খাবার বাড়ন্ত, অনাহারে খামারের গরুর দল

সামনে ভোট। নির্ঘণ্ট ঘোষণার আগে একের পর এক প্রকল্প উদ্বোধন-শিলান্যাসের হিড়িক পড়ে গিয়েছে। শালবনির বিভিন্ন এলাকাতেও ছুটছেন নেতারা। মানুষজন কেমন আছেন, তার খোঁজ নিচ্ছেন। অবশ্য গরুর খোঁজ নেওয়ার লোক নেই!

Advertisement

বরুণ দে

শালবনি শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৯ ০২:৪৯
Share:

শালবনির খামারে চরছে গরু। নিজস্ব চিত্র

খড় নেই, ঘাস নেই। সব খাবারই বাড়ন্ত। তাই অনাহারে দিন কাটাচ্ছে একদল গরু।

Advertisement

সামনে ভোট। নির্ঘণ্ট ঘোষণার আগে একের পর এক প্রকল্প উদ্বোধন-শিলান্যাসের হিড়িক পড়ে গিয়েছে। শালবনির বিভিন্ন এলাকাতেও ছুটছেন নেতারা। মানুষজন কেমন আছেন, তার খোঁজ নিচ্ছেন। অবশ্য গরুর খোঁজ নেওয়ার লোক নেই!

গরুর খাবারের যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে, তা মানছেন খামারের কর্তৃপক্ষও। দিন সাতেক ধরে সমস্যা চলছে, অথচও এখনও সমাধান হল না? শালবনি ফডার ফার্মের জয়েন্ট ডিরেক্টর নিখিল শীট বলেন, ‘‘বিষয়টা গোসম্পদ বিভাগ দেখে।’’ শালবনি গোসম্পদ বিকাশ ফার্মের স্টেশন ডিরেক্টর নিরুপম মৌলিকের বক্তব্য, ‘‘খড়ের একটু সমস্যা হয়েছিল। দু’-তিন দিন। আজই খড় চলে আসবে! সমস্যা হবে না।’’

Advertisement

শালবনির এই খামারে প্রায় তিনশো গরু রয়েছে। কর্মীরা জানাচ্ছেন, গরুদের দু’বেলা খড়, একবার ঘাস দিতে হয়। খড় কেনা হয় সরকারিভাবে। খাস খামারের জমিতেই চাষ হয়। সাতদিন হল খামারের গুদামে খড় বাড়ন্ত। ঘাসের জোগানও অপ্রতুল। খামারের এক কর্মীর কথায়, ‘‘গরুগুলোকে খড় দেওয়া যাচ্ছে না। ঘাসও খুব কম কম দিতে হচ্ছে।’’ আরেক কর্মীর কথায়, ‘‘খড় নেই, ঘাসও কম, গাছপালার পাতা খাইয়ে কোনও রকমে সামাল দিতে হচ্ছে।’’ ঘাসের অভাবে গরুর দুধের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এক কর্মীর কথায়, ‘‘আগে যে পরিমাণ দুধ দিত, এখন তার অর্ধেক দিচ্ছে। অনেক গোরু রোগাও হয়ে গিয়েছে।’’ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, শুধু খর্বকায় হওয়া নয়, বন্ধ্যাত্ব-সহ নানা অসুখ-বিসুখও দেখা দিতে পারে অনাহারে থাকা গরুর।

পরিস্থিতি দেখে নিজেদের অন্য দাবির আকুতি ছাপিয়ে পোষ্য প্রাণীগুলোকে রক্ষার আর্জি জানাচ্ছেন কর্মীরা। শালবনির ফডার ফার্মের এক কর্মী সংগঠনের নেতা সলিল সাহা বলেন, ‘‘গরুর প্রয়োজনীয় খাবার মিলছে না। ফলে, দুধের উৎপাদন কমে গিয়েছে। গরু অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। গোখাদ্য হিসেবে খড়, ঘাস অত্যন্ত জরুরি। আমরা কর্তৃপক্ষকে বলেছি, অবিলম্বে খড় আনানোর ব্যবস্থা করুন।’’ গোখাদ্য হিসেবে খড়, ঘাসের কোনও বিকল্প নেই বলেই জানাচ্ছেন পশু বিশেষজ্ঞরা। খামারের এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘খড় শেষ হয়ে গিয়েছে। বিষয়টি জানার পরেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয়েছে।’’ এই খামারে পশুখাদ্য উৎপাদনও হয়। পশুখাদ্যের এই খামারে শুধু দুই মেদিনীপুর নয়, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া সহ অন্য জেলাও নির্ভরশীল। এক কর্মী বলছিলেন, ‘‘যেখানে পশুখাদ্য উৎপাদন হয়, সেখানেই পশু অভুক্ত রয়েছে, ভাবা যায়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন