কেউ হাঁকছে ছ’শো, কেউ হাজার, কেউ আবার পৌঁছে গিয়েছে পাঁচ হাজারে। পুজোর ক’দিন গাড়ি ভাড়া করতে নিয়ে নাকাল হলেন হলদিয়ার বাসিন্দারা।
ষষ্ঠী থেকে নবমী— চার দিনই শিল্পশহরে গাড়ির ভাড়া ছিল আগুন। বিকেল থেকে সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত— সময় যত এগিয়েছে, পাল্লা দিয়ে চড়েছে ভাড়ার অঙ্ক। শহরবাসীর অভিযোগ, রুটের বাস পরিষেবা অনিয়মিত হওয়ায় সুযোগ বুঝে ইচ্ছে মতো ভাড়া হেঁকেছে গাড়ি মালিকেরা। সোমবার, ষষ্ঠীর সকালে দুর্গাচক থেকে টাউনশিপ যাবেন বলে চারচাকা ভাড়া করেছিলেন জন্মেঞ্জয় পন্ডা। তিনি বলেন, ‘‘মাকে কয়েকদিন আগে হাসপাতাল নিয়ে এসেছিলাম। তখন এই দূরত্ব ৩০০ টাকায় এসেছিলাম। আর পুজোয় সেটাই নিল ৬০০ টাকা।’’ মঙ্গলবার, সপ্তমীতে চৈতন্যপুরে বেসরকারি অফিসের কাজে এসেছিলেন এক মহিলা। তিনিও বলেন, ‘‘বাসে ভিড় বলে গাড়ি ভাড়া করব ভেবেছিলাম। কিন্তু নন্দকুমার যেতেই এক হাজার টাকা চাইল। শেষে বাসেই গাদাগাদি করে বাড়ি ফিরলাম।’’
হলদিয়ার দুর্গাচক, হাজরা মোড়, টাউনশিপ ছাড়াও শিল্পশহর লাগোয়া চৈতন্যপুরের একাধিক বড় বাজেটের দুর্গাপুজো ঘিরে এ বার উৎসাহের অন্ত ছিল না। পাশের মহিষাদলেও পুজো ঘিরে যথেষ্ট আকর্ষণ ছিল। হলদিয়ার ব্রজলালচক থেকে স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছিলেন এক ব্যক্তি। তাঁর কথায়, ‘‘হলদিয়া শহর ঘুরে চৈতন্যপুর এবং মহিষাদল যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু গাড়ি ভাড়া চাইল ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। শেষে বাসে চেপেই ঠাকুর দেখলাম।’’ স্থানীয়দের বক্তব্য, মেরে কেটে গোটা এলাকার দুরত্ব ৫০ কিলোমিটার হবে। বছরের অন্য সময় এই দূরত্ব যেতে ভাড়া গুনতে হয় এক হাজার টাকা। কিন্তু পুজোর চার দিন তা বেড়ে গিয়েছিল প্রায় পাঁচগুণ।
হলদিয়া মহকুমা পুলিশ সূত্রে খবর, নজরকাড়া থিমের পুজো দেখতে বাসুদেবপুর, হাজরা মোড় এবং চৈতন্যপুরের মণ্ডপে ছিল জনতার ঢল। ষষ্ঠী থেকেই মণ্ডপে তিল ধারনের জায়গা ছিল না। পুলিশ যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করেছিল। হলদিয়া থেকে তমলুকগামী রাস্তায় সন্ধের পরে যান নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়তে ঘুরপথে বাস চলে। সেই সুযোগে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে বেসরকারি ছোট গাড়ির মালিক ও চালকদের বিরুদ্ধে। তাঁরা অবশ্য অভিযোগ মানতে নারাজ। গাড়ি মালিক ও চালকদের বক্তব্য, পুজোর চার দিন হলদিয়া ও আশেপাশে প্রায় সব রাস্তা ‘নো এন্ট্রি’ ছিল। ফলে, ঠাকুর দেখতে বেরনো যাত্রীদের নিয়ে যাতায়াতে অনেক সময় লেগেছে। অনেকে আবার গাড়ি দাঁড় করিয়ে দীর্ঘক্ষণ মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরেছে। ঠাকুর দেখা শেষে রেস্তোরাঁয় খেতেও ঢুকেছেন অনেকে। আশিস দাস নামে এক গাড়ি চালকের কথায়, ‘‘যা ঝক্কি পোহাতে হয়েছে, তাতে একটু ভাড়া বেশি নেওয়া হয়েছে।’’
কয়েক গুণ বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ মানতে রাজি হয়নি প্রশাসনও। হলদিয়া পুরসভার পুর-পারিষদ (পরিবহণ) আজিজুল রহমান বলেন, ‘‘বাসে চেপে অনেকে ঠাকুর দেখেছেন। আর যাঁরা গাড়ি ভাড়া নিয়ে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরেছেন, তাঁদের থেকে এত টাকা বেশি নেওয়া হয়েছে বলে শুনিনি।’’