ছত্রধর মাহাতো।ফাইল চিত্র।
আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীরা চাকরি পেয়েছেন। ক্ষোভ ছিল মাওবাদী হানায় নিহত ও নিখোঁজদের পরিবারের। সদ্য শেষ হওয়া জেলা সফরে চাকরি দিয়ে সে ক্ষোভেও প্রলেপ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে প্রশাসনিক বৈঠক সেরে বৃহস্পতিবারই কলকাতায় ফিরেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ঘটনাচক্রে তাঁর ঝাড়গ্রাম ছাড়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মেদিনীপুর গ্রামীণের চাঁদড়ায় বৈঠক করলেন জনসাধারণের কমিটির জনা তিরিশ প্রাক্তন সদস্য।
কেন এই বৈঠক? কী তাঁদের দাবি? স্থানীয় সূত্রের খবর, জনসাধারণের কমিটির প্রাক্তন সদস্যদের একাংশ দাবি তুলতে শুরু করেছেন, তাঁদেরও চাকরি দিতে হবে। কারণ, তাঁরাও জঙ্গলমহলের অশান্তি পর্বের সেই আন্দোলনের সঙ্গী ছিলেন। বিজেপির দাবি, বৈঠকে যাঁরা ছিলেন তাঁদের বেশিরভাগই তৃণমূলের কর্মী, সমর্থক বলে পরিচিত। বৈঠকে ছিলেন সনাতন বেরা। সনাতন এক সময়ে কমিটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। চাঁদড়ার বাসিন্দা সনাতন এখন এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত। শুক্রবার সনাতন বলেন, ‘‘আমি তেমন কিছু জানি না। বলতেও পারব না। বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। গিয়েছিলাম। তবে আমাদের কথাও সরকারের ভাবা উচিত।’’ বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে সে বিষয়ে বলতে রাজি নন সনাতন। তবে সূত্রের খবর, আগামী দিনে নতুন এক সংগঠন গড়ে উঠতে পারে জঙ্গলমহলে। দাবি উঠতে পারে পুরনো মামলা প্রত্যাহারের। সে নিয়েও না কি বৈঠকে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে।
জনসাধারণের কমিটির প্রাক্তন নেতা ছত্রধর মাহাতো এখন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক। তাঁকেই জঙ্গলমহলের মুখ করে এগোতে চাইছে শাসক দল। চাকরির দাবিতে ছত্রধরের অবশ্য সমর্থন রয়েছে। তিনি বলছেন, ‘‘জনসাধারণ কমিটির আন্দোলনে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে বিগত বাম সরকার বহু মিথ্যা মামলা রুজু করেছিল। সেই সব মামলায় বহু মানুষ জেরবার হচ্ছেন। এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে তাঁরা আন্দোলন করেছিলেন। ফলে তাঁদের দাবির প্রতি আমার সমর্থন রয়েছে।’’ ছত্রধরের মন্তব্য, ‘‘বাম আমলে দায়ের হওয়া মামলাগুলি প্রত্যাহার করে নেওয়া হলে আদিবাসী-মূলবাসী মানুষগুলি দীর্ঘ এক দশকের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবেন। আমাদের জননেত্রী মুখ্যমন্ত্রী সবার কথা ভাবেন। ফলে তাঁর নজরে বিষয়টি এলে নিশ্চয়ই তিনি বিবেচনা করবেন বলেই আমার বিশ্বাস।’’
চাঁদড়ার বৈঠক নিয়ে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক স্তরে শোরগোল শুরু হয়েছে। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ ওই বৈঠকের ব্যাপারে খোঁজখবর শুরু করেছে। তৃণমূলের দাবি, বিজেপির মদতে ওই বৈঠক। মেদিনীপুর গ্রামীণের তৃণমূল নেতা অঞ্জন বেরা বলেন, ‘‘একটা বৈঠক হয়েছে বলে শুনেছি। এক সময়ে যারা জনসাধারণের কমিটি করত, তাদের কয়েকজনই না কি বৈঠকে ছিল। নতুন করে জঙ্গলমহলে অশান্তি তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। বিজেপি ওদের মদত দিচ্ছে, উস্কাচ্ছে।’’ মেদিনীপুর গ্রামীণের বিজেপি নেতা সুজয় দাস পাল্টা বলেন, ‘‘তৃণমূল সবেতেই বিজেপির ভূত দেখে। ওই বৈঠকের সঙ্গে বিজেপির কোনও সম্পর্ক নেই।’’