শিলা ফলকেই থমকে ফুল-ফল প্রক্রিয়াকরণ

জমির এককোণে কংক্রিটের লাল বেদী। তাতেই সাঁটানো শিলা ফলক। রোদে-বৃষ্টিতে শিলা ফলকের রং ফিকে হয়ে গিয়েছে। তার ছবি তুলছি দেখে থমকে দাঁড়ালেন এক ফুলচাষি। বললেন, “দশ বছর ধরে ফলকটা দেখছি। এতদিনে তো কাজ কিছু হয়নি!”

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৭ ০২:২৯
Share:

নিষ্ফলা: শিলান্যাস হলেও কাজ এগোয়নি ডেবরায়। নিজস্ব চিত্র

জমির এককোণে কংক্রিটের লাল বেদী। তাতেই সাঁটানো শিলা ফলক। রোদে-বৃষ্টিতে শিলা ফলকের রং ফিকে হয়ে গিয়েছে। তার ছবি তুলছি দেখে থমকে দাঁড়ালেন এক ফুলচাষি। বললেন, “দশ বছর ধরে ফলকটা দেখছি। এতদিনে তো কাজ কিছু হয়নি!”

Advertisement

ফলকের আবছা লেখা বলছে, ডেবরার আলিশাহগড়ে ২০০৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর শিলান্যাস হয়েছিল ফুল ও ফলের প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্পের। সেই সময় বলা হয়েছিল, প্রকল্প চালু হলে ব্লকের চাষিরা ফুল-ফল সংরক্ষণ করতে পারবেন। জ্যাম, জেলি, আচার, সুগন্ধি, রং তৈরি করে স্বনির্ভর হওয়ার রাস্তাও খুলবে। দশটা বছর কেটে গিয়েছে। এখন এ সব ডেবরাবাসীর কাছে অতীত। প্রকল্পের জন্য পাট্টার জমি খাস করা হলেও সেখানে গড়ে তোলা হচ্ছে ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কার্যালয়।

২০০৩-’০৪ সালে ডেবরায় যখন ফুলের চাষ বাড়ছে, উদ্যোগ শুরু হয়েছিল তখনই। কেন্দ্রীয় প্রকল্প স্বর্ণজয়ন্তী গ্রামীন স্বরোজগার যোজনার টাকায় এই প্রকল্প গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তৎকালীন বাম সরকার। সেই মতো আলিশাহগড়ে তদানীন্তন সাংসদ গুরুদাস দাশগুপ্ত ও মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষ ফুল ও ফলের প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্পের শিলান্যাস করেছিলেন। তার পরের বছর এসেছিল প্রায় ৪ কোটি টাকা। প্রকল্প রূপায়ণে স্থানীয় ৪জনের পাট্টাজমি খাসও করা হয়েছিল। আর কাজ এগোয়নি।

Advertisement

রাজ্যে পালাবদলের পরে কয়েকদিন ফাইল নাড়াচাড়া হলেও আর কিছু হয়নি। মাস কয়েক হল ওই জমিতে ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের ভবন তৈরি শুরু হয়েছে। যা দেখে স্থানীয় ফুলচাষি কমল লায়েক বলছিলেন, “প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্পটা হলে আমরা খুব উপকৃত হতাম। এখন এই ফলকের সামনে দাঁড়ালে শুধু আক্ষেপ হয়।”

ডেবরার অর্থনীতি দাঁড়িয়ে রয়েছে ফুলচাষের উপরে। কিন্তু তা সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণের যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় লোকসানের মুখে পড়তে হয় ফুলচাষিদের। স্থানীয় বড়াগরের ফুলচাষি সুকুমার দিন্দা বলছিলেন, “ব্লকে এখন প্রায় পাঁচ হাজার গাঁদাফুল ও তিন হাজার রজনীগন্ধার চাষি। ফুল পচনশীল হওয়ায় লোকসানের বহর বাড়ে।” ডেবরা কৃষি উন্নয়ন সমিতির কর্মকর্তা পৃথ্বীশ ভট্টাচার্যের কথায়, “শুধু উদাসীনতায় এমন উপযোগী একটা প্রকল্প হিমঘরে চলে গিয়েছে।”

এই পরিস্থিতির জন্য শুরু হয়েছে দায় ঠেলাঠেলি। তৃণমূলের ডেবরা কোর কমিটির সদস্য রতন দে-র দাবি, “বাম আমলে উদ্যোগের অভাবে প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি। পরে আমরা চেষ্টা করেও সফল হতে পারিনি।” আর সিপিএমের ডেবরা জোনাল সম্পাদক প্রাণকৃষ্ণ মণ্ডলের বক্তব্য, “আমাদের আমলেই প্রকল্প গড়ার চেষ্টা হয়েছিল। কাজ অনেকখানি এগিয়েও ছিল। তৃণমূলের সরকারে আসার পরে সব ধামাচাপা পড়ে গিয়েছে।” জেলা কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতি বলেন, “ওই প্রকল্পের সঙ্গে সবংয়ের মাদুর সংরক্ষণ প্রকল্পের টাকা এসেছিল। আমি সম্প্রতি দু’টি প্রকল্প নিয়েই গ্রামোন্নয়ন দফতরের প্রধান সচিবকে চিঠি দিয়েছি।” প্রকল্পের বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন ডেবরার বিডিও ললিত সেন। আর প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্বে থাকা জেলা গ্রামোন্নয়ন সেলের প্রকল্প অধিকর্তা নিবেদিতা রায় বলেন, “সংশ্লিষ্ট দফতরে আবেদন করেছি। তবে এখনও সাড়া মেলেনি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন