জটিল অস্ত্রোপচারে বাঁচলেন প্রসূতি  

হাসপাতাল সূত্রের খবর, পাঁশকুড়া পুরসভার-১ নম্বর ওয়ার্ডের কাপুরিয়া  পাড়ার বাসিন্দা বছর তেইশের বাসন্তী কাপুরিয়া প্রায় ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। পেটে যন্ত্রণা নিয়ে গত ২৫ ডিসেম্বর পরিবারের লোকেরা তাঁকে তমলুকে জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:০৯
Share:

নতুন-জীবন: সুস্থ হওয়ার পরে বাসন্তী কাপুরিয়া। নিজস্ব চিত্র

রোগী মৃত্যুর অভিযোগে জেলার বিভিন্ন হাসপাতাল-নার্সিংহোমে ভাঙচুর এবং চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনা হামেশাই সামনে আসে। কিন্তু এবার প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে ভর্তি হওয়া এক প্রসূতির জটিল অস্ত্রোপচার করে সাফল্যের নজির গড়লেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মীরা।

Advertisement

হাসপাতাল সূত্রের খবর, পাঁশকুড়া পুরসভার-১ নম্বর ওয়ার্ডের কাপুরিয়া পাড়ার বাসিন্দা বছর তেইশের বাসন্তী কাপুরিয়া প্রায় ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। পেটে যন্ত্রণা নিয়ে গত ২৫ ডিসেম্বর পরিবারের লোকেরা তাঁকে তমলুকে জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসক যুগলচন্দ্র মাইতি পরীক্ষা করে জানতে পারেন ওই প্রসূতির প্ল্যাসেন্টা ইউটেরাসের (জরায়ুর) দেওয়াল ফুটো করে বেরিয়ে গিয়েছে। এর ফলে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে। প্রসূতির অবস্থাও সঙ্কটজনক।

এই অবস্থায় দ্রুত অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নিয়ে যুগলবাবু, চিকিৎসক পারমিতা চক্রবর্তী এবং অ্যানাথেসিস্ট শেখ আহাদুল ইসলামকে নিয়ে হাসপাতালের তরফে একটি দল গঠন করা হয়। ওই দিন সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ বাসন্তীর অস্ত্রোপচার হয়। তিনি এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। হাসপাতাল সূত্রের খবর, অস্ত্রোপচারের পরেই ওই প্রসূতি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। তাঁকে হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। সদ্যোজাতকে এসএনসিইউ বিভাগে স্থানান্তর করা হয়। হাসপাতালে সাতদিন চিকিৎসাধীন থাকার পরে বাসন্তীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়। তাঁকে ক্রিটিক্যাল বিভাগ থেকে বুধবার সাধারণ বিভাগে আনা হয়।

Advertisement

চিকিৎসক যুগলচন্দ্র মাইতি বলেন, ‘‘ওই প্রসূতি ৩৩ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। প্রসবের আরও কয়েক সপ্তাহ বাকি ছিল। কিন্তু প্রসূতির জরায়ুর দেওয়াল ফুটো করে প্লাসেন্টা (অমরা) বেরিয়ে যাওয়ায় প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। রোগীর প্রাণ সংশয় ছিল। তাই দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়েই ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচার করেই সন্তানের জন্ম হয়েছে। প্রসূতির জরায়ু কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে। অস্ত্রোপচারে কিছুক্ষণ দেরি হলেই বিপদের আশঙ্কা ছিল।’’

যুগলবাবু আরও বলেন, ‘‘অপারেশনের পরেই প্রসূতি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে প্রসূতির চিকিৎসার দায়িত্বে ছিলেন জন্মেঞ্জয় ঘোষ, অমিত দে। সকলের চেষ্টায় সাফল্য এসেছে।’’

বাসন্তীর স্বামী বীরু কাপুরিয়া বলেন, ‘‘আমরা গরিব। স্ত্রীকে জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেছিলাম। ওকে সুস্থ করে তোলায় চিকিৎসকদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’’

হাসপাতালের সুপার গোপাল দাস বলেন, ‘‘চিকিৎসক এবং কর্মীদের চেষ্টায় ওই প্রসূতিকে সুস্থ করে তোলা গিয়েছে। এটা খুবই আনন্দের।’’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মীরা দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন