‘সঞ্জীবনী’ গুজব! গাছ পাহারায় রাজমিস্ত্রি

পাঁশকুড়ার গোবিন্দনগর এলাকার রানিয়াড়ার বাসিন্দা সেরাজুদ্দিন মল্লিক পেশায় রাজমিস্ত্রি। ২০ বছর আগে ওড়িশায় কাজে গিয়ে একটি গাছের চারা এনে বাড়িতে লাগিয়েছিলেন। কী গাছ তা জানতেন না।

Advertisement

দিগন্ত মান্না

পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৯ ০১:৫০
Share:

নিজের বাড়িতে গাছের সঙ্গে সেরাজুদ্দিন। নিজস্ব চিত্র

রামায়ণে উল্লেখ রয়েছে এই বিশেষ উদ্ভিদের। যা খুঁজতে গিয়ে স্বয়ং হনুমানকে উঠিয়ে আনতে হয়েছিল পাহাড়। সেই ‘মৃত সঞ্জীবনী’ গাছ না কি রয়েছে পাঁশকুড়ার এক বাসিন্দার উঠোনে। জোর গুজব ছড়িয়েছে এলাকায়। পরিস্থিতি এমনই যে, গরিব রাজমিস্ত্রি বাঁশের বেড়া দিয়ে লোক রেখে গাছ পাহারা দিচ্ছেন।

Advertisement

পাঁশকুড়ার গোবিন্দনগর এলাকার রানিয়াড়ার বাসিন্দা সেরাজুদ্দিন মল্লিক পেশায় রাজমিস্ত্রি। ২০ বছর আগে ওড়িশায় কাজে গিয়ে একটি গাছের চারা এনে বাড়িতে লাগিয়েছিলেন। কী গাছ তা জানতেন না। সেরাজুদ্দিনের দাবি, সপ্তাহ খানেক আগে এলাকায় রটে যায়, ওই গাছের শিকড়ে মরা মাছ জ্যান্ত হয়ে উঠেছে। এর পরেই গাছটি ‘মৃত সঞ্জীবনী’ বলে গুজব ছড়ায়।

ব্যাস! মুহূর্তে ভোল বদলে যায় এলাকার। গুজব এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, গাছটি কেনার জন্য সেরাজুদ্দিনকে তাঁর এক প্রতিবেশী আড়াই কোটি টাকার প্রস্তাব দেন। কিন্তু ওই ব্যক্তি দাবি করেন, গাছের শিকড় ও ডালপালার নমুনা পরীক্ষা না করে তিনি টাকা দেবেন না। তাতে রাজি হননি সেরাজুদ্দিন। তাঁর দাবি, অগ্রিম কয়েক লক্ষ টাকা দিলেই তিনি নমুনা সংগ্রহ করতে দেবেন।

Advertisement

এ দিকে, গত কয়েক দিনে দলে দলে লোক আসতে থাকে গাছটির ডালপালা, শিকড় সংগ্রহের জন্য। অগত্যা গাছের চারদিকে বাঁশের বেড়া দিয়েছেন সেরাজুদ্দিন। কাজ ফেলে গাছ বাঁচাতে লোকজন নিয়ে পাহারায় বসেছেন নিজে। শুধু দিনে নয়, রাতেও চলছে পাহারা। কিন্তু সত্যিই কি গাছের শিকড়ে মরা মাছ বেঁচে গিয়েছে! তিনি কি নিজে দেখেছেন? সেরাজুদ্দিনের জবাব, ‘‘গাছের কিছু গুণ রয়েছে কি না, আমি জানি না। লোকজন বলছে মূল্যবান গাছ। আমাকে টাকা দিলেই বিক্রি করতে রাজি। কিন্তু গাছকে ঘিরে যে উপদ্রব শুরু হয়েছে, তা কবে বন্ধ হবে জানি না।’’

গুজবের কথা পৌঁছেছে বন দফতরেও। দিন কয়েক আগে গাছটি দেখতে আসেন পাঁশকুড়া রেঞ্জের বনাধিকারিকেরা। অভিযোগ, প্রথমে তাঁদের এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এমনকী, আধিকারিকরা গাছের ছবি তুলতে গেলে এলাকাবাসীর একাংশ মারমুখী হয়ে ওঠেন। কোনওরকমে গাছের নমুনা সংগ্রহ করে এলাকা ছাড়েন বন দফতরের আধিকারিকেরা।

পাঁশকুড়ার ডেপুটি রেঞ্জার অনির্বাণ মিত্র বলেন, ‘‘আমরা গাছটির নমুনা সংগ্রহ করেছি। এটি বনচেরি জাতীয় গাছ। এর থেকে মরা দেহে প্রাণ ফিরে পাওয়া যায়— এই ধারণা ভুল। এটা গুজব ছাড়া আর কিছুই নয়।’’

বন দফতর যাই বলুক, গাছের টানে ভিড়ে খামতি নেই এলাকায়। নিজেদের গাছের অংশীদার দাবি করে কয়েকদিন আগে সেরাজুদ্দিনের বাড়ি ঘুরে গিয়েছেন তাঁর বিবাহিতা বোনেরাও। গুজবের সঙ্গে লড়তে তাই এখন প্রচার চালানোর কথা ভাবছে প্রশাসন। স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য শেখ হানিফ মহম্মদ বলেন, ‘‘এটা গুজব। বিজ্ঞান মঞ্চের প্রতিনিধিদের এনে এলাকায় সচেতনতামূলক প্রচার চালানোর চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন