ফসল বাঁচাতে প্রাণ গেল চাষির

মেদিনীপুরের ডিএফও সন্দীপ বেরওয়াল বলেন, ‘‘হাতির হানায় মৃত্যুর ঘটনা দুঃখজনক। ওই এলাকা থেকে হাতি তাড়ানোর সব রকম চেষ্টা চলছে।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শালবনি শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২০ ০৬:৪০
Share:

প্রতীকী ছবি।

হাতির পাল এসেছে। শনিবার রাতে এ খবর শুনে ফসল বাঁচাতে রাতেই খেতে গিয়েছিলেন অমল ঘোষ। হাতির হানায় প্রাণ গেল বছর বাহান্নর ওই কৃষকের। রবিবার সকালে খেত থেকে অমলের ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়েছে। তাঁকে শুঁড় দিয়ে তুলে আছাড় মেরেছে হাতি। পা দিয়ে পিষেও দিয়েছে। ঘটনা পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনির বিষ্ণুপুরের। এ নিয়ে চলতি মাসেই পশ্চিম মেদিনীপুরে হাতির হানায় পাঁচ জনের মৃত্যু হল।

Advertisement

মেদিনীপুরের ডিএফও সন্দীপ বেরওয়াল বলেন, ‘‘হাতির হানায় মৃত্যুর ঘটনা দুঃখজনক। ওই এলাকা থেকে হাতি তাড়ানোর সব রকম চেষ্টা চলছে।’’ বনকর্মীরা জানাচ্ছেন, স্থানীয়েরা যাতে কোনও ভাবে হাতির পালকে উত্তেজিত না করেন সে জন্য বাসিন্দাদের সতর্ক করা হচ্ছে। সতর্কতা হিসাবে প্রচারও করা হচ্ছে। তা-ও অনেকে সেই সতর্কতায় আমল দিচ্ছেন না। বন দফতর জানিয়েছে, নিয়মানুযায়ী মৃতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এ দিন সকালে মৃত অমলের বাড়িতে গিয়েছিলেন শালবনির বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতো। মৃতের পরিজনেদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি। শ্রীকান্ত বলছিলেন, ‘‘ক্ষতিপূরণটা তো বড় ব্যাপার নয়। প্রাণটাই তো চলে গেল।’’ এদিন সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের ক্ষোভের মুখে পড়েন বনকর্মীরা। অশান্তির খবর পেয়ে পুলিশ যায়।

শালবনির ওই এলাকায় দিন কয়েক ধরেই হাতির পাল রয়েছে। এখন খেতে আলু রয়েছে। শনিবার রাতে বিষ্ণুপুরের খেতে হানা দেয় হাতির পাল। খবর পেয়ে ফসল বাঁচাতে গ্রামের কয়েকজন খেতে যান। ওই দলে অমলও ছিলেন। ফসল বাঁচাতে ছুটোছুটি শুরু হয়েছিল। মশাল জ্বালিয়ে, শব্দ করেও হাতির পাল সরছিল না। আচমকা হাতির পাল গ্রামবাসীদের তাড়া করে। অন্যরা পালিয়ে গেলেও অমল খেতের আলের কাছে পা পিছলে পড়ে যান। এরপরই হাতি তাঁর উপর হামলা চালায়। তাঁকে শুঁড়ে তুলে আছাড় মারে। পা দিয়ে পিষে ক্ষতবিক্ষত করে।

Advertisement

চারদিনের মধ্যে হাতির হানায় তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনির জঙ্গল লাগায়ো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। অধিকাংশ প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে ভোর, সন্ধ্যা অথবা রাতের দিকে। এ দিনও বিভিন্ন এলাকায় হাতি ছড়িয়ে থেকেছে। বন দফতর সূত্রে খবর, এদিন মেদিনীপুর রেঞ্জের পাঁজাশোলে ৪টি হাতি ছিল, চাঁদড়া রেঞ্জের বালিচূড়াতে ১টি, পিড়াকাটা রেঞ্জের জোড়াকুশমিতে ৩০- ৩৫টি, ভাঙাবাঁধে ১০- ১২টি, ভাদুতলা রেঞ্জের খাসজঙ্গলে ১টি, আড়াবাড়ি রেঞ্জের বুড়িশোলে ৭- ৮টি, জোড়াকেউদিতে ১০- ১২টি, টুঙিতে ৪- ৫টি, চন্দ্রকোনা রেঞ্জের পানশিউলিতে ১৫- ১৬টি, নয়াবসত রেঞ্জের উখলায় ১টি হাতি ছিল। ওই সূত্রের খবর, হাতির দল ধীরে ধীরে এলাকা পাল্টাচ্ছে। দফতরের আশ্বাস, ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। মেদিনীপুরের ডিএফও সন্দীপ বলেন, ‘‘হাতির দলের গতিবিধির উপরে নজর রাখা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন