ঠুঁটো আবগারি দফতর, ক্ষোভ দাসপুরের গ্রামে

নেশাগ্রস্তের মৃত্যু, ক্ষোভে পুড়ল ঠেক

এই ঘটনা জানাজানি হতেই এলাকাবাসীর ক্ষোভ গিয়ে পড়ে চোলাই ঠেকগুলিতে। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীর অভিযোগ, দিন দিন এলাকায় চোলাই ব্যবসার বহর বাড়ছে।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঘাটাল শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:০৮
Share:

প্রতিবাদ: ঠেকে জ্বলছে আগুন। ছবি: কৌশিক সাঁতরা

এলাকায় চোলাই ঠেকের রমরমা নিয়ে ক্ষোভ ছিলই। ঠেক সংলগ্ন ঝিলে এক ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধারের পরে উত্তপ্ত হয়ে উঠল দাসপুরের জোতঘনশ্যাম গ্রাম। একের পর এক চোলাই ঠেকে ভাঙচুর চালান গ্রামবাসী। তিনটি ঠেকে আগুনও ধরিয়ে দেওয়া হয়। শুক্রবার সকালে পুলিশ গ্রামে পৌঁছলে বিক্ষোভের পারদ চড়ে। দেহ তুলতে বাধা দেওয়া হয়।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, গ্রামের হাজরা পাড়ায় তিনটি চোলাই ঠেক রয়েছে। এ দিন সকালে একটি ঠেকের কাছাকাছি ঝিলের পাড়ে গ্রামেরই বাসিন্দা শচীন্দ্রনাথ সিংহ (৫২)-এর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। স্ত্রীর মৃত্যুর পরে একাই থাকতেন শচীন্দ্রনাথ। চোলাই ঠেকে তাঁর নিয়মিত যাতায়াত ছিল। ঠিক কী ভাবে শচীন্দ্রনাথের মৃত্যু হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। মৃতের ভাই প্রশান্ত সিংহ বলেন, “কী ভাবে মৃত্যু হল তা জানতে পুলিশকে সঠিক তদন্তের আর্জি জানিয়েছি।” পুলিশ দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে। তদন্তকারীদের অনুমান, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ঝিলে পড়ে গিয়ে জলে ডুবে মারা গিয়েছেন ওই ব্যক্তি।

এই ঘটনা জানাজানি হতেই এলাকাবাসীর ক্ষোভ গিয়ে পড়ে চোলাই ঠেকগুলিতে। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীর অভিযোগ, দিন দিন এলাকায় চোলাই ব্যবসার বহর বাড়ছে। সব জেনেও পুলিশ ও আবগারি দফতর ঠুঁটো। এই মৃত্যু ও বিক্ষোভের পরেও এ দিন আবগারি দফতরের কেউ গ্রামে যাননি। আবগারি দফতরের সুপারিনন্টেনডেন্ট একলব্য চক্রবর্তীর অবশ্য দাবি, “চোলাই বন্ধে অভিযান চলছে। জোতঘনশ্যামের বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি। শনিবারই দাসপুরে অভিযান শুরু করব।”

Advertisement

আবগারি দফতরের উদাসীনতায় চোলাই ব্যবসার রমরমার বিরুদ্ধে জেলার নানা প্রান্তেই বিক্ষোভ হয়েছে। বছর দু’য়েক আগে দাসপুরের কাশিয়াড়া গ্রামে মদ্যপ স্বামীর আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে তাঁকে গাছে বেঁধে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছিল এক মহিলার বিরুদ্ধে। তার পর গোটা ঘাটাল মহকুমা জুড়ে জোটবদ্ধ হয়েছিলেন মহিলারা। কাশিয়াড়া, দুধকোমরা, গোপমহল, মনসুকা-সহ বিভিন্ন গ্রামে একের পর এক চোলাই ঠেক ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল প্রমীলা বাহিনী। তারপর কিছুদিন বন্ধ ছিল এই বেআইনি ব্যবসা। কিন্তু পরিস্থিতি কিছুটা থিতোতেই ফের রমরমিয়ে চোলাইয়ের কারবার শুরু হয় বলে অভিযোগ।

দাসপুরের জোতঘনশ্যাম, মাগুরিয়া গ্রামেও ছবিটা একই। সকাল হলেই বাড়ির পুরুষেরা কাজে না গিয়ে চোলাই ঠেকে ভিড় জমান। তার জেরে বাড়িতে অশান্তি, নানাবিধ অসুখ— সমস্যা চলছেই। তার উপর চোলাই ঠেকের আশপাশের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিয়েও এলাকায় ক্ষোভ ছিল। শুক্রবার সকালে শচীন্দ্রনাথের মৃত্যুর খবর চাউর হতে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী বাইরে বেরিয়ে আসেন। হাতে লাঠি নিয়ে জড়ো হন মহিলারাও। তারপর চোলাই ঠেকে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

এ দিন গ্রামে গিয়ে দেখা গেল তখনও ভাঙাচোরা ঠেক থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। আর চম্পট দিয়েছে চোলাই কারবারিরা। বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেই বোঝা গেল, প্রশাসনের বিরুদ্ধে তাঁরা ফুসছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামের মহিলারা বললেন, “পুলিশ ও আবগারি দফতরের ইন্ধনেই চোলাই ব্যবসায়ীদের এত বাড়বাড়ন্ত। মাস ফুরোলেই পৌঁছে যাচ্ছে টাকা। তাই ব্যবসায়ীরা কারও পরোয়া করছে না।’’ শাসক দলের একাংশের এতে মদত রয়েছে বলেও গ্রামবাসীর অভিযোগ। যদিও তৃণমূলের দাসপুর-২ ব্লক সভাপতি আশিস হুতাইত বলেন, “আমরাও চাই প্রশাসন এই সব দোকান বন্ধ করে দিক। এ ক্ষেত্রে আমরা দলীয় ভাবে সাহায্য করব।”

জোতঘনশ্যামের বাসিন্দাদেরও একটাই দাবি, এলাকায় যেন আর চোলাই ব্যবসা না হয়, নেশার ঘোরে যেন আর কারও প্রাণ না যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন