বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়

ছাত্রদের হাতে শিক্ষক মূল্যায়ন থমকে

ছাত্রছাত্রীদের মেধা যাচাইয়ে পরীক্ষা পদ্ধতি রয়েইছে। কিন্তু শিক্ষক-শিক্ষিকারা কতটা ছাত্রবন্ধু, তা জানতে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মূল্যায়ন চালু সিদ্ধান্ত হয়েছে আগেই। এই মূল্যায়ন করার কথা ছাত্রছাত্রীদের। কিন্তু সেই কাজে গতি নেই। গত বছর সিদ্ধান্ত হলেও শিক্ষক মূল্যায়ন পদ্ধতি কার্যকর হয়নি এখনও।

Advertisement

সুমন ঘোষ

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৬ ০০:৫৯
Share:

ছাত্রছাত্রীদের মেধা যাচাইয়ে পরীক্ষা পদ্ধতি রয়েইছে। কিন্তু শিক্ষক-শিক্ষিকারা কতটা ছাত্রবন্ধু, তা জানতে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মূল্যায়ন চালু সিদ্ধান্ত হয়েছে আগেই। এই মূল্যায়ন করার কথা ছাত্রছাত্রীদের। কিন্তু সেই কাজে গতি নেই। গত বছর সিদ্ধান্ত হলেও শিক্ষক মূল্যায়ন পদ্ধতি কার্যকর হয়নি এখনও।

Advertisement

কেন এই দেরি? বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩৪০০ ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ২ হাজারের বেশি ছাত্রছাত্রী তাঁদের মতামত জানিয়েছেন। কিন্তু মতামত যাচাই করে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মূল্যায়ন করবে কে? সেই সিদ্ধান্ত নিতেই বছর গড়িয়ে গিয়েছে। কারণ, কর্তৃপক্ষ মূল্যায়ন করলে নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ থাকে। তাই সরকার স্বীকৃত কোনও বাইরের সংস্থাকে দিয়ে এই মূল্যায়ন করার ব্যবস্থা হচ্ছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তী জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বাইরের সংস্থাকে দিয়ে মূল্যায়ন করালে নিরপেক্ষতা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবেন না। আবার সেটা করতে গেলে এগজিকিউটিভ কাউন্সিলের অনুমোদন প্রয়োজন। সে সব করতে কিছুটা সময় লেগেছে। এ বার যত দ্রুত সম্ভব মূল্যায়নের কাজটি করা হবে।”

বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্ম ১৯৮১ সালে। তবে ক্লাস শুরু হয় ১৯৮৬-৮৭ সালে। তখন মাত্র ৬টি বিভাগ নিয়ে পথচলা শুরু হয়েছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ের। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসর বেড়েছে অনেকটা। ৩৫টি বিভাগে স্নাতকোত্তর পঠনপাঠন চলে। রয়েছে দূরশিক্ষা বিভাগ। একাধিক নতুন কলেজ তৈরি হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বও বেড়েছে অনেকটা। কিন্তু পড়াশোনার গুণগত মান কতটা বেড়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীদের কর্মজগতে সাফল্য গবেষণায় সাফল্য যথেষ্ট আশাপ্রদ নয় বলে শিক্ষকদের একাংশই আড়ালে স্বীকার করেন। কিন্তু এর দায় কি শুধু ছাত্রছাত্রীদের? শিক্ষক-শিক্ষিকা বা কর্তৃপক্ষের কোনও ভূমিকা নেই?

Advertisement

অভিযোগ, কিছু শিক্ষক নিয়মিত ক্লাস করেন না। গবেষণাতেও তেমন উৎসাহ দেন না। আবার শিক্ষকদের অভিযোগ, ছাত্রছাত্রীরা অমনোযোগী। কর্তৃপক্ষেরও ত্রুটি রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষকের কথায়, “বিজ্ঞান বিষয়ে একাধিক ত্রুটি রয়েছে। বিশেষত, পরীক্ষাগারের পরীক্ষাগারের তেমন উন্নতি ঘটেনি। কিছু ক্ষেত্রে বিভিন্ন গবেষণায় ব্যয় বহুল রি এজেন্ট প্রয়োজন হয়। তা চাইলে বলা হয়, এগুলি কি না করালেই নয়। বাধ্য হয়ে মেনে নিতে হয়। ফলে ছাত্রছাত্রীদের কিছু বিষয় অজানাই থেকে যায়।’’

এই পরিস্থিতিতে তাই জোর দেওয়া হচ্ছে শিক্ষকদের মূল্যায়নে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক স্বদেশ সরকারের অভিযোগ, ‘‘কর্তৃপক্ষের যেমন পঠনপাঠনের বিষয়ে আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত তেমনই শিক্ষকদের মূল্যায়নও জরুরি। কারণ, বেশ কয়েকটি বিভাগে শিক্ষকদের দুপুর তিনটের পর দেখা মেলে না। দু’টি বিষয়ই গুরুত্ব দিয়ে না দেখা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মানোন্নয়ন সম্ভব নয়।’’

শিক্ষকদের মূল্যায়ন কী ভাবে করবেন ছাত্রছাত্রীরা। তার জন্য ১১টি মাপকাঠির একটি তালিকা তৈরি করে দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ছাপানো সেই তালিকাটি ছাত্রছাত্রীদের দেওয়া হচ্ছে। যেখানে শিক্ষকেরা নিয়মিত ক্লাস করেন কিনা, ছাত্রছাত্রীদের কেমন উত্সাহ দেন, তাঁর পড়ানোর পদ্ধতি, গুণগত মান কেমন, পরীক্ষা নেন কিনা, উত্তরপত্র যাচাই করে নির্দিষ্ট সময়ই দেন কিনা— সব বিষয়ই রয়েছে। রয়েছে চার ধরনের মান। এক্সেলেন্ট, খুব ভাল, ভাল এবং গড়। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, মূল্যায়নের পর প্রতিটি শিক্ষককে তা জানানো হবে। যাঁর যেখানে ত্রুটি বিচ্যুতি থাকবে তাঁরা তা সংশোধন করে নেবেন। তারপরেও যদি ত্রুটি থাকে? কর্তৃপক্ষের দাবি, শিক্ষকেরা নিজেদের ভুল শুধরে নেবেন বলেই আশা। কেউ তা না করলে এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলে জানানো হবে। কাউন্সিল সিদ্ধান্ত নেবে, সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হবে কিনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন