COVID-19

কার্যকর হয়নি নির্দেশ, মাস্ক ছাড়াই ট্রেনে

খড়্গপুর ডিভিশনের বিভিন্ন স্টেশনেই মাস্ক ছাড়া বেপরোয়া যাত্রীদের অবাধ যাতায়াতের ছবি ধরা পড়েছে।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২১ ০৫:৫৫
Share:

মাস্ক ছাড়াই ট্রেনে। রবিবার। খড়গপুর স্টেশনে। নিজস্ব চিত্র।

দেশ জুড়ে করোনা সংক্রমণ এখন বেলাগাম। অথচ করোনা বিধি কার্যকরে গতিহীন রেল। ট্রেনের মধ্যে গাদাগাদি করে মাস্ক ছাড়াই যাতায়াত করছেন অধিকাংশ যাত্রী। মাস্ক ছাড়া চলাচলে পাঁচশো টাকা পর্যন্ত জরিমানার নির্দেশ দিয়েছে রেলবোর্ড। অবশ্য তা কার্যকর হয়নি। মাস্ক ছাড়া ট্রেনে অবাধ যাতায়াত চলছে। প্ল্যাটফর্মে বসে দিব্যি ঘুমিয়েও পড়ছেন মাস্কহীন যাত্রী।

Advertisement

রবিবার খড়্গপুর রেল ডিভিশনের সদর খড়্গপুর স্টেশনে ধরা দিয়েছে এমনই অসচেতনতার ছবি। শনিবারই রেল বোর্ডের এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর নীরজ শর্মা নির্দেশিকা জারি করে জানিয়েছেন, মাস্কহীন ট্রেন যাত্রীদের ৫০০ টাকা জরিমানা করা হবে। অথচ এ দিন খড়্গপুর ডিভিশনের বিভিন্ন স্টেশনেই মাস্ক ছাড়া বেপরোয়া যাত্রীদের অবাধ যাতায়াতের ছবি ধরা পড়েছে। দেশে আড়াই লক্ষের বেশি দৈনিক সংক্রমণ। তবু বেশিরভাগ যাত্রীর মাস্ক ছিল নাকের নীচে অথবা থুতনিতে। ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মের আসনে বুকের উপর মাস্ক রেখে ঘুমিয়েই পড়েছিলেন অমল রায়। মাস্ক পরেননি কেন? জবাব এল, “ঝাড়খণ্ড থেকে এসেছি। গড়বেতায় যাব বলে ট্রেনের অপেক্ষা করছিলাম। মাস্ক পরেই ছিলাম। ভাবলাম আসন যখন খালি একটু বিশ্রাম নিই।
পাশে লোক না থাকলে তো করোনা হয় না।”

শুধু খড়্গপুর স্টেশন নয়, এই ছবি ডিভিশনের সর্বত্র। সামনে আরপিএফ দেখে অনেকে মাস্ক পরে স্টেশনে ঢুকলেও ট্রেনে উঠেই মাস্ক খুলে আড্ডা জমিয়েছেন। ট্রেনের ভিতরে ছিল না দূরত্ব বিধি। এ দিন পাঁশকুড়া থেকে হাওড়া-সেকেন্দ্রাবাদ এক্সপ্রেসে উঠেছিলেন হায়দরাবাদের একটি আসবাব সংস্থার একদল শ্রমিক। প্রত্যেকেই মাস্ক ছাড়া জমিয়ে গল্প করছিলেন। মাস্ক কোথায় জিজ্ঞাসা করতে কেউ প্যান্টের পকেট থেকে নোংরা মাস্ক বের করে মুখে দিলেন। আবার কেউ পাশের কুপে রাখা ব্যাগ হাতিয়ে বের করলেন মাস্ক। তাঁদের মধ্যে শেখ ইরশাদ বলছিলেন, “ট্রেনে গরমে মাস্ক পড়ে থাকা যাচ্ছে না। তাই খুলে রেখেছিলাম।” রেলের চালক থেকে রেলকর্মীদের মধ্যে সংক্রমণ দ্রুত ছড়াচ্ছে। তবু সচেতনতা ফিরছে না। এ সব দেখে দিঘা থেকে অন্ধ্রপ্রদেশে যাওয়া নার্সিং পড়ুয়া মৌটুসি শাসমল বলেন, “ট্রেনে ও স্টেশনে যে ভাবে মানুষ মাস্ক ছাড়া যাচ্ছে তা ভয়ঙ্ক। রেলের পক্ষ থেকেও কড়া পদক্ষেপ দেখছি না।”

Advertisement

এখন আবার বহু পরিযায়ী শ্রমিক মহারাষ্ট্র, বেঙ্গালুরু থেকে খড়্গপুর স্টেশন হয়ে জেলায় ফিরতে শুরু করেছেন। ইতিমধ্যেই জেলায় একাধিক পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যুও হয়েছে। অথচ তাঁদের অনেকের মুখেই নেই মাস্ক। মহারাষ্ট্রের থানে থেকে ফেরা দাসপুরের এক পরিযায়ী শ্রমিক বলেন, “মহারাষ্ট্রে যে অবস্থা সেটা তো এখানে নেই। আমি ট্রেনে মাস্ক পরেই এসেছি। মাস্ক পরে ব্যাগপত্র টানা কঠিন।”

এই পরিস্থিতি রেলের প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে খড়্গপুর-মেদিনীপুর-হাওড়া ডেইলি প্যাসেঞ্জার অ্যাসোশিয়েশনের সম্পাদক জয় দত্ত বলেন, “কম সংখ্যক ট্রেনে গাদাগাদি করে যেতে আমরা বাধ্য হচ্ছি। আমরা রেলকে বারবার ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানোর কথা বললেও বাড়ায়নি। করোনা বিধি কার্যকরেও রেল উদাসীন।” খড়্গপুরের ডিআরএম মনোরঞ্জন প্রধান বলছেন, “মাস্ক ছাড়া স্টেশন ও ট্রেনে যাতায়াতে পাঁচশো টাকা পর্যন্ত জরিমানা হবে। আমরা হোয়াটসঅ্যাপে এই নির্দেশিকা পেয়েছি। কিন্তু রবিবার ছুটি থাকায় কার্যকর করা যায়নি। সোমবার আলোচনা করে নির্দেশিকা কার্যকর করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন