জীবিকা বাঁচাতে ড্রেজিংয়ের দাবি মৎস্যজীবীদের, জাতীয় সড়ক অবরোধে হয়রানি

জেলা প্রশাসন ও মৎস্যজীবী সংগঠনের তরফে জানা গিয়েছে, গত ২০ অগস্ট দিঘায় প্রশাসনিক বৈঠকে শঙ্করপুর মৎস্যবন্দরের সঙ্কট নিয়ে সরব হয়েছিলেন দিঘা ফিশারমেন অ্যান্ড ফিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রণব কর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রামনগর শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৯ ০১:৫৬
Share:

জাতীয় সড়কে অবস্থান বিক্ষোভ। রামনগরে। নিজস্ব চিত্র

মৎস্যজীবীদের স্বার্থ সুরক্ষিত করার দাবিতে বন্দরের আন্দোলন গড়াল জাতীয় সড়ক পর্যন্ত।

Advertisement

দিঘার শঙ্করপুর মৎস্যবন্দরকে সচল করার দাবিতে বুধবার সকালে রামনগরে দিঘা-নন্দকুমার ১১৬ বি জাতীয় সড়কে গণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করলেন কয়েক হাজার মৎস্যজীবী। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি হলেও কাজের দিনে ব্যস্ত সময়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে অবরুদ্ধ হয়ে থাকল জাতীয় সড়ক। সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত অবরোধের জেরে যানজটে পড়ে দুর্ভোগ পোহাতে হল স্কুল-কলেজের পড়ুয়া থেকে সাধারণ মাননুষকে।

জেলা প্রশাসন ও মৎস্যজীবী সংগঠনের তরফে জানা গিয়েছে, গত ২০ অগস্ট দিঘায় প্রশাসনিক বৈঠকে শঙ্করপুর মৎস্যবন্দরের সঙ্কট নিয়ে সরব হয়েছিলেন দিঘা ফিশারমেন অ্যান্ড ফিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রণব কর। তড়িঘড়ি মুখ্যসচিবকে শঙ্করপুর মৎস্যবন্দর সংলগ্ন খাল ড্রেজিং করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যসচিব সেই সময় জানিয়েছিলেন শঙ্করপুর খাল ড্রেজিংয়ের জন্য ২৫ কোটি টাকার একটি প্রস্তাব অর্থমন্ত্রকে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু নভেম্বর মাস শেষ হতে চললেও সেই সেই ড্রেজিং শুরু হয়নি বলে অভিযোগ মৎস্যজীবীদের। এর ফলে ধুঁকতে বসেছে রাজ্যের অন্যতম বৃহৎ ওই মৎস্য বন্দর।

Advertisement

এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক এবং শঙ্করপুর ফিশারমেন অ্যান্ড ফিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক স্বদেশ নায়কের দাবি, ‘‘খালের নাব্যতা একেবারেই কমে গিয়েছে। এর ফলে চলতি বছর দুটি ট্রলারের ক্ষতি হয়েছে। তা ছাড়া যাতায়াতে অসুবিধে হওয়ায় মাছের ট্রলারগুলি দেশপ্রাণ ব্লকের পেটুয়া কিংবা প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশার ধামরায় চলে যাচ্ছে। সে জন্য মৎস্য আহরণ এবং আনুষঙ্গিক কাজকর্মে যুক্ত এখানকার কয়েক হাজার লোকের জীবন-জীবিকা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।’’

মৎস্যজীবী সংগঠনগুলির দাবি, প্রতি বছর সামুদ্রিক মাছ রফতানি করে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে রাজ্য সরকার। তা সত্ত্বেও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই মৎস্যবন্দর নিয়ে এতটুকু মাথাব্যথা নেই প্রশাসনের। এদিন তাই এই সব দাবি অবিলম্বে পূরণের জন্য শঙ্করপুরের মৎস্যজীবীদের পাশে দাঁড়িয়ে গণঅবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেন দিঘার মৎস্য ব্যবসায়ীরাও। দিঘা ফিশারমেন অ্যান্ড ফিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শ্যামসুন্দর দাস বলেন, ‘‘সম্প্রতি রাজ্যের মুখ্য সচিবের সঙ্গে দেখা করে শঙ্করপুর মৎস্যবন্দর নিয়ে যে কথা জানতে পেরেছি তা খুবই আশঙ্কার। শঙ্করপুর মৎস্যবন্দরে ড্রেজিংয়ের জন্য যে টাকা প্রয়োজন তা রাজ্য সরকার দিতে পারবে না বলে জানিয়েছে। এ ব্যাপারে তারা কেন্দ্রের কাথে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। কিন্তু কেন্দ্র সেই প্রস্তাবে কবে অনুমোদন দেবে তার কোনও তথ্য জানা নেই প্রশাসনিক আধিকারিকদের কাছে।’’

এ দিন সকলা ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচির জেরে রামনগরে জাতীয় সড়কের দু‘দিকে প্রচুর গাড়ি আটকে পড়ে। সাধারণ যাত্রীদের পাশাপাশি আটকে পড়েন পর্যটকেরা। অবস্থানকারীদের জাতীয় সড়ক থেকে সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা হলে, মৎসজীবীদের সঙ্গে পুলিশের বচসা ও ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়ে যায়। ঘটনাস্থলে যান রামনগর-১ এর বিডিও আশিস কুমার রায়। মৎস্যজীবীদের দাবি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হবে বলে বিডিও আশ্বাস দেওয়ার পর অবস্থান তুলে নেওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন