গ্রামে রথীন, চুপ নেতাই

নেতাইয়ে নিহতের পরিজনেরা অবশ্য গোটা ঘটনায় চুপ।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

লালগড় শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৯ ০৩:১৭
Share:

শুক্রবার রথীন দণ্ডপাটের বাড়ির সামনে পুলিশের পাহারা। ছেলের সঙ্গে কথা বলছেন রথীন (ইনসেটে)। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

দীর্ঘ আট বছর পরে গ্রামে ফিরলেন গণহত্যায় অভিযুক্ত সিপিএম কর্মী। আদালতের নির্দেশে বাড়ি ফিরে পেলেন তাঁর স্ত্রী-পুত্র। কিন্তু নিহতদের পরিজনেরা মুখ খুলতে চাইলেন না। শুধু বললেন, ‘‘যা বলার তৃণমূল নেতারাই বলবেন।’’

Advertisement

ঘটনাস্থল লালগড়ের নেতাই। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি গ্রামের দলীয় কর্মী রথীন দণ্ডপাটের বাড়ির সিপিএম শিবির থেকে নিরীহ গ্রামবাসীর উদ্দেশে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে। চার মহিলা-সহ ৯ জন মারা যান। আহত হন ২৮ জন।

সেই রথীনই মাত্র দেড় ঘন্টার জন্য পুলিশি পাহারায় শুক্রবার গ্রামে এসেছিলেন। বিচারাধীন বন্দি রথীনই বাড়ি ফিরে পেতে মেদিনীপুর বিশেষ দায়রা আদালতে আবেদন করেছিলেন। তা মঞ্জুর হয়। এ দিন ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও সিবিআই আধিকারিকদের উপস্থিতিতে মরচে ধরা তালা ভেঙে বাড়িটি ব্যবহারের জন্য রথীনের স্ত্রী ঝুমার হাতে তুলে দেওয়া হয়।

Advertisement

নেতাইয়ে নিহতের পরিজনেরা অবশ্য গোটা ঘটনায় চুপ। যাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে নেতাই মামলা রুজু হয়েছিল, সেই নিহত অরূপ পাত্রের বাবা রঞ্জিত পাত্র বলছেন, ‘‘যা বলার নেতৃত্ব (তৃণমূল) বলবেন। ওঁরাই সব দেখছেন।’’ একই বক্তব্য নিহত সৌরভ ঘড়াইয়ের দাদা শান্তিরঞ্জন ও নিহত শ্যামানন্দ ঘড়াইয়ের স্ত্রী অঞ্জুরানির। যা জেনে সিপিএমের ঝাড়গ্রাম জেলা সম্পাদক পুলিনবিহারী বাস্কে বলছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গণতন্ত্র ফেরানোর ডাক দিয়ে শহিদ সমাবেশ করছেন। অথচ তাঁর আমলেই জঙ্গলমহলের মানুষ নিজের কথাটুকু বলতে পারছেন না। এই তো পরিবর্তন!’’ অভিযোগ মানতে নারাজ তৃণমূলের লালগড় ব্লক সভাপতি শ্যামল মাহাতো।

নেতাই মামলায় লালগড়ের সিপিএম নেতা অনুজ পাণ্ডে-সহ সিপিএমের ২০ জন নেতা-কর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। রথীন রয়েছেন মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে। নেতাইয়ে রথীনদের দো’তলা বাড়ির একতলার একটি ঘরে রথীনের কাকিমা আলো দণ্ডপাট থাকেন। ওই ঘরটুকু বাদে গোটা বাড়িই এতদিন ‘সিল’ করে রেখেছিল সিবিআই। রথীনের স্ত্রী ঝুমা ছেলে-মেয়েকে নিয়ে লালগড়ে বাড়ি ভাড়া করে থাকেন। ছেলে সৌম্যদীপ পলিটেকনিক পাশ করে একটি সংস্থায় চাকরি করছেন। আর মেয়ে স্নেহা নবম শ্রেণির ছাত্রী। ঝুমা বলেন, ‘‘এই ৮ বছর কীভাবে কাটিয়েছি আমিই জানি। কিন্তু জীবন থেমে থাকে না।’’

এ দিন স্ত্রী-ছেলের সামনেই সইসাবুদ করে রথীন বাড়ি বুঝে নেন। এই ক’বছরে বাড়ির চেহারা বদলেছে। জানলা ভাঙা, দেওয়ালে গজিয়েছে বট-অশ্বত্থ। বাড়ির গোলাপি রংও বোঝার জো নেই। বদলেছে নেতাইও। গণহত্যায় অভিযুক্ত রথীনকে ঘিরে কোনও ক্ষোভ-বিক্ষোভ চোখে পড়েনি। বরং অনেকেই এগিয়ে এসে বলেছেন, ‘‘রথীন কেমন আছিস?’’ ‘ভাল আছি’, হেসে জবাব দিয়েছেন রথীন। নেতাই মামলার অন্যতম সাক্ষী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক দ্বারকানাথ পণ্ডার সঙ্গেও কথা হয়েছে রথীনের। পরে দ্বারকানাথ বলেন, ‘‘রথীনের পরিবার থাকলে গ্রামবাসীর অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।’’ একই সুরে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি বলছেন, ‘‘ওরা গ্রামে থাকলে কোনও সমস্যা হবে না।’’

গ্রাম ছাড়ার আগে রথীন বলে গেলেন, ‘‘অনেক দিন বাদে এলাম। খুব ভাল লাগছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন