‘ক্যাপ্টেন’ নেই, হিমশিম দল

শনিবার সকালে মেদিনীপুর গ্রামীণের নেপুরা থেকে দু’টি পূর্ণবয়স্ক হাতির দেহ উদ্ধার হয়। বিদ্যুৎস্পষ্ট হয়ে মারা যায় হাতি দু’টি। বন দফতরের এক সূত্রে খবর, যে ৪০-৪৫টি হাতির যে দল এই তল্লাটে ছিল, সেই দলে বয়স্ক হাতি ছিল এরাই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:১৯
Share:

টনক: ঝুলে থাকা তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গিয়েছিল দু’টি হাতি (বাঁ দিকে)। তড়িঘড়ি বিপজ্জনক তার উঁচু করে দেওয়া হল নেপুরায়। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

‘ক্যাপ্টেন’ নেই। তাই হাতির দল সামলাতে ঘোর সঙ্কটে ‘ম্যানেজাররা’!

Advertisement

শনিবার সকালে মেদিনীপুর গ্রামীণের নেপুরা থেকে দু’টি পূর্ণবয়স্ক হাতির দেহ উদ্ধার হয়। বিদ্যুৎস্পষ্ট হয়ে মারা যায় হাতি দু’টি। বন দফতরের এক সূত্রে খবর, যে ৪০-৪৫টি হাতির যে দল এই তল্লাটে ছিল, সেই দলে বয়স্ক হাতি ছিল এরাই। সেই অর্থে এরাই ছিল দলের ‘ক্যাপ্টেন’। পূর্ণবয়স্ক হাতি দলের সামনের দিকে থাকত। তারা যেদিকে যেত, দলের অন্যরাও সেই পথে এগোত।

মেদিনীপুরের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহার স্বীকারোক্তি, ‘‘যে দু’টি হাতি মারা গিয়েছে, ওরা একেবারে পূর্ণবয়স্ক ছিল। ক্যাপ্টেনের মতোই। বলা ভাল ‘টিম-লিডার’। দলের বাকিরা ওদেরই ‘ফলো’ করত।’’ হাতির দলকে ‘ম্যানেজ’ করে নির্দিষ্ট দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন বনকর্মীরা। সেই অর্থে তাঁরা ‘ম্যানেজার’-এর কাজ করেন! ‘ক্যাপ্টেন’-এর অনুপস্থিতিতে হাতি তাড়াতে তাঁরা এখন একেবারে হিমশিম খাচ্ছেন!

Advertisement

‘ক্যাপ্টেন’-এর শূন্যস্থান কে পূরণ করবে? মেদিনীপুরের ডিএফও রবীন্দ্রনাথবাবু বলছিলেন, ‘‘এই স্থান কখনও বেশিক্ষণ শূন্য থাকে না। একজন টিম-লিডার গেলে অন্যজন টিম-লিডার হয়। ওই দলের অন্য বয়স্ক কেউই টিম-লিডার হবে। হয়তো এতক্ষণে হয়েও গিয়েছে। অন্যরা তাকেই ‘ফলো’ করছে।’’

শনিবার সকালে নেপুরার যেখানে দু’টি হাতির দেহ উদ্ধার হয়েছিল, ওই দিন রাতে ফের সেই এলাকায় এসেছিল হাতির দল। তাণ্ডব করে গিয়েছে। এক সময়ে দলটি কংসাবতী পেরিয়ে খড়্গপুরের দিকে চলে যাচ্ছিল। পরে ফের ফিরে আসে। মেদিনীপুরের ডিএফও বলেন, ‘‘আসলে হাতির ইন্দ্রিয় খুব তীক্ষ্ণ। ওরা বুঝতে পেরেছে, ওখানেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।’’
তাঁর কথায়, ‘‘স্বজন হারানোর শোক তো ওদেরও হয়। হয়তো ওখানে এসে ওরা কেঁদেওছে।’’

ঘুরেফিরে ফের বাগডুবিতে ফিরে গিয়েছে হাতির বড় দলটি। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার দিনভর বাগডুবিতে ছিল ৪০-৪৫টি হাতির দল। ইন্দকুড়িতে একটি, তিলাঘাগরিতে একটি, জঙ্গলখাসে একটি, শুকনাখালিতে ১৫টি, খাসজঙ্গলে একটি হাতি ছিল। শুকনাখালিতে যে ১৫টি হাতি রয়েছে, সেই দলটি খড়্গপুর গ্রামীণের দিক থেকে শনিবার রাতেই মেদিনীপুর গ্রামীণে ঢুকেছে। এক বনকর্মীর কথায়, ‘‘অনেক এলাকায় মাঠ ভর্তি ফসল রয়েছে। একটা বড় দল নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছিল। এখন আবার আরেকটা দল এসে জুটল! এরপর কী যে হবে!’’ তিনি মানছেন, বড় দলটির ‘ক্যাপ্টেন’ নেই। তাই হঠাৎ হঠাৎ শুঁড় উঁচিয়ে পথ বদলে ফেলছে দলের অন্যরা। বিপাকে পড়ছেন বনকর্মীরা।

এই পরিস্থিতিতে ‘ঘরের হাতি ঘরে ফেরাতে’ ঘন ঘন বৈঠকও করছে বন দফতর। রবিবার ছুটির দিনেও বৈঠক হয়েছে। এক বনকর্মীর কথায়, ‘‘আমাদের আবার ছুটি! হাতি তাড়াতে কালঘাম ছুটছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন