বাড়ি ফেরার টিকিটের খোঁজে রাত জেগে লাইন

দিল্লি-মু্ম্বইয়ের অনেক কারিগর বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছেন।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঘাটাল     শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২১ ০৭:০৭
Share:

বাড়ি ফিরছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা। ঘাটালে। ছবি: কৌশিক সাঁতরা।

ফের উস্কে উঠল এক বছর আগের স্মৃতি। সেই লকডাউন। ফের ঘরমুখো পরিযায়ী শ্রমিকদের একাংশ। টিকিট কাটতে কেউ রাত জাগলেন স্টেশনে। কেউ আবার লাইন দিলেন ট্রাভেল এজেন্সির অফিসে। কিন্তু দীর্ঘ অপেক্ষাতেও টিকিট পেলেন না অনেকে। কারও শিকে ছিঁড়ল ‘তৎকাল’ ব্যবস্থায়।

Advertisement

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বেসামাল গোটা দেশ। গত বছর পরিযায়ী শ্রমিকদের অনেকে কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এ বার পরিস্থিতি আরও খারাপ। অনেকেই ভিন্ রাজ্যে কর্মস্থলে থাকাকালীনই আক্রান্ত হচ্ছেন। ঘটেছে মৃত্যও। গত তিন দিনে কর্মস্থলেই সংক্রমিত হয়ে দাসপুরের দুই স্বর্ণশিল্পীর মৃত্যু হয়েছিল। সোমবার অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়ওয়াড়া থেকে দাসপুরের বাসিন্দা আরেক পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যুর খবর এসেছে। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁর নাম নির্মল বেরা (৩২)। বাড়ি দাসপুর থানার জোতঘনশ্যামে। বিজয়ওয়াড়ায় তাঁর চপ-মুড়ির দোকান ছিল।

সংক্রমণের গতি আটকাতে সোমবার রাত থেকে আগামী এক সপ্তাহের জন্য দিল্লিতে লকডাউন জারি করা হয়েছে। জরুরি পরিষেবা ছাড়া সর্বত্র কড়া বিধিনিষেধ ও কার্ফু জারি হয়েছে মহারাষ্ট্রে। লকডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে রাজস্থানেও। তার প্রভাব পড়েছে অলঙ্কার শিল্পেও। নতুন করে কাজ হারিয়েছেন অনেকে। দিল্লি, মু্ম্বই, তেলেঙ্গানা, রাইপুর, জয়পুর,সুরাত-সহ দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের অনেকেই এখন বাড়ি ফিরতে চাইছেন। দাসপুরের সাগরপুর গ্রামের যুবক সুভাষ মালিক ও চাঁইপাটের সঞ্জয় সাঁতরা কাজ করেন মুম্বইয়ের জাভেরি বাজারে। মঙ্গলবার তাঁরা দু’জনেই বললেন, ‘‘গত বছর বাড়ি ফেরার কষ্ট কোনওদিন ভুলব না। সেই স্মৃতি আবার না ফিরে আসে! এখন কাজ নেই। কতদিন বসে থাকব! তাই বাড়ি ফিরতে চাই। কিন্তু টিকিট পাচ্ছি না।” দাসপুরের গৌরার বাসিন্দা স্বরূপ জানা আবার দিল্লি থেকে জানালেন, তাঁর বেশ কয়েকজন বন্ধু ও পরিচিত করোনা আক্রান্ত। কিন্তু হাসপাতালে শয্যা নেই। অক্সিজেন নেই। চিকিৎসা না পেয়ে অনেকে ছটপট করছেন। তাই সবাই যেভাবেই হোক বাড়ি ফিরতে চাইছে।

Advertisement

দিল্লি স্বর্ণকার সেবা সঙ্ঘের কার্তিক ভৌমিক এবং মু্ম্বইয়ের স্বর্ণশিল্পী সংগঠনের কালীদাস সিংহরায় অবশ্য জানান, গত বছরের মতো বাড়ি ফেরার হিড়িক পড়ে গিয়েছে, এমনটা এখনই বলা যাবে না। তবে তাঁরা মানছেন, দিল্লি-মু্ম্বইয়ের অনেক কারিগর বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছেন। তাঁদের তাড়াহুড়ো না করতে অনুরোধ করা হয়েছে। ছত্তীসগঢ়ের স্বর্ণশিল্পী সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ কৃষ্ণ দাস ও গুজরাতের রাজকোট স্বর্ণশিল্পী সংগঠনের পক্ষে প্রশান্ত বসু বলেন, “অনেকেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। অনেকে আবার অপেক্ষা করে পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন। আমরা তাঁদের পাশে আছি।”

পাশে দাঁড়ানোর কথা বলছে রাজনৈতিক দলগুলিও। দাসপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি তথা তৃণমূল নেতা আশিস হুতাইত এবং দাসপুরের বিজেপি প্রার্থী প্রশান্ত বেরা দু’জনই জানান, যে সব পরিযায়ী শ্রমিক বাড়ি ফিরে আসছেন তাঁদের সঙ্গে দলগত ভাবে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। দাসপুরের সিপিএম প্রার্থী ধ্রুবশেখর মণ্ডলও বলেন, “বিভিন্ন রাজ্যে আমাদের সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আছেন। তাঁদের মাধ্যমে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন