Cyclone Amphan

‘সবুজ বাহিনী’ মৃত, উপকূল বাঁচাবে কে!

বন বিভাগ সূত্রের খবর, আগামী বর্ষায় ৩২ হেক্টর ফাঁকা জমিতে গাছ লাগানোর কথা ছিল। তার আগেই ঘূর্ণিঝড়ে ৩০০ হেক্টরের গাছ উপড়েছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০২০ ০৩:১৮
Share:

আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস। পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূল জুড়ে পড়ে থাকা হাজার হাজার ঝাউ গাছের ‘মৃতদেহ’। প্রশ্নে ভারসাম্য। নিজস্ব চিত্র

বিধ্বংসী ঝড়ে ধরাশায়ী প্রকৃতির ‘সবুজ সেনানী’। উপকূল জুড়ে তাদের লাশ। সেই ধ্বংসস্তূপেই ঘুরছে প্রশ্ন— আগামী বিপদে বাঁচাবে কে!

Advertisement

গত বুধবার আমপানের তাণ্ডবে পূর্ব মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ উপকূলের বনাঞ্চল তছনছ হয়ে গিয়েছে। বালুতটে আছড়ে পড়েছে হাজার হাজার গাছ। তার মধ্যে রয়েছে দিঘা, মন্দারমণি, শঙ্করপুর, জুনপুট, বালুঘাটা, জেলিংহামের কয়েক হাজার ঝাউ, ইউক্যালিপটাস, সুন্দরী, আকাশমণি গাছ। বন বিভাগ সূত্রের খবর, আগামী বর্ষায় ৩২ হেক্টর ফাঁকা জমিতে গাছ লাগানোর কথা ছিল। তার আগেই ঘূর্ণিঝড়ে ৩০০ হেক্টরের গাছ উপড়েছে। শুধু কাঁথি মহকুমাতেই ১০ হাজার গাছ ক্ষতিগ্রস্ত বলে জানান রেঞ্জ অফিসার প্রবীরকুমার সেন। হলদিয়ার বালুঘাটায় ১৫ হাজার ঝাউগাছ পড়েছে। গোটা জেলায় সংখ্যাটা ৫২ হাজার বলে জানান জেলার মুখ্য বন আধিকারিক স্বাগতা দাস। ঝাউ বাদে অন্য প্রজাতি ধরলে পূর্ব মেদিনীপুরে আমপানে ‘মৃত’ লক্ষাধিক গাছ।

এতেই ঘনাচ্ছে আশঙ্কা। কারণ, উপকূল রক্ষায় এই বনরাজিই ঢাল। ভূমিক্ষয় রোধ, দূষণ নিয়ন্ত্রণ তো বটেই, ঝড়, জলোচ্ছ্বাসের মতো দুর্যোগ ঠেকাতেও এরাই ভরসা। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের অধ্যাপক আশিসকুমার পাল জানাচ্ছেন, উপকূল এলাকায় এই বিপুল গাছের ক্ষতি হওয়ায় ভূমিক্ষয় বাড়তে পারে। ফলে পাড় ভেঙে সমুদ্রের নোনা জল চাষজমিতে ঢুকবে। আশিস জানাচ্ছেন, দিঘা মোহনা, যাত্রানালা এলাকায় ৮০-৯০ দশকে প্রচুর ম্যানগ্রোভ ছিল। এখন বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। যেটুকু রয়েছে, ঝড়ে তাতে ধাক্কা লেগেছে। তাঁর পরামর্শ, দ্রুত ওই এলাকায় আবার ম্যানগ্রোভ লাগাতে হবে। বিশেষ করে শঙ্করপুর মৎস্যবন্দরের কাছে। বালিয়াড়িগুলিতে কাজু বাদাম ও কেয়া গাছ লাগানোর পরামর্শ দিচ্ছেন আশিস। তাঁর কথায়, ‘‘এখন সমুদ্রের জলের উষ্ণতা বেশি। মানে আরও ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এখনই সাবধান হওয়া দরকার।’’

Advertisement

নন্দীগ্রাম ১ ব্লকের সোনাচূড়া পঞ্চায়েতের অন্তর্গত গাংড়াচর ও সাউথখালি চরকে হুগলি নদীর ভাঙন থেকে বাঁচাতে নদীর চর বরাবর ম্যানগ্রোভ প্রজাতির যে গাছ লাগানো হয়েছিল, তা-ও ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। প্রায় পঞ্চাশ হাজার গাছ ভেঙেছে দুই চরে। খেজুরির সমুদ্র লাগোয়া কাদিরাবাদ চর, ধোবাঘাটা বামুনচর, নিজকসবা ও মেহেদিনগরে ভেঙেছে অসংখ্য ঝাউগাছ। এতে মাটি দুর্বল হবে, নষ্ট হবে জীববৈচিত্র। নদী ও সমুদ্র লাগোয়া জঙ্গলের ভোঁদড়, শেয়াল ও রকমারি পাখিরা এখনই বাস্তুচ্যুত। এই সব অংশে আগামী বর্যায় পাড় ধসার আশঙ্কা রয়েছে।

আশঙ্কার কথা শোনাচ্ছেন বন দফতরের রেঞ্জ অফিসার প্রবীর এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র বিজ্ঞানের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আনন্দদেব মুখোপাধ্যায়ও। প্রবীর বলেন, ‘‘আমপানের পরে যা পরিস্থিতি, তাতে আগামী দিনে শুধু ঘূর্ণিঝড় নয়, বালির ঝড়ও আটকানো মুশকিল হবে।’’ বিপদ থেকে বাঁচতে আনন্দদেবের পরামর্শ, ‘‘উপকূলে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে দ্রুত গাছ লাগাতে হবে। ঢেউয়ের শক্তি আর বোল্ডারের সহ্য করার ক্ষমতা যাচাই করে বাঁধও তৈরি করতে হবে।’’

আজ, শুক্রবার বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এদিন গাছ লাগানো হবে জানিয়েছেন জেলার মুখ্য বনাধিকারিক স্বাগতা। তিনি বলেন, ‘‘আমপান পরবর্তী সময়ে জেলাজুড়ে যে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল, জেলা প্রশাসন ও বন দফতরের যৌথ উদ্যোগে তা ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রতিদিনই গাছ লাগানো হচ্ছে। আগামিকালও লাগানো হবে। তবে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে বিশেষ কোনও কর্মসূচি নেই। বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি জারি থাকবে।’’ (তথ্য: আরিফ ইকবাল খান, দিগন্ত মান্না ও কেশব মান্না)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন