হাতিকে উত্ত্যক্ত করে বেঘোরে যাচ্ছে প্রাণ

ঘটনার পর্যালোচনায় বন দফতর দেখেছে, এ ক্ষেত্রেও কয়েকজন গ্রামবাসী হাতিকে উত্ত্যক্ত করেছিলেন। পরে হাতি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তাড়া করে। তাড়া খেয়ে ছুট দেন অন্যরা। পড়ে যান ওই যুবক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:০৪
Share:

দাঁতাল: প্রচারেও ফেরেনি সচেতনতা। চন্দ্রকোনার পানশিউলির তেঁতুল বাঁধে ফের উত্ত্যক্ত করা হচ্ছে হাতিকে। বুধবার। ছবি: কৌশিক সাঁতরা

হাতিকে উত্ত্যক্ত করতে গিয়ে আগেও গিয়েছে প্রাণ। মঙ্গলবার শালবনির গোয়ালডিহিতে হাতির হানায় এক যুবকের মৃত্যু হয়। ঘটনার পর্যালোচনায় বন দফতর দেখেছে, এ ক্ষেত্রেও কয়েকজন গ্রামবাসী হাতিকে উত্ত্যক্ত করেছিলেন। পরে হাতি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তাড়া করে। তাড়া খেয়ে ছুট দেন অন্যরা। পড়ে যান ওই যুবক। হাতি তাঁকে পায়ে পিষে মারে। এমন ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে বন দফতরের।

Advertisement

মেদিনীপুরের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা মানছেন, ‘‘শালবনির ঘটনার ক্ষেত্রেও কয়েকজন হাতিকে উত্ত্যক্ত করেছেন।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমরা গ্রামবাসীদের বারবার বোঝাচ্ছি, হাতির পালের কাছে যাবেন না। গেলেই বিপদ। অনেকে শুনছেন। আবার কেউ কেউ শুনছেন না। ফলে, অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটছে।’’

গত এপ্রিল থেকে এই নিয়ে বন দফতরের মেদিনীপুর ডিভিশনে ১০ জন মারা গেলেন হাতির হানায়। বন দফতরের দাবি, অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনায় দেখা গিয়েছে, এই ১০জনের মধ্যে ২ জন হাতিকে উত্ত্যক্ত করেননি। তাঁরা আচমকাই হাতির মুখে পড়ে যান। কোনও কিছু বোঝার আগেই হাতি তাঁদের পায়ে পিষে মারে। তবে ৮ জন জেনেবুঝেই হাতির দলের কাছে গিয়েছিলেন। কেউ নিজে থেকেই হাতিকে উত্ত্যক্ত করেছেন। কেউ বা যাঁরা উত্ত্যক্ত করেছেন, তাঁদের সঙ্গে ছিলেন। পরে হাতির তাড়া খেয়ে পড়ে যান। পালাতে পারেননি। হাতি এসে পায়ে পিষে দেয়। শালবনির ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়েছে।

Advertisement

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হাতির হানায় মৃত্যু হয়েছে বছর বত্রিশের উত্তম সিংহের। বাড়ি জাড়ায়। গোয়ালডিহিতে হাতির দল ছিল। উত্তম সেখানে গিয়েছিলেন। বন দফতর সূত্রে খবর, এখন পশ্চিম মেদিনীপুরে ১১০-১১৫টি হাতি রয়েছে। মেদিনীপুর ডিভিশনেই ৭০-৭৫টি হাতি রয়েছে। খড়্গপুর ডিভিশনে ২৫-৩০টি হাতি রয়েছে। সবই দলমার। ওড়িশা হয়ে ফের পশ্চিম মেদিনীপুরে ঢুকে পড়েছে। ফেরার কথা ঝাড়খণ্ডে। তবে সহজে সেই মুখো হচ্ছে না। হাতি নিয়ে এখন ল্যাজেগোবরে অবস্থা বনকর্মীদের। ইতিমধ্যে হাতির হানায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অনেক ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বেশ কিছু বাড়ি ভেঙেছে। ক্ষয়ক্ষতি বেড়ে চলায় ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা। বিভিন্ন এলাকায় সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। হামলার মুখে পড়ছেন বনকর্মীরা।

কেমন? স্থানীয় সূত্রে খবর, বুধবার রাতে মেদিনীপুর গ্রামীণের পলাশিয়ায় হুলাপার্টির একজনের উপর হামলা হয়। তাঁর উপর চড়াও হন কয়েকজন গ্রামবাসী। জখম যুবককে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, হুলাপার্টি হাতি তাড়ানোর কাজ ঠিকঠাক করছে না। মেদিনীপুরের ডিএফও অবশ্য বলেন, ‘‘হাতির দলের গতিবিধির উপর নজর রাখা হয়েছে। এলাকা থেকে হাতি তাড়ানোর সব রকম চেষ্টাও চলছে।’’

বনকর্মীদের দাবি, গ্রামবাসীদের কেউ কেউ কোথাও হাতিকে লক্ষ্য করে ঢিল ছুঁড়ছেন। কোথাও আবার কাছে গিয়ে নিজস্বী তুলছেন। মেদিনীপুরের এক বনকর্তা বলেন, ‘‘হাতির পালকে খেপিয়ে তুলতে গিয়ে আক্রান্ত হওয়া স্বাভাবিক। সাম্প্রতিককালে ঘটে যাওয়া প্রায় প্রতিটি ঘটনা সেই দিকেই ইঙ্গিত করছে।’’

মেদিনীপুরের ডিএফও বলেন, ‘‘গ্রামবাসীদের সচেতন করতে মাইকে প্রচার করা হচ্ছে। এ দিনও মাইকে প্রচার হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন