ট্রান্সফর্মার বিকল দু’মাস

আজও সেই আঁধারেই আমলাশোল

বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি জেলার বিদ্যুৎ দফতরে নালিশ জানিয়েছেন কয়েকজন গ্রামবাসী। এই ঘটনায় অস্বস্তি শুরু হয়ে গিয়েছে প্রশাসনের অন্দরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৭ ০২:০০
Share:

বিকল: আমলাশোলের সেই ট্রান্সফর্মার। নিজস্ব চিত্র

বেশ কিছুদিন ধরেই আলো জ্বলছে না কালু শবর, রাধু শবর, মদন শবর, মালতী শবরদের বাড়িতে। মাস দু’য়েক আগে বেলপাহাড়ির আমলাশোল গ্রামের কেন্দগড়া পাড়ায় বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মারে বাজ পড়েছিল। সেই বিকল ট্রান্সফর্মার আর সারানো হয়নি। কারণ, গ্রামের অধিকাংশ গ্রাহক বিদ্যুতের বিল মেটাননি।

Advertisement

বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি জেলার বিদ্যুৎ দফতরে নালিশ জানিয়েছেন কয়েকজন গ্রামবাসী। এই ঘটনায় অস্বস্তি শুরু হয়ে গিয়েছে প্রশাসনের অন্দরে।

বাম জমানায় ‘অনাহারের গ্রাম’ আমলাশোল উঠে আসে খবরের শিরোনামে। ২০০৪ সালে অনাহার ও অপুষ্টিতে পাঁচ শবরের মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য-রাজনীতি। ২০১৪ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমলাশোলে গিয়ে বাসিন্দাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন— তাঁর সরকার প্রত্যন্ত ওই জনপদের বাসিন্দাদের সব রকম পরিষেবা দিতে বদ্ধপরিকর। এ বারও ঝাড়গ্রাম জেলা সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়ে গিয়েছেন, আদিবাসীদের অভাব অভিযোগ ফেলে রাখা
চলবে না।

Advertisement

কিন্তু বিপাকে বিদ্যুৎ দফতর। জঙ্গলমহলের সিংহভাগ গ্রাহক বছরের পর বছর বিদ্যুতের বিল মেটাচ্ছেন না। তাঁদের বেশিরভাগই আবার আদিবাসী-মূলবাসী সম্প্রদায়ের। খেলাপি গ্রাহকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করে সংযোগও বিচ্ছিন্ন যাচ্ছে না— কারণ, অশান্তির ভয়। বাসিন্দাদের ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে জঙ্গলমহলে অশান্তি পাকানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে খবর। আবার অনেক ক্ষেত্রেই লাইন কাটতে গিয়ে বাধা পেয়ে, এমনকী রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে ফিরে আসছেন বিদ্যুৎ কর্মীরা।

অনেকেই বলছেন বিল আদায়ের কৌশল হিসেবেই খেলাপি গ্রাহকদের এলাকায় বিকল ট্রান্সফর্মার সারাতে গড়িমসি করে দফতর। আড়ালে সে কথা স্বীকারও করে নেন দফতরের কর্মীদের অনেকে।

বিদ্যুৎ দফতরের বক্তব্য, ২৪ কিস্তিতে বিদ্যুতের বিল মিটিয়ে দেওয়ার জন্য সুবিধা করে দেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও অনাদায়ী বিল আদায় হচ্ছে না। আমলাশোলও ব্যতিক্রম নয়। পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার ঝাড়গ্রাম ডিভিশনের আওতায় ছ’টি গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রের আওতায় রয়েছেন মোট ২ লক্ষ ২ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক। এর মধ্যে ১ লক্ষ ৬০ হাজার গ্রাহক দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে বিল মেটাচ্ছেন না। বকেয়া প্রায় একশো কোটি টাকা।

দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাম আমলে মাওবাদী অশান্তি পর্বের সময় থেকে বিদ্যুতের বিল মেটাচ্ছেন না সিংহভাগ গ্রাহক। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে ২০০৮ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৪ সালের জুলাই পর্যন্ত ঝাড়গ্রামে ২১ কোটি টাকার বকেয়া বিদ্যুতের বিল স্থগিত করে দেওয়া হয়। ওই টাকা আর গ্রাহকদের মেটাতে হবে না। কিন্তু তারপরও বিদ্যুতের বিল মেটাতে আগ্রহী হননি গ্রামাঞ্চলের গ্রাহকরা। এখন ঝাড়গ্রাম বিদ্যুৎ বিভাগের ১ লক্ষ ৬০ হাজার গ্রাহকের বকেয়া বিলের পরিমাণ ৯৮ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা।

বেলপাহাড়ির আমলাশোল গ্রামে মোট বিদ্যুৎ গ্রাহক ৯৯ জন। এর মধ্যে ৮৮ জনের বিল বকেয়া রয়েছে প্রায় ৪ লক্ষ টাকা। গ্রামে বিদ্যুতের ৬ টি ট্রান্সফর্মার রয়েছে। এরমধ্যে কেন্দগড়া পাড়ার ট্রান্সফর্মারটি গত অগস্টে বাজ পড়ে বিকল হয়ে যায়। তারপর আর সেটি সারানো হয়নি। ওই ট্রান্সফর্মারের আওতায় রয়েছে ১৭টি শবর ও মুণ্ডা পরিবার। তাঁদের আবার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া প্রায় ৫২ হাজার টাকার। স্থানীয়রা বলছেন, ‘‘আমরা গবির মানুষ। দিন আনি দিন খাই। কোথা থেকে বিদ্যুতের বিল মেটাব। মুখ্যমন্ত্রী জঙ্গলমহলে এত কিছু দিচ্ছেন। আমাদের বিনা পয়সায় বিদ্যুৎটাও তো দিতে পারেন!’’

বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার ঝাড়গ্রাম ডিভিশনাল ম্যানেজার উজ্জ্বল রায় অবশ্য দাবি করেছেন, “৯ অক্টোবর আমলাশোলের বাসিন্দারা লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন। দ্রুত ট্রান্সফর্মারটি সারিয়ে দেওয়ার বিষয়ে উদ্যোগী হচ্ছি।’’ তিনি আবেদন জানান, ঝাড়গ্রামের সমস্ত খেলাপি গ্রাহকরা যেন দয়া করে বকেয়া বিল মিটিয়ে দেন। তাঁর দাবি, এ জন্য প্রতিটি পঞ্চায়েেত শিবির করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন