অনাবাদি প্রায় ৫৬ শতাংশ জমি

কেন্দ্রীয় প্রকল্পের দিকে তাকিয়ে পূর্ব

শীতকালীন চাষে সেচের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে নতুন প্রকল্প নিয়েছে কেন্দ্র সরকার। সে দিকেই তাকিয়ে পূর্ব মেদিনীপুর। পর্যাপ্ত বৃষ্টিও হাসি ফোটাতে পারে না এ জেলার চাষিদের মুখে। তাই নতুন প্রকল্পের উপর ভরসা করতে চাইছেন তাঁরা।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

তমলুক শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৬ ০১:২৩
Share:

শীতকালীন চাষে সেচের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে নতুন প্রকল্প নিয়েছে কেন্দ্র সরকার। সে দিকেই তাকিয়ে পূর্ব মেদিনীপুর। পর্যাপ্ত বৃষ্টিও হাসি ফোটাতে পারে না এ জেলার চাষিদের মুখে। তাই নতুন প্রকল্পের উপর ভরসা করতে চাইছেন তাঁরা।

Advertisement

কৃষি দফতরের হিসাব অনুযায়ী প্রতিবছর বর্ষায় পর্যাপ্ত বৃষ্টিই হয়। তবু শীতকালে বোরো চাষ করতে পারে না নন্দীগ্রামের ওসমান আলি বা খেজুরির মৃত্যুঞ্জয় শীটরা। কারণ সেচের অভাব। ওসমানরা বলেন, ‘‘বাড়ির কাছে হুগলি নদী। কিন্তু লাভ নেই। শীতকালে নদীর জলও লোনা, চাষ করা যায় না। তাই শীতের ধান চাষ বুনতে পারি না।’’ নন্দীগ্রাম, খেজুরি-সহ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় শীতকালে জল সেচের ব্যবস্থা নেই। ফলে বছরের একটা বড় অংশ চাষ জমি ফাঁকা পড়ে থাকে। সম্প্রতি কেন্দ্র সরকার এই পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করতেই চালু করেছে একটি নতুন প্রকল্প— প্রধানমন্ত্রী কৃষি সিচাই যোজনা। ২০১৪-১৫ আর্থিক বর্ষ থেকে শুরু হয়েছে এই প্রকল্প। কিন্তু জেলার মানুষ সে কথা প্রায় কিছুই জানেন না।

সেচের জলের অভাবে কৃষকদের ধান, সব্জি, ডাল-সহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের চাষের সমস্যা দূর করতে সেচের প্রয়োজন। জলের জোগান দিতে বর্ষার জল ধরে রাখা এবং সেই জলের সদ্ব্যবহার করা বছরে একাধিকবার ফসল ফলানোই এর উদ্দেশ্য। সেই সঙ্গে কৃষকদের কম জল ব্যবহার করে বেশি ফসল ফলানোর কথাও বলা হয়েছে।

Advertisement

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৬০০ মিলিমিটার। কৃষিকাজের জন্য এই পরিমাণ বৃষ্টিকে পর্যাপ্ত হিসেবেই ধরা যায়। কিন্তু বর্ষাকালের এই বিপুল বৃষ্টির জল সংরক্ষণের উপযুক্ত ব্যবস্থা নেই। ফলে শীত ও গ্রীষ্মে জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় সেচের সুযোগ থাকে না। জেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষকরা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে বিক্ষিপ্তভাবে অগভীর নলকূপ বসিয়ে নিয়েছেন। ভূগর্ভস্থ জল তুলে শীতকালে বোরো চাষ করে থাকে। কিন্তু সরকারি উদ্যোগে সেচের ব্যবস্থা না-থাকায় কাজের কাজ প্রায় কিছুই হয় না।

এই নতুন প্রকল্পের আওতায় জেলার অসেচসেবিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত নন্দীগ্রাম-১, ২, খেজুরি-১, ২ ও কাঁথি-১, ২, ৩ ব্লক-সহ বিভিন্ন এলাকায় সেচের সুযোগ বৃদ্ধি করতে নানা পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি দফতরের উপ–অধিকর্তা সুশান্ত মহাপাত্র। তিনি বলেন, ‘‘জেলার বেশিরভাগ এলাকাকে সেচের আওতায় আনা ও কৃষকদের চাষে সাহায্য করতেই প্রধানমন্ত্রী কৃষি সিচাই যোজনায় প্রতিটি ব্লকেই জল সেচের সুযোগ বৃদ্ধির জন্য পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সেচের সুযোগ বৃদ্ধির সঙ্গে জেলার কৃষকদের জলের সুষ্ঠু ব্যবহার নিয়ে সচেতনতা শিবির করা হবে।’’ এ জন্য ৪৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন। ব্লক ভিত্তিক পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে প্রতিটি ব্লকের জন্য ৫-৬ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ হলেই কাজ শুরু করা হবে। আগামী জুন মাস থেকেই শুরু হবে সচেতনতা শিবির।

জেলা কৃষি দফতরের হিসেব অনুযায়ী, পূর্ব মেদিনীপুরে বর্তমানে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ প্রায় ৩ লক্ষ ৪ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে সেচসেবিত এলাকার পরিমাণ প্রায় ১ লক্ষ ৩১ হাজার হেক্টর। অর্থাৎ মোট চাষযোগ্য জমির মাত্র ৪৪ শতাংশ জমিতে জল সেচের সুযোগ রয়েছে। অর্ধেকের বেশি জমিতেই শীত-গ্রীষ্মে সেচের ব্যবস্থা নেই।

দফতরের আধিকারিকদের মতে, জেলা জুড়ে একাধিক নদী রয়েছে। কিন্তু শীতকালীন সেচের কাজে লাগে একমাত্র রূপনারায়ণের মিষ্টিজল। হলদি, হুগলি নদীর জল লবনাক্ত হয়ে যায়। জেলা কৃষি দফতরের উপ-অধিকর্তা সুশান্ত মহাপাত্র বলেন, ‘‘বিভিন্ন খাল ও পুকুর সংস্কার, বড় জলাশয় খনন করে বৃষ্টির জল ধরে রাখার ব্যবস্থা করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন