মেদিনীপুর আদালতে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি দেবাশিস কর গুপ্ত। নিজস্ব চিত্র
ঘরের দেওয়ালের ইতিউতি হরেক রকম আঁকিবুকি। একপাশে ছোটপর্দায় দেখা যাচ্ছে কার্টুন। অন্য পাশে রাখা ‘নতুন পাঠ’-সহ কিছু বইপত্র। খেলার সরঞ্জামও। দেখলে মনে হবে যেন ছোটদের খেলার ঘর। আসলে শিশুবান্ধব আদালতের এক কক্ষ।
বৃহস্পতিবার মেদিনীপুরে শিশু বান্ধব আদালতের উদ্বোধন হল। উদ্বোধন করেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি দেবাশিস কর গুপ্ত। ছিলেন হাইকোর্টের বিচারপতি নাদিরা পাথেরিয়া, বিচারপতি দেবাংশু বসাক প্রমুখ। যে ভাবে এই কক্ষ সাজানো হয়েছে তার প্রশংসা করেন প্রধান বিচারপতি। এ দিন বিকেলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়। ছিলেন মেদিনীপুরের জেলা ও দায়রা বিচারক অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া, অতিরিক্ত জেলাশাসক প্রণব বিশ্বাস প্রমুখও। এর আগে রাজ্যে চারটি শিশু আদালত হয়েছে। মেদিনীপুরেরটি পঞ্চম।
সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট প্রতিটি রাজ্যের হাইকোর্টকে সেই রাজ্যের প্রতিটি জেলায় শিশু বান্ধব আদালত তৈরির নির্দেশ দেয়। সেই মতো
এই পদক্ষেপ।
এ দিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সুন্দর ভাবে সঞ্চালনা করেন জেলা ও দায়রা বিচারক অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। কেন এমন ঘর? যে সব শিশুরা বিভিন্ন অপরাধের শিকার, তারা যাতে সাক্ষ্য দিতে আদালতে এসে ভয় না পায়, ঘাবড়ে না যায়, সেই জন্য শিশুদের উপযোগী পরিবেশের এই ব্যবস্থা আদালতে করা হয়েছে।
উদ্বোধনের পরে শিশু বান্ধব আদালতে এক মামলার সাক্ষ্যগ্রহণও হয়েছে। বিচারক নবনীতা রায়ের এজলাসে সাক্ষ্য দেন এক নির্যাতিতা নাবালিকার মা। ঘটনাটি গড়বেতা থানা এলাকার। মাস কয়েক আগের। ওই নাবালিকাকে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। এই মামলার সরকারি আইনজীবী গৌতম মল্লিক বলছিলেন, ‘‘অপরাধের শিকার শিশুরা সাক্ষ্য দিতে এসে এখানে বাড়ির মতো পরিবেশ পাবে। এটা ভাল।’’ মামলার অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী মৃণাল চৌধুরীর কথায়, ‘‘শিশুদের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষায় এই আদালতের প্রয়োজন ছিল।’’
শিশুদের জন্য খেলনা ও অনান্য অনেক সরঞ্জামেরও বন্দোবস্ত রয়েছে এখানে। যাতে তারা ভয় ও জড়তা ছেড়ে খোলা মনে নিজেদের কথা বলতে ও ভাব প্রকাশ করতে পারে। মেদিনীপুরের আইনজীবী শক্তিপদ দাস অধিকারী, তীর্থঙ্কর ভকতের কথায়, ‘‘যে আদালতে শিশুরা আসে সেখানে এমন পরিবেশই থাকা দরকার।’’