প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে কোনও মৌজার ৫০ শতাংশের বেশি ফসলের ক্ষতি হলে এতদিন সেখানকার কৃষকদের সার, বীজ, কীটনাশক দিয়ে সাহায্য করা হত। কিন্তু এ বার থেকে তার পরিবর্তে নগদ অর্থ দিয়ে সাহায্য করা হবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের। আর ৫০শতাংশ নয়, ৩৩ শতাংশের বেশি ফসলের ক্ষতি হলেই কোনও মৌজাকে ক্ষতিগ্রস্ত হিসাবে চিহ্নিত করা হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র দফতর (ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ডিভিশন) গত ৮ এপ্রিল এই সংক্রান্ত নির্দেশিকা পাঠিয়েছে। চলতি মাস থেকেই তা কার্যকর হয়েছে।
পূর্ব মেদিনীপুরের উপকৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) সুশান্ত মহাপাত্র জানান, এত দিন প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোনও মৌজায় ৫০ শতাংশের বেশি ফসলের ক্ষতি হলে তাকে ক্ষতিগ্রস্ত মৌজা বলে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হত। ওই মৌজার কৃষকেরা যাতে পরবর্তী চাষ ভাল ভাবে করতে পারেন, সে জন্য বীজ, সার, কীটনাশক দেওয়া হত। স্বল্প মেয়াদি কৃষি ঋণ দীর্ঘ মেয়াদি করার ব্যবস্থাও হত। কিন্তু কেন্দ্রের নতুন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কোনও মৌজায় ৩৩ শতাংশের বেশি ফসলের ক্ষতি হলেই সেখানকার কৃষকদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। আর তা দেওয়া হবে চেকে।
জেলা কৃষিদফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে বৃষ্টি নির্ভর এলাকায় চাষের ক্ষতি হলে হেক্টর পিছু ৬৮,০০ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। সেচ সেবিত এলাকার চাষের ক্ষতি হলে হেক্টর পিছু ১৩,৫০০টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে ন্যূনতম এক হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। তা ছাড়া, পান বরোজ, আম বাগান-সহ অন্য বহু বছরি চাষে ক্ষতি হলে হেক্টর পিছু ১৮ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ন্যূনতম ২ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
মহিষাদলের ব্লক সহ-কৃষি অধিকর্তা মৃণালকান্তি বেরার মতে, ক্ষতিপূরণের নতুন নিয়মে কৃষকদের আরও সুবিধা হবে। কারণ, অনেক সময় দেখা যায় কৃষি দফতর থেকে যে ফসলের বীজ দেওয়া হচ্ছে তা চাষে কৃষক আগ্রহী নন। আর্থিক ক্ষতিপূরণ পেলে কৃষকেরা পছন্দমতো চাষে তা খরচ করতে পারবেন। মহিষাদলের এক্তারপুরের কৃষক স্বপন দাসেরও মত, নতুন নিয়মে সরকার ক্ষতিপূরণ দিলে চাষিদের উপকার হবে। তবে মহিষাদলের কেশবপুরের কৃষক নিশিকান্ত মাইতি বলেন, ‘‘শুধু নিয়ম করলে হবে না, তাকে বাস্তবায়িতও করতে হবে। এর আগে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ৫০ শতাংশের বেশি ফসলের ক্ষতি হলেও সরকারি সুযোগ পাইনি।’’