Coronavirus

জ্বলল বাতি, চলল বিতর্কও

রবিবার সকালে থেকেই পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলায় মোমবাতি ও প্রদীপ কেনার ভিড় ছিল। অনেকে খোলাবাজারে না পেয়ে মাটির প্রদীপ কিনতে কুমোরপাড়ায় যান।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২০ ০৯:৫২
Share:

রবিবার রাত তখন ৯টা। ঘাটাল শহরে। ছবি: কৌশিক সাঁতরা

করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে রবিবার রাত ৯টায় গোটা দেশকে ৯ মিনিটের জন্য ঘরের আলো নিভিয়ে রেখে ‘মহাশক্তি’কে জাগ্রত করতে বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রীর নিদান মানবেন কী মানবেন না—তা নিয়ে কয়েকদিন ধরেই তৃণমূল ও গেরুয়া শিবিরের মধ্যে রাজনৈতিক চাপানউতোর চ‌লছিল। রবিবার রাতে অবশ্য পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের অধিকাংশ ঘরেই মোমবাতি জ্বলল। অনেকে জ্বাললেন টর্চ, মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইট। খড়্গপুরে আতসবাজি, ফানুস, তুবড়ি পটকা ফাটানোর ধুম নজর কেড়েছে। অনেককেই রাম ধ্বনি দিয়ে রাস্তায় কার্যত মিছিল করেছেন। পুরাতন ঝাড়গ্রামে পথবাতিও নিভিয়ে দেওয়া হয়।

Advertisement

রবিবার সকালে থেকেই পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলায় মোমবাতি ও প্রদীপ কেনার ভিড় ছিল। অনেকে খোলাবাজারে না পেয়ে মাটির প্রদীপ কিনতে কুমোরপাড়ায় যান। কুমোরপাড়ার বাসিন্দা, পেশায় মৃৎশিল্পী বিজয় দাস মানছেন, ‘‘অনেকে প্রদীপের খোঁজে এসেছেন। বেশ কিছু প্রদীপ বিক্রিও হয়েছে।’’ প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের সমর্থনে দুই জেলায় প্রচার চালায় বিজেপিও। দুই জেলার বিভিন্ন জায়গায় বিজেপি-র ও তার শাখা সংগঠনের কর্মীরা মোমবাতি বিলি করেন। এ দিন খড়্গপুরের গোলবাজারের হান্ডি মার্কেটে এবং ঝাড়গ্রামের জুবিলি বাজারে প্রদীপের খোঁজ করেছেন অনেকেই। বিজেপির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি শমিত দাস এবং ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুখময় শতপথীর দাবি, এখন রাজনীতি করার সময় নয়। যাঁরা এই সময়ে রাজনীতি করছেন, তাঁদের অনুসরণ করার দরকার নেই। রবিবার রাতে দুই জেলার মানুষ অকাল দীপাবলি পালন করেছেন বলেও দাবি করেছে বিজেপি। এমন পরিস্থিতিতে দুই জেলায় আগুন থেকে সম্ভাব্য বিপর্যয় মোকাবিলায় বিশেষ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল দমকলও।

খড়্গপুরের নিমপুরায় বিজেপি-র উদ্যোগে গরিব মানুষদের চাল বিলি হচ্ছে। সেখানে যাঁরা এসেছেন তাঁদের দু’টি করে মোমবাতি দিয়ে রাত ৯টায় জ্বালাতে বলা হয়। ঘাটাল,দাসপুরেও কয়েক জায়গায় বিজেপি কর্মীরা মোমবাতি বিলি করেছেন। চন্দ্রকোনা রোডে একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে পথচলতি ২ হাজার মানুষকে মোমবাতি বিলি করা হয় বলে গেরুয়া শিবিরের দাবি। গোয়ালতোড়ের কয়েকটি এলাকায় আবার বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে রাত ৯টায় প্রদীপ, মোমবাতি জ্বালানোর কথা বলে যান পাড়ার যুবকেরা। অনেক জায়গাতেই মোমবাতি জ্বালানো নিয়ে কুসংস্কারও প্রকাশ্যে এসেছে। এ দিন মোমবাতি কিনে বাড়ি ফেরার সময়ে বেলদার কুঙর সিংহ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তাই বাতি জ্বালাব। শুনেছি এতে করোনাভাইরাস মরে যাবে।’’

Advertisement

তবে প্রধানমন্ত্রীর আলো নিভিয়ে রাখার নিদান কতটা করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য, সেই বিতর্ক অবশ্য উস্কে দিয়েছে তৃণমূল। কারণ, আজ, ৬ এপ্রিল বিজেপি-র প্রতিষ্ঠা দিবস। ১৯৮০ সালের এই দিনে বিজেপি-র আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল। তৃণমূলের অভিযোগ, দলের প্রতিষ্ঠা দিবসের আগের রাতে এমন কর্মসূচির ডাক দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আখেরে রাজনৈতিক তাস খেলতে চেয়েছেন। তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম জেলার সভানেত্রী বিরবাহা সরেনের দাবি, ‘‘ঘুরিয়ে নিজেদের দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করলেন প্রধানমন্ত্রী। এটা সঙ্কীর্ণ রাজনীতির পরিচয়।’’ তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি অজিত মাইতির দাবি, ‘‘করোনা মোকাবিলায় আমাদের নেত্রী প্রথম দিন থেকেই রাস্তায় রয়েছেন। নেত্রীকে অনুসরণ করে আমরাও রাস্তায় রয়েছি। আলো নেভানোর আহ্বানটা চমক ছাড়া কিছু নয়।’’

রাজনৈতিক তরজা চলেছে। অনেকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, রবীন্দ্রনাথ তো সেই কবে লিখেছিলেন, ‘অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো।’

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন