুর শহরের বিধাননগরে দুবাই ফেরত দু’জন, হাতারমাঠে আমেরিকা ফেরত একজন, চিড়িমারসাইতে অস্ট্রেলিয়া ফেরত একজন রয়েছেন বলে রবিবার জেলার স্বাস্থ্য ভবনে খবর আসে। খবর দেন ওই এলাকার লোকজনেরাই। শুধু বিদেশ নয়, ভিন্ রাজ্য থেকে ফেরাদেরও খবর দিচ্ছেন অনেকে। খবর পেয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকায় যাচ্ছে স্বাস্থ্য দফতরের দল। ভিন্ রাজ্যে কাজে যাওয়া লোকজনেরাও এই সময়ে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। কেউ জ্বর, সর্দি, কাশির উপসর্গ নিয়ে ফিরলে দ্রুত তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলার স্বাস্থ্য ভবনের তরফে। রবিবার মেদিনীপুর স্টেশনে ভিন্ রাজ্য থেকে ফেরা যাত্রীদের থার্মাল স্ক্রিনিং করা হয়েছে। এঁদের সকলকে গৃহ পর্যবেক্ষণে থাকতে বলা হয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় স্থানীয়দের ক্ষোভ, বিদেশ থেকে ফিরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করিয়েই বাড়িতে চলে আসছেন অনেকে। এঁদের কেউ কেউ রাস্তাতেও ঘুরছেন। বিদেশ ফেরত, ভিন্ রাজ্য ফেরতেরা প্রকাশ্যে ঘোরাঘুরি করায় রবিবার শহরের একাধিক এলাকায় উত্তেজনাও ছড়ায়। খবর পেয়ে পুলিশও যায়।

Advertisement

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা মানছেন, ‘‘স্থানীয়দের থেকে এখন অনেক খবর আসছে। লোকজন সচেতন হচ্ছেন। বিদেশ ও ভিন্ রাজ্য থেকে যাঁরা ফিরেছেন, তাঁদের অন্তত দু’সপ্তাহ হোম আইসোলেশনে থাকতে বলা হচ্ছে। তাঁদের উপরে নজরও রাখা হচ্ছে।’’

জেলার স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, রবিবার পর্যন্ত পশ্চিম মেদিনীপুরে ১১৬ জনের উপরে নজরদারি চলেছে। এরমধ্যে ২২ জন ২৮ দিন ‘হোম আইসোলেশনে’ ছিলেন। তাঁরা আপাতত বিপন্মুক্ত। বাকি ৯৪ জন এখনও আইসোলেশনে রয়েছেন। এরমধ্যে সরকারি হাসপাতালে আইসোলেশনে রয়েছেন ১১ জন। আর হোম আইসোলেশনে রয়েছেন ৮৩ জন। রবিবার পর্যন্ত জেলার বাসিন্দা, বিদেশ ফেরত ৯ জনের খোঁজ মেলেনি। এঁদের খোঁজ চলছে।

Advertisement

খড়্গপুর শহরেও বিদেশ থেকে ফেরা অনেকে নিয়ম মেনে গৃহবন্দি থাকছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। পুর এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, ইন্দায় প্রাক্তন এক কাউন্সিলরের ছেলে লন্ডন থেকে ফিরে প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছেন। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কৌশল্যাতে এক যুবক দিন চারেক আগে জার্মানি থেকে ফিরে বাড়িতে আছেন। তাঁর বাড়িতে এখন প্রতিদিন প্রার্থনা হচ্ছে। সেখানে অনেক মানুষ যাচ্ছেন। শহরের গোপালনগর, ছোটট্যাংরা এলাকাতেও কয়েকজন বিদেশ থেকে এসে চিকিৎসকের কাছে যাননি বলে অভিযোগ উঠেছে। শহরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বালাজি মন্দির পল্লি সংলগ্ন এলাকায় তিনটি পরিবারে বিদেশ থেকে আসা কয়েকজন রয়েছেন বলেও অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দা তথা কংগ্রেসের জেলা কার্যকরী সভাপতি দেবাশিস পালের ক্ষোভ, “স্বাস্থ্য দফতর, পুরসভা বা প্রশাসনের এ নিয়ে কোনও হেলদোল নেই।”

মালঞ্চর ১০ নম্বর ওয়ার্ডের যুব সঙ্ঘ এলাকাতেও দু’টি বাড়িতে বিদেশ থেকে আসা কয়েকজন রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শনিবার রাতে তার মধ্যে একটি বাড়িতে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় ক্লাবের সদস্যরা। স্থানীয় বাসিন্দা হীরক বসুর ক্ষোভ, ‘‘ওয়ার্ডের স্বাস্থ্যকর্মীরা এসে ওই ব্যক্তিদের কোয়রান্টিনে থাকতে বলে গিয়েছেন। কিন্তু তাঁরা সেটা করছেন না।”

খড়্গপুরের অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস পাল বলেন, “মানুষ যদি সচেতন না হন তো সত্যিই সমস্যা। এ বার পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে হবে।” যদিও খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী সামসুদ্দিন আহমেদের বক্তব্য, ‘‘আমাদের কী করণীয়? কেউ সজাগ না হলে আমরা তো বাড়িতে গিয়ে হাত ধুইয়ে দিতে পারব না!” খড়্গপুরের মহকুমাশাসক বৈভব চৌধুরী জানান, সোমবার কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক করে এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। মেদিনীপুরে সরকারি তরফে মাইকিং শুরু হয়েছে। ঘোষণায় জানানো হচ্ছে, বিদেশ কিংবা ভিন্ রাজ্য থেকে ফিরে এলে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে তিনি যেন স্বেচ্ছায় আপাতত গৃহবন্দি থাকেন। করোনা নিয়ে অহেতুক উদ্বিগ্ন না হওয়ারও বার্তা দেওয়া হচ্ছে ওই ঘোষণায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন