পুড়ে গেলে ভরসা সেই কলকাতাই

দোরগোড়ায় কালীপুজো-দীপাবলি। আলোর এই উৎসবে অগ্নিকাণ্ডও ঘটে। পুড়ে গিয়ে বাধে বিপত্তি। মেদিনীপুরের তিন জেলাতেই এখন একাধিক সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। কিন্তু সেখানে বার্ন ইউনিট আছে কি? জেলা হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ  হাসপাতালেই বা অগ্নিদগ্ধের চিকিৎসার কী পরিষেবা রয়েছে? বিস্তারিত খোঁজ নিল আনন্দবাজার।মাস খানেক আগে মেদিনীপুর মেডিক্যালে নিয়ে আসা হয়েছিল অগ্নিদগ্ধ এক মহিলাকে। তবে সেখানেও তাঁর চিকিৎসা সম্ভব হয়নি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৪৪
Share:

মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট। নিজস্ব চিত্র

দিনটা ছিল গত বছর ১৮ নভেম্বর। মিড-ডে মিলের ডিম সেদ্ধর গরম জল ছিটকে গিয়ে পড়েছিল ছ’বছরের অস্মিত শঙ্করের গায়ে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ভর্তি করা হয়েছিল খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে। কিন্তু মহিলা সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে একদিন ভর্তি থাকার পরে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। অবস্থা বেগতিক বুঝে চিকিৎসকেরা দগ্ধ ওই বালককে রেফার করে দেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

Advertisement

মাস খানেক আগে মেদিনীপুর মেডিক্যালে নিয়ে আসা হয়েছিল অগ্নিদগ্ধ এক মহিলাকে। তবে সেখানেও তাঁর চিকিৎসা সম্ভব হয়নি। ‘রেফার’ করতে হয়েছিল কলকাতার এক হাসপাতালে।

পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলায় একাধিক সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল গড়ে উঠলেও সর্বত্র বার্ন ইউনিট নেই। পশ্চিম মেদিনীপুরে শুধু মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ এবং ঘাটাল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে বার্ন ইউনিট রয়েছে। আর ঝাড়গ্রাম জেলার কোনও সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে বার্ন ইউনিট নেই। এই অবস্থায় অগ্নিদগ্ধের চাপ সব থেকে বেশি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু এখানকার বার্ন ইউনিটে পরিকাঠামো পর্যাপ্ত নয়, লোকবলও কম। খাতায়-কলমে ১২টি শয্যা থাকলেও ১০টি চালু থাকে। বার্ন ইউনিটে প্লাস্টিক সার্জনও নেই। ফলে, অস্ত্রোপচার করে স্কিন গ্রাফটিং হয় না। ফলে, অনেক রোগীতেই রেফার করতে হয়। তবে হাসপাতাল সুপার তন্ময়কান্তি পাঁজা বলেন, “সব ক্ষেত্রে রেফার করা হয় না। প্রয়োজন থাকলে তবেই রেফার করা হয়।” হাসপাতালের অন্য এক আধিকারিক মানছেন, “৬০-৭০ শতাংশ পুড়ে গেলে রোগীকে এখানে রাখা হয় না। সে ক্ষেত্রে ঝুঁকি থেকে যায়।”

Advertisement

খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে বার্ন ইউনিট না থাকায় সেখানেও সমস্যা হয়। সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের হাসপাতালে বার্ন ইউনিট খুব জরুরি। কালীপুজোর সময় বহু অগ্নিদগ্ধ রোগী আসার আশঙ্কা থাকেই। আমরা তাই সার্জিক্যাল বিভাগের সঙ্গে ট্রমা ইউনিটেও রোগীদের রাখার ব্যবস্থা করেছি।”

ঘাটাল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে বার্ন ইউনিট চালু হলেও সেখানে শয্যা মাত্র চারটি। নতুন এই বিভাগে দু’জন প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত নার্স ও দু’জন কর্মী রয়েছেন। তবে বেশি সংখ্য দগ্ধ রোগী এসে পড়লে সেই রেফার-ই একমাত্র পথ। ঘাটাল হাসপাতালের সুপার কুণাল মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “এখন ঘাটালে যে কোনও ধরণের পোড়া রোগীর চিকিৎসার পরিবেশ রয়েছে। খুব গুরুতর না হলে রেফার করার কোনও প্রশ্নই নেই।” পশ্চিম মেদিনীপুরে শালবনি, ডেবরায় সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল তৈরি হয়েছে। এই হাসপাতালে বার্ন ইউনিট থাকার কথা। কিন্তু নেই। কেন? জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরার জবাব, “ধীরে ধীরে পরিকাঠামো তৈরির চেষ্টা চলছে।”

অগ্নিদগ্ধের চিকিৎসায় নতুন জেলা ঝাড়গ্রামের অবস্থা আরও খারাপ। এখানকার তিনটি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের একটিতেও বার্ন ইউনিট নেই। একমাত্র ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ৫০ শতাংশের কম পোড়া রোগীদের জেনারেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে রেখে চিকিত্সা করা হয়। পোড়া ক্ষতের পরিমাণ তার থেকে বেশি হলে কলকাতায় রেফার করা হয়। জানা গিয়েছে, আলাদা বিভাগ না থাকায় অগ্নিদগ্ধের চিকিৎসা করতে হয় খুব সাবধানে। কারণ, এ ক্ষেত্রে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। তাই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ও জীবাণু নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে রোগীকে রাখা জরুরি, প্রয়োজন প্লাস্টিক সার্জেনেরও।

কিন্তু ঝাড়গ্রাম জেলার তিনটি সুপার স্পেশ্যালিটির একটিতেও সে সব বন্দোবস্ত নেই। ঝাড়গ্রাম জেলার কোনও নার্সিংহোমেও বার্ন ইউনিট নেই। ফলে, বেশি আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসায় ১৭০ কিলোমিটার উজিয়ে কলকাতা যাওয়া ছাড়া গতি নেই। আর অতটা পথ যেতেই রোগীর অবস্থা আরও সঙ্কটজনক হয়ে ওঠে।

এই অবস্থায় পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামবাসীর প্রশ্ন, সরকার যেখানে রেফার ঠেকাতে নানা পদক্ষেপের কথা বলছে, সেখানে কেন জেলার হাসাপতালে বার্ন ইউনিট থাকবে না। সেই সঙ্গে ঘনাচ্ছে ভয়, পুড়ে গেলে যাবটা কোথায়!

তথ্য: কিংশুক গুপ্ত, অভিজিৎ চক্রবর্তী, বরুণ দে ও দেবমাল্য বাগচী

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন