COVID-19

রাতেও অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে হাজির

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বেসামাল গোয়ালতোড়ে সাহেবই কার্যত রক্ষাকর্তা।

Advertisement

রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২১ ০৬:২৯
Share:

সাহেব মাহাতো। নিজস্ব চিত্র।

করোনা রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে যখন লাগাম ছাড়া টাকা চাইছেন কিছু অ্যাম্বুল্যান্স চালক, সেখানে সাহেব উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। দিনে তো বটেই। রাত-বিরেতেও পিপিই পড়ে অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে সাহেব করোনা রোগীদের পৌঁছে দিচ্ছেন কখনও হাসপাতালে, কখনও বাড়িতে।

Advertisement

বছর তেত্রিশের সাহেব মাহাতো অ্যাম্বুল্যান্স চালক। গোয়ালতোড়ের কড়াসাই গ্রামে বাড়ি। নাম ইন্দ্রজিৎ হলেও ডাকনাম সাহেবেই তাঁকে বেশি চেনে এলাকাবাসী। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বেসামাল গোয়ালতোড়ে সাহেবই কার্যত রক্ষাকর্তা। অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের একাংশ সংক্রমণের আশঙ্কায় হাত গুটিয়ে নিয়েছিলেন। অ্যাম্বুল্যান্স না পাওয়ার আশঙ্কায় আতঙ্ক চেপে বসছিল সংক্রমিতদের পরিবার-সহ এলাকাবাসীদের মধ্যে। এই অবস্থায় এগিয়ে আসেন উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ সাহেব।

২০১৪ সাল থেকে গাড়ি চালানো শুরু সাহেবের। গতবছর থেকে অ্যাম্বুল্যান্স চালাচ্ছেন। এখন বিধায়ক তহবিলের অর্থে কেনা অ্যাম্বুল্যান্সের চালক সাহেব। কয়েকদিন আগেই প্রত্যন্ত পেরুয়াবাদ গ্রামের জ্বর-শ্বাসকষ্টে ভোগা এক মহিলাকে হাসপাতালে আনতে কোনও অ্যাম্বুল্যান্স চালকই রাজি হচ্ছিলেন না। পিপিই কিট পড়ে সাহেব অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে গিয়ে ওই মহিলাকে বাড়ি থেকে তুলে হাসপাতালে পরীক্ষা করিয়ে ফের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছিলেন সাহেব। গোয়ালতোড়ের বাসিন্দা দীপঙ্কর দত্ত বলেন, ‘‘আমার জেঠু ও জেঠিমা করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় কোভিড হাসপাতালে ভর্তি জরুরি হয়ে পড়ে। সাহেবদা নিজে অ্যাম্বুল্যান্স চালিয়ে তাঁদের শালবনির কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করে আসেন। সাহেবদা না থাকলে কী যে হত!’’

Advertisement

ব্লক প্রশাসন বা স্বাস্থ্যদফতর থেকে দিনে বা রাতে যখনই ফোন আসুক, সাহেব তৈরি। পিপিই কিট পড়ে, নিজেকে সম্পূর্ণ সুরক্ষিত করে অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে হাজির। রোগী নেওয়ার আগে-পরে অ্যাম্বুল্যান্সকে ভাল করে জীবাণুমুক্ত করে তবেই পরের কাজে হাত দেন। সাহেব বলেন, ‘‘আমার বাড়িতে বাবা, মা, স্ত্রী, দুটো বাচ্চা। আমি সুরক্ষিত থেকেই এই পরিষেবা দিই। এই সময়েই তো মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত। মানুষের প্রয়োজনে না লাগলাম তো কিসের মানুষ!’’ বাবা ধনপতি মাহাতোর ছাপাখানা আছে। সাহেব নিজে গোয়ালতোড় কলেজের কর্মী। করোনা কালে কলেজ বন্ধ। সেই অবসরে অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে এই পরিষেবা দিয়ে চলেছেন।

ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক বিকাশ সিংহ বলেন, ‘‘এই সময়ে তো অ্যাম্বুল্যান্স পাওয়া যাচ্ছে না। উনি (সাহেব) এগিয়ে আসায় আমাদের কাজের সুবিধা হচ্ছে। ’’ গড়বেতা ২ বিডিও কৃষ্ণনির্মাল্য ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে যে পরিষেবা উনি (সাহেব) দিচ্ছেন, তার জন্য ধন্যবাদ! খুব খুব ভাল কাজ করছেন। যখনই প্রয়োজন তখনই আসছেন, এমন উৎসাহীদেরই তো চাই করোনা মোকাবিলায়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement