চাপের মুখে স্কুলের জমি অন্য সংস্থার নামে লিখিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করলেন দাসপুরের চাঁইপাট হাইস্কুলের পরিচালন কমিটির সভাপতি অনুপ আলু। স্কুল পরিচালন সমিতির বৈঠকে সকলের সামনে নিজের দোষের কথা কবুল করেন তিনি। অপরাধের কথা স্বীকার করে লিখিত ভাবে মুচলেকাও দেন তিনি।
এলাকায় তৃণমূল নেতা হিসেবে পরিচিত অনুপ স্কুলের প্রাক্তন সম্পাদকও বটে। ওই পদের সই ও স্ট্যাম্প জাল করেই আনুমানিক পঞ্চাশ লক্ষ টাকার স্কুলের জমি তিনি হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ। যদিও স্কুলের তহবিলে সেই বাবদ এক টাকাও জমা পড়েনি বলে খবর।
পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে পরে অনুপ ওই জমি ফের স্কুলকে হস্তান্তর করে দেন। যদিও স্কুল কর্তৃপক্ষের মদত ছাড়া এই ঘটনা কী ভাবে ঘটল তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। তাছাড়া সম্পাদকের সই, স্ট্যাম্প জাল-সহ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় প্রথমে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগও দায়ের হয়নি, তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন।
চাঁইপাট হাস্কুলের নিজস্ব সাড়ে চার একর জমি রয়েছে। সম্প্রতি স্কুলের উদ্যোগে একটি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালুর সিদ্ধান্ত হয়। ইতিমধ্যে ওই শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলার জন্য ‘চাঁইপাট হাইস্কুল ট্রাস্ট’ একটি বেসরকারি সংস্থা অনুমোদন পায়। ওই ট্রাস্টের নামেই চাঁইপাট ভগবতী দেবী শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলার জন্য যাবতীয় প্রস্ততি চলছে। অনুপই ওই সংস্থার সম্পাদক। অভিযোগ, ওই সংস্থাকে সামনে রেখে আসলে অনুপই স্কুলের জমি হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। বিষয়টি স্কুলের পক্ষ থেকে লিখিত ভাবে মহকুমাশাসক, বিডিও ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা স্কুল পরিদর্শককে জানানো হয়।
জেলা স্কুল পরিদর্শকের নির্দেশে জরুরি বৈঠক ডাকেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। ওই বৈঠকেই পরিচালন সমিতির সব সদস্যদের সামনে অনুপ নিজের দোষ কবুল করেন। এরপরেই অনুপকে গ্রেফতার করার দাবিতে স্কুলের দেওয়ালে পোস্টার পড়ে। যদিও অনুপের সাফাই, “আমি অন্যায় করেছি, এ কথা সত্যি। তবে স্কুলের স্বার্থেই ওই কাজ করেছিলাম।”
স্কুল সূত্রে খবর, অনুপের দেওয়া মুচলেকা মঙ্গলবারই জেলা স্কুল পরিদর্শক, মহকুমাশাসক-সহ সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের কাছে জমা দেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুলের প্রধান শিক্ষক অরুণ পাল বলেন, “ঘটনায় থানায় এখনও কোনও অভিযোগ করিনি। স্কুল পরিদর্শক, মহকুমাশাসক-সহ প্রশাসনিক আধিকারিকরা যেমন নির্দেশ দেবেন, সেই ভাবেই চলব।” এ নিয়ে জেলা স্কুল পরিদর্শক অমরকুমার শীল বলেন, “ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। অন্যায় করলে কেউ ছাড়া পাবেন না।” একইকথা জানান ঘাটালের মহকুমাশাসক
পিনাকিরঞ্জন প্রধানও।
সিপিএমের দাসপুর-২ জোনাল কমিটির সদস্য স্বপন সাঁতরাও বলেন, “জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক, মহকুমাশাসকের প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে এ নিয়ে কোনও পদক্ষেপ না করা হলে আমরাই পুলিশে অভিযোগ জানাব।”
স্কুল পরিচালন কমিটির সকলকে অন্ধকারে রেখে অনুপ ওই জমি হাতানোর চেষ্টা করছিলেন কী ভাবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন স্কুলের শিক্ষকদেরই একাংশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষকের কথায়, “কোনও অসৎ উদ্দেশ্য না থাকলে অনুপ আলু কেন চুপিসারে সরকারি জমি ট্রাস্টের নামে লিখিয়ে নিলেন তা নিয়ে তো প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে। কড়া ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তা না হলে এই ঘটনা চলতেই থাকবে।”
ঘটনার কথা জানাজানি হতেই অস্বস্তিতে শাসকদলের স্থানীয় নেতৃত্বও। এ নিয়ে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি তপন দত্ত বলেন, “আমি আর কী বলব। সরকারি ভাবে তো তদন্ত শুরু হয়েছে। এই ব্যাপারে দলের কেউ নাক গলাবে না।”