হাতেগোনা কেন্দ্র, ফড়ে কিনছে ধান

স্থানীয় সূত্রের খবর, ১৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা নিয়ে গঠিত পাঁশকুড়া ব্লক। ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে মেচগ্রাম মোড় থেকে দক্ষিণে কিছুটা এগলেই রয়েছে পাঁশকুড়া কৃষক বাজার। এখানেই পাঁশকুড়া ব্লকের কৃষকদের কাছ থেকে সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান কেনা হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৯ ০১:৫৩
Share:

পাঁশকুড়া কৃষক বাজার। নিজস্ব চিত্র

প্রতি বছরের মতোই সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান কেনা শুরু হয়েছে জেলায়। আর প্রতি বছরের মতো এ বছরও সরকারি ধান ক্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানোর দাবিতে সরব হয়েছেন জেলার কৃষকেরা। তাঁদের দাবি, ব্লক পিছু স্থায়ী সরকারি ক্রয় কেন্দ্র বাড়ানো হোক বা ধান কেনার একাধিক অস্থায়ী শিবির করা হোক। তা না হলে দূরত্বের কারণে তাঁরা ফড়েদের কাছে অল্প দামে ধান বিক্রি করতে এক প্রকার বাধ্যই হচ্ছেন।

Advertisement

পাঁশকুড়া এবং কোলাঘাট এলাকার কৃষকদের অভিযোগ, তাঁদের এলাকায় ব্লক পিছু একটি করে ধান ক্রয় কেন্দ্র রয়েছে। ফলে ব্লকের বহু কৃষক ইচ্ছে থাকলেও দূরত্বের কারণে ওই কেন্দ্রগুলিতে আসতে পারছেন না। পাশাপাশি, কৃষকেরা জানাচ্ছেন, আমন ও বোরো— দুই মরসুমেই এলাকায় ধান চাষ হয়। তাই বছরে দু’বার ধান ওঠার সময় এলাকায় সরকারি উদ্যোগে ধান কেনার অস্থায়ী ক্যাম্প করার দাবি করেছেন তাঁরা।

স্থানীয় সূত্রের খবর, ১৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা নিয়ে গঠিত পাঁশকুড়া ব্লক। ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে মেচগ্রাম মোড় থেকে দক্ষিণে কিছুটা এগলেই রয়েছে পাঁশকুড়া কৃষক বাজার। এখানেই পাঁশকুড়া ব্লকের কৃষকদের কাছ থেকে সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান কেনা হয়। ব্লকের চৈতন্যপুর-১ এবং ২, ঘোষপুর, হাউর এলাকাগুলি কৃষি প্রধান বলে পরিচিত। পাঁশকুড়া কৃষক বাজার থেকে ওই এলাকগুলি গড়ে ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ফলে বাজার সংলগ্ন এলাকার কৃষকেরা সেখানে ধান বিক্রি করতে আসতে পারলেও কৃষি প্রধান এলাকাগুলির ক্ষুদ্র চাষিরা আসতে পারেন না কেন্দ্রে।

Advertisement

সমীর সামন্ত নামে ঘোষপুর এলাকার এক কৃষক বলেন, ‘‘১৫ কাঠা জমিতে ধান চাষ করি। পাঁশকুড়া কৃষক বাজার থেকে আমার বাড়ি প্রায় ১৫ কিলোমিটার। চার-পাঁচ বস্তা ধান সরকারি ধান ক্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যেতে গেলে যে খরচ হবে, তাতে লাভের মুখ দেখব না।’’ হাউরের আমদান গ্রামের কৃষক বিদ্যুৎ সামন্ত বলেন, ‘‘আমার বাড়ি থেকে পাঁশকুড়া কৃষক বাজারের দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার। গাড়ি করে ধান নিয়ে যেতে খরচ হয়। তাই আমরা বাধ্য হয়ে ফড়েদের কাছে অল্প দামে ধান বিক্রি করে দিই।’’ এলাকার কৃষকেরা জানাচ্ছেন, স্থানীয় ফড়েরা বাড়ি থেকে দেড় হাজার টাকা কুইন্ট্যাল দরে ধান কিনে নেয়। যেখানে সরকারি সহায়ক মূল্যে চাষিদের দেওয়া হয় এক হাজার ৮৩৫ টাকা।

একই অভিযোগ কোলাঘাট এলাকার কৃষকদেরও। কোলাঘাট ব্লকে রয়েছে ১৩ টি গ্রাম পঞ্চায়েত। ব্লকের সাগরবাড় গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার পদমপুরে রয়েছে সরকারি স্থায়ী ধান ক্রয় কেন্দ্র। এখান থেকে ব্লকের বৈষ্ণবচক, বৃন্দাবনচক এলাকার দূরত্ব ১০ থেকে ২০ কিলোমিটার। ব্লকের দেড়িয়াচক এলাকার দুরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। অথচ ওই এলাকাগুলিতে প্রচুর ধান উৎপন্ন হয়। দূরত্ব ছাড়াও সরকারি ধান ক্রয় কেন্দ্রে ধান বিক্রির আরও কিছু সমস্যার কথা জানিয়েছেন ওই এলাকার কৃষকেরা।

সরকারি কেন্দ্রে ধান বিক্রি করতে এলে আর্দ্রতা মাপক যন্ত্র দিয়ে ধানের আর্দ্রতা মাপা হয়। ধানের আর্দ্রতা যত শতাংশ হয়, কুইন্ট্যাল প্রতি তত শতাংশ ধানের ওজন খাত হিসেবে বাদ দেওয়া হয়। কৃষকদের অভিযোগ, অধিকাংশ ক্ষেত্রে আর্দ্রতা মাপক যন্ত্র ব্যবহার না করেই সরকারি ধান ক্রয় কেন্দ্রে কৃষকদের কুইন্টাল প্রতি ধানে তিন থেকে পাঁচ কিলোগ্রাম খাত হিসেবে বাদ দেওয়া হয়। আরও অভিযোগ, যে বস্তায় করে কৃষকরা ধান নিয়ে আসেন, কেন্দ্রে থেকে সেই বস্তা আর ফেরত দেওয়া হয় না। কৃষকদের দাবি, এক একটি বস্তা বাজার থেকে কিনতে খরচ পড় সাত থেকে ১০ টাকা। ফলে এই দুই ক্ষেত্রেও ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁদের।

কৃষক সংগ্রাম পরিষদের সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র নায়েক বলেন, ‘‘সরকারের উচিত বছরে দু-বার ধান ওঠার সময় ধান বেশি উৎপন্ন হয় এমন এলাকায় অস্থায়ী শিবির করা। আর আর্দ্রতা না মেপেই কুইন্ট্যাল প্রতি তিন-পাঁচ কিলোগ্রাম ধানের ওজন বাদ দেওয়া অনৈতিক। এতে কৃষকদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।’’

চাষিদের দাবি-অভিযোগ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘‘গত বছর থেকে স্থায়ী ধান ক্রয় কেন্দ্র ছাড়াও সমবায় এবং স্বসহায়ক দলগুলির মাধ্যেম ধান কেনা হয়েছে। এ বছর সে জন্য মুখ্যমন্ত্রীর তরফে আগাম টাকাও বরাদ্দ হয়েছে। আশা করছি এ বছর আমরা ব্যপক ভাবে তৃণমূল স্তরে পৌঁছে যাব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement