একলব্য স্কুলের রবীন্দ্রজয়ন্তীতে স্বামী শুভকরানন্দ। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
একলব্যের সব্যসাচী হয়ে ওঠার সাক্ষী থাকলেন রবিঠাকুর!
শনিবার সন্ধ্যায় কালবৈশাখীর ঝড়বাদলে ধুয়ে গিয়েছিল বহু শ্রমে তৈরি বকুলবীথি তলায় অনুষ্ঠানস্থলের সাজসজ্জা। কিন্তু একটুও ভেঙে পড়েনি একলব্য আদর্শ আবাসিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। জায়গা বদল করে স্কুলের সামনে আবিরের আলপনায় অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণ সাজিয়ে তুলল কল্পনা, পূজা, মঙ্গল, সুমিত্রা, হৈমবতী, রবিন-রা। রবিবার সকালে সেখানেই অনেকটা আশ্রমিক পরিবেশের ধাঁচে ১৫৬তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী পালন করা হল। আদিবাসী পড়ুয়াদের দৃঢ় মনোভাবের প্রশংসা করতে ভুললেন না বেলুড় রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের ভারপ্রাপ্ত স্বামী শুভকরানন্দ। তিনি বললেন, “ওরা আত্মশক্তি ও প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর। অথচ উপযুক্ত সহযোগিতার অভাবে ওরা যেন প্রান্তবাসী হয়ে রয়েছে। তা-ও ওরা প্রমাণ করে দিয়েছে, আগামী দিনে একলব্য থেকে ওরা অর্জুনের মতো সব্যসাচী হয়ে উঠবে।”
রাজ্য অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর পরিচালিত এই স্কুলের পঠনপাঠনের দায়িত্ব রামকৃষ্ণ মিশনের হাতে তুলে দিয়েছে রাজ্য সরকার। গত ৫ জানুয়ারি মেদিনীপুরে এক অনুষ্ঠানে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুহিতানন্দের হাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে স্কুলের দায়িত্বভার তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকায় রাজ্য অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের মাধ্যমে স্কুলটি পরিচালিত হয়। ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত ৩২৬ জন আদিবাসী ছাত্রছাত্রী হস্টেলে থেকে সম্পূর্ণ নিখরচায় পড়াশুনার সুযোগ পায়। রামকৃষ্ণ মিশন দায়িত্ব নেওয়ার পরই বদলে গিয়েছে স্কুল এবং ছাত্রাবাস ও ছাত্রীনিবাসের ছবি। শুভকরানন্দ বলেন, “মাত্র তিন মাসের মধ্যেই স্কুলের এই ভোল বদলের মুখ্য কারিগর কিন্তু এই ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষক-শিক্ষিকারাই। মানুষ চেষ্টা করলে অসাধ্যসাধন করতে পারে। সেটা ওরা করে দেখিয়েছে।”
এদিন সকালে শঙ্খধ্বনি ও বেদমন্ত্র পাঠ দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। পড়ুয়াদের উপস্থাপনায় পরিবেশিত হয় বাংলা, সাঁওতালি ও ইংরেজিতে রবীন্দ্রনাথের গান, আবৃত্তি ও নৃত্যানুষ্ঠান। রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে আলোচনায় যোগ দেন স্বামী শুভকরানন্দ, চিত্রশিল্পী সঞ্জীব মিত্র, লোকশিল্প ও সংস্কৃতি গবেষক সুব্রত মুখোপাধ্যায়, নাট্যব্যক্তিত্ব দেবলীনা দাশগুপ্ত, স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নৃপেন টুডু, সহ শিক্ষক সৌরভ প্রতিহার প্রমুখ। শ্রীজাত-র লেখা ‘আমার সান্তাঠাকুর’ শ্রুতিপাঠ করেন স্কুলের সহ শিক্ষক শুভদীপ বসু। রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন স্বামী শুভকরানন্দ। প্রকাশিত হয় জীববিদ্যা বিভাগের একটি দেওয়াল পত্রিকা ‘ডারউইন’। সমাপ্তির সঙ্গীতে সকলে গেয়ে ওঠেন, “এই আকাশে আমার মুক্তি আলোয় আলোয়।”
উত্তরণের ঝকঝকে আলোয় তখন উদ্ভাসিত কচিমুখগুলো।