বিদায়: দুধপাথরিতে পানমণির নিথর দেহ। নিজস্ব চিত্র
দু’সপ্তাহের লড়াই শেষ। জীবনযুদ্ধে হেরেই গেল পানমণি। বছর পনেরোর হস্তিনীর মৃত্যুতে স্বজন-হারানোর শোক দুধপাথরিতে।
দিন তিনেক আগেও চিকিৎসায় সাড়া দিয়েছিল পানমণি। নড়েচড়ে বসার চেষ্টা করেছিল। মাঝে মধ্যে শুঁড়ও হেলাচ্ছিল। যা দেখে খুশির হাওয়া বইতে শুরু করে দুধপাথরিতে। মঙ্গলবার বিকেলে মৃত্যু হয় হাতিটির। বন দফতর ও গ্রামবাসীদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে শেষ নিঃশ্বাস রাখে সে। ফুল দিয়ে পানমণিকে শেষ বিদায় জানান গ্রামবাসীরা। এক বনকর্তার ধারণা, “দীর্ঘদিন মাটিতে শুয়ে থাকার ফলে গায়ে কতগুলো ঘা হয়েছিল। ওই ঘা থেকে সংক্রমণ হয়ে থাকতে পারে।” তাঁর সংযোজন, “অসুস্থ হয়ে হাতি একবার এ ভাবে শুয়ে পড়লে সাধারণত উঠে দাঁড়ায় না। ব্যতিক্রমী ঘটনা যে ঘটেনি তা নয়। এক সময়ে মনে হয়েছিল, এটাও ব্যতিক্রমী হতে চলেছে। ও নিশ্চয়ই সেরে উঠবে। উঠে দাঁড়াবে। তা আর হল না।”
সপ্তাহ দুয়েক আগে, গত ২ মে এই হস্তিনীটিকে জঙ্গলে পড়ে থাকতে দেখেন গোয়ালতোড়ের দুধপাথরি গ্রামের বাসিন্দারা। হাতিটির চিকিৎসা শুরু হয়। বনকর্মীদের পাশাপাশি হাতিটির দেখভাল শুরু করেন গ্রামবাসীরাও। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পালা করে পাহারা দেন তাঁরা। প্রচণ্ড গরমে শরীরে জল কমে যাওয়ায় হস্তিনীটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। সপ্তাহ খানেক চিকিৎসা চলার পরেও বিশেষ সাড়া দিচ্ছিল না সে। পরে রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্য বনপাল নীরল সিঙ্ঘলের পরামর্শে জেলার বনকর্তারা আলিপুর চিড়িয়াখানার পশু চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ওই চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে চিকিৎসা শুরু হয়।
পানমণির ওষুধপত্র ও খাবারের মেনুতেও পরিবর্তন আনা হয়। এরপর থেকে পানমণির শারীরিক অবস্থার উন্নতি হতে শুরু করে। রোজ নিয়ম করে হাতিটিকে স্যালাইন ও ইঞ্জেকশন দেওয়া হচ্ছিল। এক বনকর্মীর কথায়, “দিন তিনেক আগে ওর খিদে প্রচুর পরিমাণে বেড়েছিল। খিদে পেলে নিজেই শুঁড় নাড়াতে শুরু করত।” আগে কলা-আখ-লাউ এ সবই তাকে দেওয়া হয়েছে। মাঝে মধ্যে এ সব মুখে তুলেছে সে। পরে চাল এবং মসুর ডাল দেওয়া শুরু হয়। জঙ্গলের মধ্যে টানা এক-দেড় সপ্তাহ অসুস্থ হয়ে শুয়ে থাকার পরে হাতি সুস্থ হয়েছে, এমন নজির কমই রয়েছে।
স্থানীয় দিলীপ মাহাতো বলছিলেন, “সকলেরই মন বেশ খারাপ। কিছু ভাল লাগছে না।” বন দফতরের রূপনারায়ণ বিভাগের ডিএফও অর্ণব সেনগুপ্তের কথায়, “সব রকম চেষ্টা হয়েছিল। তবুও ওকে বাঁচানো সম্ভব হল না।” আজ, বুধবার মৃত হাতিটির ময়নাতদন্ত হবে। ময়নাতদন্তের পরে দাহ করা হবে। মৃত্যুর কারণ ঠিক কি? বন দফতরের এক কর্তার কথায়, “এটা ময়নাতদন্তের রিপোর্টেই স্পষ্ট হবে।”