Soil Pollution

মাটির স্বাস্থ্য ভাল না হলে মানুষের খাবারের ক্ষতি

বিশ্ব মাটি দিবস ছিল ৫ ডিসেম্বর। মাটির দূষণ নিয়ে উদ্বেগের রিপোর্ট প্রকাশিত। খোঁজ নিল আনন্দবাজারমাটির স্বাস্থ্য নষ্ট হয় কী কী ভাবে? এফএও-র রিপোর্ট বলছে, মানুষের ব্যবহৃত রাসায়নিকই মাটির দূষণের মূল কারণ। নানা কাজের নানারকম রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২০ ০০:০১
Share:

কৃষিজমি দূষিত হয় নানা ভাবেই। মাটির দূষণ রুখতে না পারলে মানুষেরই ক্ষতি। নিজস্ব চিত্র।

গাছের মতো গুরুত্ব পায়নি মাটি। চারাগাছ রোপণ লাগানো ও পরিচর্যায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বারবার। সেটা দরকারও ছিল। জলবায়ু পরিবর্তন যে অশনি সঙ্কেত দেখাচ্ছে তা থেকে বাঁচাতে পারে একমাত্র গাছ। কিন্তু মাটি বিষয়টিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। মাটি রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাটির শুদ্ধতা রক্ষা করতে না পারলে শুধু মানুষের নয়, জীবকুলের প্রত্যক্ষ ক্ষতি। সে ক্ষতির প্রভাব পড়ে সরাসরি খাবারের থালা থেকে বাস্তুতন্ত্রের উপরে।

Advertisement

গত ৫ ডিসেম্বর ছিল ‘বিশ্ব মাটি দিবস’। প্রতি বছরই এই দিনটি পালন করা হয়। মাটি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে দিনটিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মাটি রক্ষা, মাটির উপর নির্ভরশীল জীববৈচিত্র রক্ষা করতে বিভিন্ন দেশের সরকার, জনগণ এবং সাধারণ মানুষকে সচেতনতা করাই দিনটির লক্ষ্য। এই দিনেই ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (এফএও) একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। যে রিপোর্টে মাটির স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

মাটির স্বাস্থ্য নষ্ট হয় কী কী ভাবে? এফএও-র রিপোর্ট বলছে, মানুষের ব্যবহৃত রাসায়নিকই মাটির দূষণের মূল কারণ। নানা কাজের নানারকম রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। সেই ব্যবহার শিল্পে হতে পারে। আবার গৃহস্থালীর কাজে হতে পারে। বিভিন্ন প্রাণী পালনে ব্যবহার করা রাসায়নিকও ক্ষতি করে। ক্ষতি করে পুরসভার নানা ধরনের বর্জ্য। সেসবের মধ্যে নিকাশির জলও রয়েছে। এছাড়াও কৃষিতে ব্যবহৃত নানা রাসায়নিক মাটির ক্ষতি করে। পেট্রোলিয়াম চালিত গাড়ি থেকে নানাবিধ যন্ত্রও মাটির দূষণের কারণ হয়। এই রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে কিছু উপজাত দ্রব্যও তৈরি হয়। সেগুলও মাটির ক্ষতি করে।

Advertisement

রিপোর্টের উদ্বেগজনক দিক হল, মাটির দূষণের প্রভাব খাদ্যের উপরে সরাসরি পড়ে। দু’ভাবে মাটির দূষণ খাদ্যের উপরে প্রভাব ফেলে। মাটিতে দূষণের মাত্রা যদি বেড়ে যায় তাহলে ফসল উৎপাদন কমে যায়। আবার দূষিত মাটিতে উৎপাদিত ফসলের মধ্যেও বিষ থাকে। তা খাওয়া মানুষ এবং প্রাণী উভয়ের পক্ষেই ক্ষতিকর। এফএও বিভিন্ন দেশের সরকারের কাছে আবেদন করেছে, তারা যেন কৃষিক্ষেত্রে দূষণ কমিয়ে মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় জোর দেয়। মাটির দূষণের আরও ক্ষতিকর দিক হল, নতুন ধরনের কীটপতঙ্গের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। সেই সঙ্গে নানা রোগের বৃদ্ধির সম্ভাবনা। কারণ মাটির দূষণে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এতে পোকামাকড়ের খাদকের সংখ্যা কমিয়ে দিতে পারে। প্রতিদ্বন্দ্বী বিভিন্ন প্রাণীকে নষ্ট করে দিতে পারে। ছড়াতে পারে রোগ প্রতিরোধী বিভিন্ন জীবাণু। তাতে মানুষের রোগজীবাণুর সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা কমে আসতে পারে। দীর্ঘদিনের দূষণে মাটির গুণমান কম হতে থাকে। তখন তাতে ফসল উৎপাদন কঠিন হয়ে যায়। বর্তমানে মাটির দূষণে এবং মান খারাপ হওয়ায় বিশ্বের ৪০ শতাংশ জনসংখ্যা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দূষিত মাটি ভূমিক্ষয়ের অন্যতম কারণও।

এফএও-র রিপোর্টে জীববৈচিত্র নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, মাটি নির্ভর জীববৈচিত্র দূষণের কারণে নষ্ট হতে পারে। আর সেই ক্ষতির প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা মাটির নীচের জীববৈচিত্রেও। সেই জীব হতে পারে কোনও অণুজীব, কোনও প্রজাতি বা দলবদ্ধ ভাবে বাস করা প্রাণীর দল। এই সব জীবেরা মাটির মান বজায় রাখতে যে অবদান রাখত সেই শৃঙ্খলও ভেঙে যেতে পারে। অনেক জৈবাণুই কিন্তু মাটিতে নানা পুষ্টিকর উপাদান সরবরাহ করে। আর সেগুলো গাছেদের কাজে লাগে। এই ক্ষতি রুখতে হলে কীটনাশক প্রয়োগে সাবধান হতে হবে।

মাটির জীববৈচিত্র এমনিতেই নানা কারণে ক্ষতিগ্রস্ত। মানুষ ক্ষতি তো করছেই। জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক বিপর্যয়েও ক্ষতি হচ্ছে। এর সঙ্গেই আছে কৃষিক্ষেত্রে বেশিমাত্রায় বা অপব্যবহার করা রাসায়নিক। বনভূমি কমে যাওয়া, শহরাঞ্চলের বৃদ্ধি মাটির পক্ষে ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

দুই মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামে এই সমস্যাগুলোর অনেকটাই রয়েছে। কৃষি দফতর অবশ্য বিভিন্ন সময়েই জানিয়েছে, তারা জমিতে রাসায়নিক ব্যবহার কম করার বিষয়ে সচেতনতা বাড়াচ্ছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন