পঞ্চায়েতে শিকেয় নিয়ম

প্রতিশ্রুতি ছিল, সরকারি কাজে স্বচ্ছতা আনতে এবং দুর্নীতি আটকাতে চালু হবে ই-টেন্ডার। আদৌ কি মানা হচ্ছে সেই নিয়ম?পাঁচ লক্ষ বা তার বেশি টাকার কাজ হলেই দরপত্র আহ্বান করতে হবে ইন্টারনেটে (ই-টেন্ডার)। তবে এই নির্দেশ শুধুই খাতায়কলমে। বছরের পর বছর কোটি কোটি টাকার কাজ চলেছে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে সাধারণ টেন্ডারেরে মাধ্যমে। অভিযোগ, তাতে দুর্নীতির সুযোগ বাড়ছে।

Advertisement

সুমন ঘোষ

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৬ ০২:০১
Share:

পাঁচ লক্ষ বা তার বেশি টাকার কাজ হলেই দরপত্র আহ্বান করতে হবে ইন্টারনেটে (ই-টেন্ডার)। তবে এই নির্দেশ শুধুই খাতায়কলমে। বছরের পর বছর কোটি কোটি টাকার কাজ চলেছে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে সাধারণ টেন্ডারেরে মাধ্যমে। অভিযোগ, তাতে দুর্নীতির সুযোগ বাড়ছে।

Advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুরে ২৯০টি গ্রাম পঞ্চায়েত। একটিতেও ই-টেন্ডারের নিয়ম মেনে কাজ হয়নি গত কয়েক বছরে। ১৫-২০ লক্ষ বা তার থেকেও বেশি টাকার কাজ হচ্ছে সাধারণ দরপত্র আহ্বানের পদ্ধতিতে। অনেক ক্ষেত্রে তাও মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। ই-টেন্ডার হলে ইন্টারনেটে যাবতীয় কাজের হিসাব থাকে, যে কেউ তা জানতে পারেন। ফলে, স্বচ্ছতা বজায় থাকে। কিন্তু ই-টেন্ডার আর্কাইভে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি-সহ বহু সরকারি দফতরের দরপত্রের উল্লেখ থাকলেও গত ১৫-২০ দিনে কোনও পঞ্চায়েতের কোনও একটি কাজেরও উল্লেখ নেই।

অভিযোগ, পঞ্চায়েতস্তরে দুর্নীতিতে প্রশ্রয় দিতেই ই-টেন্ডার করা হচ্ছে না। নয়ছয় হচ্ছে সরকারি অর্থ। কাজের গুণগত মানও কমছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সবই জানে জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদ। তবু তারা নীরব। জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা আবার বলছেন, “এমন হচ্ছে নাকি? খোঁজ নিয়ে দেখব!” আর জেলা সভাধিপতি উত্তরা সিংহের বক্তব্য, “এ রকম ঘটনার কথা জানা নেই।” অথচ জেলার এক পদস্থ কর্তাই স্বীকার করে নিয়েছেন পুরো বিষয়টা। তাঁর কথায়, “শুধু পশ্চিম মেদিনীপুর কেন, রাজ্য জুড়েই গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতেও একই অবস্থা।”

Advertisement

সম্প্রতি কেশিয়াড়ি ব্লকের খাজরা গ্রাম পঞ্চায়েতে ১২ লক্ষ টাকায় সৌরবাতি বসেছে। সেখানে ই-টেন্ডার দূর, সাধারণ টেন্ডারের পদ্ধতিও মানা হয়নি বলে অভিযোগ। পঞ্চায়েত সূত্রে খবর, ওই দরপত্রে একজনই যোগ দিয়েছিলেন। তাঁকেই কাজের বরাত দিয়ে দেওয়া হয়। পঞ্চায়েত প্রধান শ্রীমতী হেমব্রমের দাবি, “প্রথমে একজনকে কাজ দেওয়া হলেও, পরে নতুন করে টেন্ডারও করা হয়েছিল।” ই-টেন্ডার করেননি কেন? এ বার সোজা জবাব, “আমাদের এখানে কোনও কাজেই ই-টেন্ডার হয় না।”

সাঁকরাইল ব্লকের রোহিণী গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৮ লক্ষ টাকার সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পেও ই-টেন্ডার করা হয়নি। পঞ্চায়েত প্রধান শশাঙ্ক হাটুইয়ের সাফাই, “এ বার থেকে আমরা ই-টেন্ডার করার চেষ্টা করব।” রোহিণীর ওই প্রকল্পে উঠেছে দুর্নীতির অভিযোগও। প্রশাসন সূত্রে খবর, পঞ্চায়েত স্তরে এই ধরনের বাতিস্তম্ভ পিছু ৩০ হাজার টাকার বেশি খরচ করা যাবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু রোহিণীতে এক-একটি বাতিস্তম্ভের জন্য ১ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। গড়বেতা-১ ব্লকের আমলাগোড়া পঞ্চায়েতে অর্থ তছরুপ বন্ধে ৩৫ লক্ষ টাকা ফিরিয়ে পর্যন্ত নিয়েছে জেলা।

অথচ, তারপরেও ই-টেন্ডার বাধ্যতামূলক করার ব্যাপারে হেলদোল নেই প্রশাসনের। অভিযোগ, তারই সুযোগ নিয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ‘ক্রেডেনশিয়াল’ ছাড়াই অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদের কাজ পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে। এমনকী বহুল প্রচারিত সংবাদপত্রেও বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ। নিজস্ব নোটিস বোর্ডে টাঙিয়ে দেওয়া হয় টেন্ডার। কংগ্রেসের জেলা সহ-সভাপতি শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায় থেকে সিপিএমের মেদিনীপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক সারদা চক্রবর্তী, বিজেপি-র জেলা সভাপতি ধীমান কোলে— সকলেরই বক্তব্য, “ই-টেন্ডার করলে স্বজনপোষণ হবে কী করে? তাই সমস্যা নিরসনে কেউ উদ্যোগী হচ্ছেন না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement