বিস্ফোরণের পর। —ফাইল চিত্র।
নদীর ধার থেকে উদ্ধার হয়েছিল বৃদ্ধের দেহ। তাঁর পরিচয় জানার পরই তিন মাসের আগের মকর়ামপুর বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িয়ে গেল মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনা।
শনিবার রাতে কেশিয়াড়ির ভসরা থেকে উদ্ধার হয়েছিল এক বৃদ্ধের দেহ। রবিবার রাতে জানা যায়, ওই বৃদ্ধের নাম দুর্গাচরণ পাত্র (৭০)। খড়্গপুর গ্রামীণের বেনাপুরের কেসুরিয়ার বাসিন্দা দুর্গাচরণের নাতি বিমল চৌধুরী গত ২৩ অগস্ট মকরামপুর তৃণমূল কার্যালয়ে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় মারা যান। ঘটনাচক্রে ওই বিস্ফোরণের ঘটনায় সিবিআই তদন্ত চেয়ে মামলা করেছিলেন দুর্গাচরণ। তাঁর পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য, মামলা করার পর থেকেই দুর্গাচরণ ‘চাপে’ ছিলেন। দুর্গাচরণের ছেলে প্রকাশ পাত্র বলেন, ‘‘নাতির মৃত্যুর পর বাবা মানসিকভাবে সত্যিই ভেঙে পড়েছিলেন। তাছাড়া মামলা নিয়ে চাপ ছিল বাবার উপর।’’ কেন চাপ? কারা চাপ তৈরি করছিল? প্রকাশের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘বুঝতেই তো পারছেন।’’ মৃতের ভাইপো সুভাষ পাত্র অবশ্য বলছেন, “কাকা মকরামপুর বিস্ফোরণের মামলাকারী হওয়ায় চাপ ছিল। কয়েক দিন এখানকার স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা এসে লক্ষ্মীকান্ত শিটের নাম বলে কাকাকে মামলা প্রত্যাহারের জন্য বলেছিল।’’ তিনি যোগ করেন, ‘‘আত্মহত্যা বলে মনে হলেও এই মৃত্যু নিয়ে আমাদেরও সন্দেহ রয়েছে। কাকার পারলৌকিক কাজ শেষে পরিবারে আলোচনা করে পুলিশে অভিযোগের বিষয়ে ভাবব।”
দলীয় কার্যালয়ে বিস্ফোরণের পর তৃণমূলের দ্বন্দ্বের কথা প্রকাশ্যে এসেছিল। তবে মামলা প্রত্যাহার নিয়ে ‘চাপ’ তৈরির অভিযোগ প্রসঙ্গে তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি লক্ষ্মীকান্ত শিট বলেন, ‘‘পরিবারের লোক আমার নামে মিথ্যে অভিযোগ করছেন। আমি এসবের সঙ্গে যুক্ত নই। চাপ দেওয়ার জন্য কাউকে পাঠাইনি।’’
দুর্গাচরণ আত্মঘাতী হয়েছেন বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছে পুলিশ। মৃত্যু বিষক্রিয়ায় বলে অনুমান তাদের। এমনকি, ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টেও বিষের নমুনা পাওয়ার উল্লেখ রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। পুলিশ সূত্রের খবর, গত ২২নভেম্বর বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন দুর্গাচরণ। তার পরে পরিজনেরা খোঁজ করলেও সন্ধান না মেলায় খড়্গপুর গ্রামীণ থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন প্রকাশ। তবে বাড়ি ফেরেননি ওই বৃদ্ধ। শনিবার সুবর্ণরেখার ধারে মেলে তাঁর দেহ। প্রকাশ বলেন, ‘‘বাবা আত্মহত্যা করবেন ভাবিনি।’’
স্থানীয় সূত্রে খবর, গত ১০ নভেম্বর মকরামপুরের তৃণমূল আয়োজিত নাতির স্মরণ সভায় যোগ দিয়েছিলেন দুর্গাচরণ। এলাকায় তৃণমূল সমর্থক হিসাবেই পরিচিত ছিলেন তিনি। নাতির স্মরণসভায় এসে ভেঙে পড়েছিলেন কান্নায়। পরিবার সূত্রে খবর মকরামপুর- কাণ্ডে মৃত বিমলের শৈশবের অনেকটা সময় কেটেছে মামার বাড়িতে। দাদুর স্নেহের ছিলেন বিমল। পরিবার সূত্রের খবর, স্মরণ সভায় এসে দুর্গাচরণ ভেবেছিলেন, নাতির মৃত্যু নিয়ে হয়তো কোনও দিকের সন্ধান পাবেন। কিন্তু আশা পূরণ হয়নি। তাই মানসিকভাবে আরও ভেঙে পড়েছিলেন ওই বৃদ্ধ। গত ২২ নভেম্বর বাড়ি থেকে সাইকেলে বেরিয়েছিলেন। গোপালী মোড়ে একটি দোকানে সাইকেল রেখে কেশিয়াড়িগামী বাসে উঠেছিলেন। তার পর থেকে তাঁর কোনও খোঁজ মিলছিল না। তাই মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধন্দে মৃতের পরিবারও।