ডাকঘর বাঁচাতে ধর্না সদর শহরে

খড়্গপুর রেলস্টেশনের অদূরেই রয়েছে বোগদা ডাকঘর। বহু পুরনো এই ডাকঘরটি সম্প্রতি স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:২৫
Share:

পথে-প্রতিবাদে: অবস্থানে বসেছেন বোগদা ডাকঘর বাঁচাও যুক্তমঞ্চের সদস্যরা। সোমবার মেদিনীপুরে। নিজস্ব চিত্র

ডাকঘর বাঁচাতে এ বার ধর্না হল জেলার সদর শহর মেদিনীপুরে। ডাক বিভাগের সিনিয়র সুপারের দফতরের সামনে সোমবার দীর্ঘক্ষণ এই ধর্না-অবস্থান চলে। পরে ডাক-কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে অবস্থান কর্মসূচি ওঠে। তবে আশ্বাস মতো কাজ না হলে ফের বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে খড়্গপুর বোগদা ডাকঘর বাঁচাও যুক্তমঞ্চ। মঞ্চের পক্ষে বীরেন্দ্রনাথ মাইতি বলেন, “আগে খড়্গপুরে প্রতিবাদ হয়েছে। এ বার জেলার সদর শহরে এই কর্মসূচি হল। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে যুক্তমঞ্চ বোগদা ডাকঘরকে বাঁচাতে যে কোনও ধরনের আন্দোলন গড়তে পিছপা হবে না। ডাক-কর্তৃপক্ষকেও এ কথা জানিয়ে দিয়েছি।’’

Advertisement

খড়্গপুর রেলস্টেশনের অদূরেই রয়েছে বোগদা ডাকঘর। বহু পুরনো এই ডাকঘরটি সম্প্রতি স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ডাক বিভাগ ঠিক করেছে, এই ডাকঘরটিকে খড়্গপুর আইআইটি চত্বরে নিয়ে যাওয়া হবে। খড়্গপুর আইআইটি চত্বরেও ডাকঘর রয়েছে। এই সিদ্ধান্তের কথা জানতে পেরে সরব হয়েছেন গ্রাহকেরা। গ্রাহকদের বক্তব্য, এর ফলে চরম সমস্যা হবে। বোগদা ডাকঘর বাঁচাতে ইতিমধ্যে যুক্তমঞ্চ গড়ে তোলা হয়েছে। যুক্তমঞ্চের উদ্যোগে আন্দোলন কর্মসূচিও শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে রাজ্যসভার সাংসদ তপন সেন, লোকসভার সাংসদ সন্ধ্যা রায়ের দ্বারস্থ হয়েছে এই যুক্তমঞ্চ। সমস্যার সমাধানে পাশে থাকার আর্জি জানিয়েছে। তপনবাবু, সন্ধ্যাদেবী ডাক বিভাগে চিঠিও পাঠিয়েছেন। ডাক বিভাগকে গ্রাহকদের সমস্যার বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার আর্জি জানিয়েছেন। তপনবাবুরাও চাইছেন, ডাকঘরটি পুরনো জায়গাতেই থাকুক।

যুক্তমঞ্চের বক্তব্য, বোগদা ডাকঘর শতাব্দী প্রাচীন। খড়্গপুর রেলস্টেশনের জন্মলগ্ন থেকে ডাকঘরটি কাজ করে আসছে। মঞ্চের পক্ষে নিখিলরঞ্জন পাত্র বলেন, “ডাক বিভাগ এটিকে বোগদা থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে খড়্গপুর শহরের একপ্রান্তে স্থানান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা এই উদ্যোগকে ধিক্কার জানাচ্ছি। এবং সর্বশক্তি দিয়ে এর মোকাবিলা করার অঙ্গীকার করছি।’’

Advertisement

যুক্তমঞ্চের বক্তব্য, খড়্গপুরের এই ডাকঘর থেকে অনেকে পেনশন তোলেন। অনেক আমানতকারীও রয়েছে। এখান থেকে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের পরিষেবাও গ্রহণ করেন অনেকে। বয়স্ক মানুষদের পক্ষে আরও সাত কিলোমিটার দূরে যাওয়া অসম্ভব। বীরেন্দ্রনাথবাবুর কথায়, “ডাকঘরটি বোগদা থেকে স্থানান্তরিত হলে সমস্ত পরিষেবা গ্রহনকারীরা চরম সমস্যায় পড়বেন। এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে জনস্বার্থবিরোধী।” ধর্ণা- অবস্থানের পাশাপাশি এদিন যুক্তমঞ্চের এক প্রতিনিধি দল ডাক বিভাগের সিনিয়র সুপারের দফতরে গিয়ে ডেপুটেশনও দিয়েছে। মঞ্চের বক্তব্য, ডাক- কর্তৃপক্ষ তাদের আশ্বস্ত করেছে যে বোগদা ডাকঘরটি স্থায়ী ভাবে স্থানান্তর হচ্ছে না। এই স্থানান্তর অস্থায়ী। ডাকঘরটি দীর্ঘদিন সংস্কার হয়নি। তাই সংস্কার করা জরুরি। স্থানান্তর হলে এই সংস্কারের কাজ শুরু হবে। যুক্তমঞ্চ অবশ্য এই যুক্তি মানতে নারাজ। বীরেন্দ্রনাথবাবু বলেন, “ডাক বিভাগের তেমন ভাবনা থাকলে ডাক বিভাগ এবং রেল দফতর পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে মেরামত বা সংস্কারের বিষয় নিয়ে সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট হতে পারত। স্থানান্তর কখনও সমস্যার সমাধান হতে পারে না। বরং পরিষেবা গ্রহনকারীদের চরম সমস্যায় ফেলে দেওয়ারই চেষ্টা। যা কোনও অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়।” ডাক-কর্তৃপক্ষের ওই আশ্বাসেও আন্দোলনে যে ইতি টানা হচ্ছে না, তা স্পষ্ট করেছে যুক্তমঞ্চ। জানিয়েছে, এ বার গণস্বাক্ষর সংগ্রহ হবে। গণস্বাক্ষর সম্বলিত প্রতিবেদন শীঘ্রই পশ্চিমবঙ্গ সার্কেলের মুখ্য ডাক অধিকর্তার কাছে পাঠানো হবে।

বীরেন্দ্রনাথবাবু বলেন, “একবার সরে গেলে রেল ওই ঘর আর নাও ছাড়তে পারে। তাই বোগদা ডাকঘরটিকে তার বর্তমান অবস্থানে বহাল রাখতে যা যা করণীয় আমরা সেই সব ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছি। প্রশাসনের সকলের কাছে অনুরোধ, জনস্বার্থের এই বিষয়টি যেন গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন