ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়িত হলে বদলাবে এই ছবি। —ফাইল চিত্র।
রূপায়ণের দিকে এক ধাপ এগোল বন্যা প্রতিরোধে তৈরি ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান। সম্প্রতি এই প্রকল্পে ছাড়পত্র দিয়েছে ‘গঙ্গা ফ্লাড কন্ট্রোল কমিশন’ (জিএফসি) এবং কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রকের টেকনিক্যাল কমিটি। ফলে, কাজ শুরুর জন্য বাকি রইল শুধু কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের অনুমোদন। রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যপাধ্যায় বলেন, “আমরা প্রস্তুত রয়েছি। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক অনুমোদন দিলেই কাজ শুরু হবে।”
পশ্চিম মেদিনীপুরের সম্পন্ন জনপদ ঘাটাল আর বন্যা কার্যত সমার্থক। প্রতি বর্ষায় শিলাবতী নদীর দুকূল ছাপিয়ে বানভাসি হয় মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা। স্থায়ী ভাবে বন্যা নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা নিয়েই ১৯৫৯ সালে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান তৈরি হয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদন পেতেই লেগে যায় দু’দশক। ১৯৮০ সালে সেই অনুমোদন পাওয়ার পরে ১৯৮২-তে ঘাটাল শহরের শিলাবতী নদীর ধারে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের সূচনা হয়। তখন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছিল ৫০ কোটি টাকা। প্রাথমিক ভাবে ৩০ লক্ষ বরাদ্দও হয়েছিল।
এরপর শিলাবতী দিয়ে বহু জল গড়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু বন্যা প্রতিরোধ প্রকল্পের কাজ আর সে ভাবে শুরু হয়নি। অথচ প্রতি বারই ভোটের সময় রাজনৈতিক দলগুলি দ্রুত এই প্রকল্প রূপায়ণের আশ্বাস দিয়েছে। এলাকাবাসীও ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ সংগ্রাম কমিটি’ গড়ে আন্দোলনে নেমেছেন। দাবি পূরণে পথ অবরোধ, ধর্না, বিক্ষোভ থেকে ভোট বয়কট সবই হয়েছে। কিন্তু সুরাহা হয়নি।
ঠান্ডা ঘরে চলে যাওয়া এই প্রকল্প নিয়ে ২০০৬ সাল থেকে ফের নাড়াচাড়া শুরু হয়। ২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি সংস্থা প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরি শুরু করে। সব মিলিয়ে ব্যয় ধরা হয় ১৭৪০ কোটি টাকা। ২০১০ সালে পটনায় জিএফসির সদর দফতরে প্রথম ডিপিআর জমা পড়ে। তাতে ত্রুটি থাকায় ফের কিছু তথ্য জানতে চান কমিশনের বিশেষজ্ঞরা। ২০১২ সালে রাজ্য সরকার ডিপিআরের সংশোধনের কাজ শুরু করে। এ বার খড়্গপুর আইআইটি-র সাহায্য নেওয়া হয়। ২০১৩ সালে সংশোধিত ডিপিআর জিএফসিতে জমা দেয় রাজ্য সরকার। গত বছরই জিএফসি এই প্রকল্পের মোট ব্যয়কে দু’ভাগে ভাগ করার নির্দেশ দেয়। তারপর গত ফেব্রুয়ারিতে প্রথম দফায় ১২১৪ কোটি ৯২ লক্ষ টাকার প্রকল্প রিপোর্ট জমা দেয় রাজ্য সরকার। সম্প্রতি সেটিরই ছাড়পত্র দিয়েছে জিএফসি। এ বার পালা অর্থ বরাদ্দের।
আগের নিয়ম অনুযায়ী মাস্টার প্ল্যানের ক্ষেত্রে কেন্দ্র ৭৫ শতাংশ এবং রাজ্য বাকি ২৫ শতাংশ অর্থ দেয়। কিন্তু নতুন নিয়মে কেন্দ্র ও রাজ্য দুই সরকারেরই ৫০ শতাংশ করে টাকা দেওয়ার কথা। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান পুরনো প্রকল্প হলেও এ ক্ষেত্রে নতুন নিয়মেই যাতে টাকা বরাদ্দ হয়, রাজ্যের সেচ দফতরের তরফে কেন্দ্রকে সেই অনুরোধ করা হয়েছে।
প্রকল্প রূপায়িত হলে দুই মেদিনীপুর জেলার ১২টি ব্লকের ১৭ লক্ষ মানুষ উপকৃত হবেন। এই প্রকল্পে শিলাবতী, কংসাবতী, দুবাচটি, কাঁখি, পলাশপাই, ক্ষীরাই, চন্দ্রেশ্বর প্রভৃতি ছোট-বড় নদীগুলির পলি তুলে নাব্যতা বাড়ানো হবে। বানভাসি এলাকার খাল, দিঘিগুলিও সংস্কার করা হবে। জমা জল বের করার জন্য বড় দু’টি পাম্প হাউস, তিনটি লকগেট, চারটি বড় সেতু তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে।
জিএফসি-র ছাড়পত্র পাওয়ায় এলাকাবাসী খুশি। ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ সংগ্রাম কমিটি’র পক্ষে নারায়ণ নায়েক বলেন, “আমাদের বহু আন্দোলনের ফসল এই ছাড়পত্র। আমরা চাই চলতি অর্থবর্ষ থেকেই কাজ শুরু হোক।’’