Athletics

বৈতরণী পারেই বাধা!

সমস্যা মেটাতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে দুই গ্রামের বাসিন্দাদের নিয়ে বার কয়েক বৈঠক হলেও সমাধান সূত্র মেলেনি।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২১ ০৫:৫২
Share:

জামবনি: শ্মশানে মৃতদেহ দাহের অধিকারের দাবিতে বিধায়ক ও বিডিও-র দ্বারস্থ হয়েছেন জামবনি ব্লকের ধড়সা পঞ্চায়েতের ঢ্যাংবহড়া গ্রামের বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, পাশের গিধনি পঞ্চায়েতের ডুমুরিয়া গ্রামের বাসিন্দারা স্থানীয় শ্মাশানটি নিজেদের দাবি করে সেখানে ঢ্যাংবহড়ার বাসিন্দাদের শবদাহে বাধা দিচ্ছেন। শ্মশানের প্রাচীর ঘেরা চত্বরে ঢোকার দরজায় তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে ডুমুরিয়ার গ্রামবাসীদের নিয়ে গঠিত শ্মশান কমিটি।

Advertisement

ডুমুরিয়া গ্রামটি গিধনি পঞ্চায়েতের অন্তর্গত। বৈতরণী প্রকল্পে স্থানীয় শ্মশানটি সংস্কার হতেই দুই গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে শুরু হয়েছে তার দখলদারি নিয়ে দ্বন্দ্ব। দুই গ্রামের মাঝে রয়েছে শ্মশান। গিধনি পঞ্চায়েতের ডুমুরিয়া মৌজাতেই রয়েছে শ্মশানটি। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বহু বছর ধরে দুই গ্রামের বাসিন্দারা ওই শ্মশানেই শব দাহ করতেন। আগে শ্মশানের কোনও পরিকাঠামো ছিল না। শ্মশানের একটি কুসুমগাছের পূর্বদিকের জমিতে ডুমুরিয়ার বাসিন্দারা শবদাহ করতেন। পশ্চিমদিকে শবদাহ করতেন ঢ্যাংবহড়ার বাসিন্দারা। গত বছর বৈতরণী প্রকল্পে শ্মশানটির পরিকাঠামো তৈরির কাজ শুরু হয়। চলতি বছরে পরিকাঠামো তৈরির কাজ শেষ হয়ে যায়। কুসুম গাছটি সহ প্রাচীর ঘেরা শ্মশান চত্বরের ভিতরে শবদাহের জন্য কংক্রিটের ছাউনি দেওয়া কাঠের চুল্লির নির্দিষ্ট জায়গা করা হয়েছে। শ্মশানযাত্রীদের জন্য তৈরি হয়েছে প্রতীক্ষালয়ও। গত ১৮ জুন ঢ্যাংবহড়ার এক বাসিন্দার মৃত্যু হয়। যথারীতি শ্মশানে শবদাহ করা নিয়ে গোলমাল হয়। শবদাহ অবশ্য হয়। কিন্তু পরদিন ডুমুরিয়ার বাসিন্দারা সিদ্ধান্ত নিয়ে ১৯ জুন শ্মশানে ঢোকার দরজায় তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। শ্মশান কমিটির কর্মকর্তা ডুমুরিয়ার বাসিন্দা ভ্রান্তি দাস বলছেন, ‘‘প্রশাসনিক মহলে আবেদন করে আমাদের এলাকায় শ্মশানের পরিকাঠামো হয়েছে। ঢ্যাংবহড়া গ্রামটি ধড়সা পঞ্চায়েতের। ওরা গায়ের জোরে আমাদের শ্মশানে শবদাহ করতে চাইছে। গ্রামবাসী সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, অন্যগ্রামের শবদাহ এখানে হবে না।’’

সমস্যা মেটাতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে দুই গ্রামের বাসিন্দাদের নিয়ে বার কয়েক বৈঠক হলেও সমাধান সূত্র মেলেনি। ঢ্যাংবহড়ার বাসিন্দারা বলছেন, বহু বছর ধরে দু’টি গ্রামের শবদাহ ওই শ্মশানেই হচ্ছে। তাছাড়া সরকারি প্রকল্পে তৈরি হওয়া শ্মশানে কেন তাঁদের শবদাহ করতে দেওয়া হবে না সেই প্রশ্নও তুলেছেন ঢ্যাংবহড়ার বাসিন্দারা। সমস্যার কথা মানছেন ধড়সা পঞ্চায়েতের প্রধান রিতা পাত্র। তিনি বলছেন, ‘‘আগে শ্মশানের দু’প্রান্তে দুই গ্রামের বাসিন্দারা শবদাহ করতেন। শ্মশানের নতুন পরিকাঠামো গিধনি পঞ্চায়েতের এলাকায় তৈরি হয়েছে। ফলে ডুমুরিয়ার বাসিন্দারা শ্মশানটি তাঁদের বলেই দাবি করছেন।’’ গিধনি পঞ্চায়েতের স্থানীয় সদস্য বন্দনা হেমব্রম বলছেন, ‘‘শ্মশান নিয়ে দুই গ্রামের সমস্যার বিষয়টি প্রশাসনিকস্তরে বিবেচনাধীন রয়েছে।’’

Advertisement

এলাকার বিধায়ক (বিনপুর বিধানসভা) দেবনাথ হাঁসদা বলেন, ‘‘ওই শ্মশানে দুই গ্রামেরই শবদাহ এতদিন হয়েছে। সরকারি প্রকল্পে নতুন পরিকাঠামো তৈরির পরে কিছু বিতর্ক তৈরি হয়েছে। দুই গ্রামের বাসিন্দাদের নিয়ে আলোচনায় বসে সমস্যা মেটানো হবে।’’ সমস্যা মেটাতে শনিবার ব্লক অফিসে দুই গ্রামের বাসিন্দাদের নিয়ে বৈঠক করেন বিডিও। তবে ঢ্যাংবহড়ার বাসিন্দারা শ্মশানের অধিকারের দাবিতে অনড়। জামবনির বিডিও সৈকত দে বলেন, ‘‘বিকল্প ব্যবস্থা কি করা যায় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

গিধনি ও ধড়সা দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েতই তৃণমূলের দখলে। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যরাও তৃণমূলের। কিন্তু শ্মশান নিয়ে জট ছাড়াতে হিমসিম খাচ্ছেন শাসক দলের স্থানীয় নেতারা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন