pradhan mantri awas yojana

দাদার ঘরের টাকা ঢুকে গেল ভাইয়ের অ্যাকাউন্টে!

চলতি বছরে দু’টি পর্যায়ে ৭৬ হাজার টাকা ঢুকে গিয়েছে সাধনবাবুর ভাই প্রবীর শবরের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। সেই টাকা তুলেও নিয়েছেন প্রবীরবাবু।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৭ ১৪:২০
Share:

প্রতীকী চিত্র।

উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে!

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ আবাস যোজনায় বাড়ি বরাদ্দ হয়েছিল সাধন শবরের নামে। পঞ্চায়েতের তরফে প্রয়োজনীয় সমীক্ষা করে সাধনবাবুর ব্যাঙ্ক অ্যাউউন্ট নম্বর-সহ প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দেওয়া হয়েছিল ব্লক অফিসে। সাধনবাবুর অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকেনি। চলতি বছরে দু’টি পর্যায়ে ৭৬ হাজার টাকা ঢুকে গিয়েছে সাধনবাবুর ভাই প্রবীর শবরের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। সেই টাকা তুলেও নিয়েছেন প্রবীরবাবু। অথচ প্রবীরবাবুর নামে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার কোনও বাড়িই বরাদ্দ হয়নি।

বেলপাহাড়ি ব্লকের এড়গোদা গ্রাম পঞ্চায়েতের আশাকাঁথি গ্রামের ঘটনা। বিডিও-সহ প্রশাসনিক মহলের দ্বারস্থ হয়েছেন সাধনবাবু। শবর সম্প্রদায়ের হতদরিদ্র সাধনবাবুর অভিযোগ পেয়ে অস্বস্তিতে ঝাড়গ্রাম জেলা প্রশাসন। ঘটনায় সোচ্চার হয়েছে ‘লোধা-শবর কল্যাণ সমিতি’। সমিতির ঝাড়গ্রাম জেলা আহ্বায়ক ভোম্বল শবর অভিযোগ করে বলেন, “জঙ্গলমহল জুড়ে সাধনবাবুর মতো ভূরি ভূরি উপভোক্তাকে এভাবেই বঞ্চিত করা হচ্ছে।”

Advertisement

আরও পড়ুন
রসগোল্লার জয়ে খুশি কাঁথি

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বেলপাহাড়ি ব্লকের এড়গোদা পঞ্চায়েতের আশাকাঁথি গ্রামের সাধন শবর স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের নিয়ে মাটির ভাঙা বাড়িতে থাকেন। বেশ কিছুটা দূরে আলাদা একটি বাড়িতে সপরিবারে থাকেন সাধনবাবুর ভাই প্রবীর শবর।

গত বছর সরকারি প্রকল্পে বাড়ি চেয়ে আবেদন করেন সাধনবাবু। ২০১৬-১৭ অর্থ বর্ষে সাধনবাবুর বাড়ি বরাদ্দ হয়। এই প্রকল্পে উপভোক্তাকে বাড়ি তৈরির জন্য দেওয়া হয় মোট ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। কয়েক কিস্তিতে ব্যাঙ্কের মাধ্যমে সেই টাকা দেওয়া মেলে। তবে পর্যয়ক্রমে কাজের অগ্রগতি দেখে ব্লককে রিপোর্ট দেয় পঞ্চায়েত।

গত বছর পঞ্চায়েতের তরফে সাধনবাবুর বাড়ি পরিদর্শন করা হয়েছিল। নথিপত্র জমা পড়ে বিডিও অফিসে। অথচ বছর গড়িয়ে গেলেও বাড়ি তৈরির টাকা পাননি সাধনবাবু। সম্প্রতি তিনি বিডিও অফিসে গিয়ে জানতে পারেন চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ৪২ হাজার টাকা এবং ৩০ অগস্ট ৩৪ হাজার টাকা তাঁর অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে।

পরে জানা যায়, টাকা পড়েছে ভাই প্রবীরের অ্যাকাউন্টে। প্রবীর অবশ্য টাকা পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য প্রতিমা মণ্ডলের স্বামী অর্থ মণ্ডল বলেছিলেন সাত হাজার টাকা দিলে তিনি আমার নামে প্রকল্পের টাকা পাইয়ে দেবেন। আমি রাজি হই।’’

অভিযোগ, এরপরই নাকি প্রবীরের ব্যাঙ্কের নথিপত্র নিয়ে যান অর্থ। এ বছর দু’দফায় ৭৬ হাজার টাকা পেয়েছেন প্রবীর। সাত হাজার টাকা দিয়েছেন অর্থকেও। তবে প্রবীর নাকি জানতেন না তাঁর দাদার টাকাই তাঁকে দেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন
জ্বরে আক্রান্ত মহিলার মৃত্যু মেডিক্যালে

পঞ্চায়েত সদস্য প্রতিমা মণ্ডলকে ফোন করা হলে তা ধরেন স্বয়ং অর্থ। কথাও বলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘কী করে হল তা আমি কী করে জানব। ওঁরাই হয়ত ভুল করে অন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়েছিল।’’ এড়গোদা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান বৈদ্যনাথ সরেন বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত সদস্য প্রতিমাদেবী দায় এড়াতে পারেন না। কারণ, পরিদর্শন কাজে উনিও ছিলেন।’’

বেলপাহাড়ির বিডিও সন্তু তরফদার বলেন, “অভিযোগ খতিয়ে দেখে কেউ কড়া পদক্ষেপ করা হবে।” কী ভাবে এক ব্যক্তির টাকা অন্যের অ্যাকাউন্টে ঢুকল? টাকা ছাড়ার আগে অ্যাকাউন্টটি কার নামে আছে তা কেন দেখা হল না? এড়গোদার ওই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের কী করে চোখ এড়িয়ে গেল? সদুত্তর মেলেনি।

ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আর অর্জুন বলেন, “অভিযোগ তদন্ত করে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।”

বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী কংগ্রেস সদস্য সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, “উন্নয়নের নামে গরিব জনজাতির মানুষজনকে ঠকিয়ে এভাবেই লুঠতরাজ চলছে। আমরা এই রকম অজস্র দুর্নীতির প্রমাণ নিয়ে শীঘ্রই আন্দোলনে নামছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন