পিটিআইয়ের তোলা প্রতীকী ছবি।
আর পাঁচটা রোগীর মতোই হলদিয়ার বৃদ্ধ ভদ্রলোকের সিটি স্ক্যানের কাজে কর্মীদের সাহায্য করেছিলাম। তখনও কি জানতাম— ওই বৃদ্ধই করোনায় আক্রান্ত!
গত দু’দিন ধরে নার্সিংহোমে কোয়রান্টিনে রয়েছি আমরা। হলদিয়ার করোনা আক্রান্ত বৃদ্ধ গত ২৯ মার্চ রাতে এখানে এসেছিলেন। তাঁর হৃদপিণ্ডের চিকিৎসা চলছিল। সে জন্য পর দিন সিটি স্ক্যান করানো হয়। আমি নার্সিংহোমে সিটি স্ক্যান এবং এক্স-রে করার সঙ্গে যুক্ত। ওই দিন ছুটিতে থাকলেও কর্তৃপক্ষের কথায় বাড়ি থেকে এসে বৃদ্ধের সিটি স্ক্যানের সময় কর্মীদের সাহায্য করেছিলাম। পরে ওই বৃদ্ধে নিয়ে চলে যায় পরিজন। পরে জানতে পারি তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।
সিটি স্ক্যানের সময় আমি সরাসরি বৃদ্ধের সংস্পর্শে আসিনি। তবে ওই রোগী আইসিইউ’তে যে শয্যায় ছিলেন, তাঁর পাশের শয্যায় থাকা এক রোগীর এক্স-রে করতে গিয়েছিলাম। ফলে আমি-সহ নার্সিংহোমের ৩২ জন চিকিৎসক-কর্মীকে কোয়রান্টিনে থাকতে হচ্ছে।
বাড়িতে যৌথ পরিবার। বাড়ি ছেড়ে চেনা জায়গায় থাকলেও কোয়রান্টিনের অভিজ্ঞতা একেবারেই নতুন। নার্সিংহোমে আমার কাজের জায়গা সংলগ্ন একটি ঘরে একা রয়েছি। একই তলায় কিছুটা দুরে কেবিন রুমে আমার সহকর্মীরা রয়েছেন। ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে রাত পর্যন্ত সব কিছু কাজ সতর্কতার সঙ্গে করতে হচ্ছে। খাবার সময় ছাড়া মুখে মাস্ক পরে রয়েছি। সকাল ৬ টায় ঘুম থেকে উঠে হাত- মুখ ধোওয়ার পর জামা-প্যান্ট কাচা, ঘর জীবাণুমুক্ত করার পর স্নান— সবই নিজেদের করতে হচ্ছে। এখানে খবরের কাগজ নেই, টিভি নেই। বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ বলতে মোবাইলের ইন্টারনেট। কাজের মধ্যে থাকলে কত দ্রুত সময় কেটে যায়, টের পেতাম না। আর এখন সময় যেন কাটতেই চাইছে না।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের লোকেরাও শনিবার আমাদের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। আমাদের চিকিৎসক সব সময় আমাদের উৎসাহ দিচ্ছেন। বলেছেন, কোনও চিন্তা নেই। কিন্তু একটা চিন্তা তো থেকেই যাচ্ছে— সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরলেও পাড়ার লোকজন আমাকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নেবে তো!