মন্দিরে বিয়েতে লাগবে বয়সের প্রমাণ

লুকিয়ে মন্দিরে গিয়ে সিঁদুর দেওয়ার দিন শেষ! মন্দিরে বিয়ে করতে হলে এ বার বর-কনে দু’জনকেই দেখাতে হবে বয়সের প্রমাণপত্র। উপযুক্ত বয়স হলে তবেই বিয়ের বন্দোবস্ত করবেন পুরোহিত।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৭ ১৩:৩০
Share:

লুকিয়ে মন্দিরে গিয়ে সিঁদুর দেওয়ার দিন শেষ! মন্দিরে বিয়ে করতে হলে এ বার বর-কনে দু’জনকেই দেখাতে হবে বয়সের প্রমাণপত্র। উপযুক্ত বয়স হলে তবেই বিয়ের বন্দোবস্ত করবেন পুরোহিত। নাবালিকা বিয়ে বন্ধে এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন গোয়ালতোড়ের সনকা মন্দির কর্তৃপক্ষ। মন্দির কমিটির এই উদ্যোগে খুশি প্রশাসন। গোয়ালতোড়ের বিডিও স্বপনকুমার দেব বলছেন, “এটি ভাল উদ্যোগ। এ নিয়ে দ্রুত ওই মন্দির কমিটির সঙ্গে আলোচনা করব। এলাকার সমস্ত মন্দিরেই এই ব্যবস্থা চালু করার চেষ্টা করব।’’

Advertisement

নাবালিকা বিয়ে বন্ধে আগেই কন্যাশ্রী প্রকল্প চালু করেছে রাজ্য সরকার। কমবয়সী মেয়েদের বিয়ে রুখতে স্কুলগুলিতেও প্রচার চালানো হচ্ছে। হচ্ছে কর্মশালা। শুধু পড়ুয়া নয়, বিয়ের কাজের সঙ্গে যুক্ত পুরোহিত, নাপিতদেরও প্রশিক্ষণ দিয়েছে প্রশাসন। তাতেও রাশ টানা যায়নি।

বাড়িতে নাবালিকা বিয়ে আয়োজনের খবর পেলে প্রশাসনিক আধিকারিকরা গিয়ে বিয়ে বন্ধ করে দিচ্ছেন। তাই বাড়ির থেকে মন্দিরে বিয়ের আয়োজন করাটা নিরাপদ মানছেন অনেকে। প্রশাসনের চোখ এড়াতে অনেক ক্ষেত্রে মন্দিরে গোপনে নাবালিকা বিয়ের আয়োজন হচ্ছে। মন্দিরে বিয়ে মিটে গেলেই বর-কনে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চম্পট দিচ্ছেন। ফলে অনেক চেষ্টা করেও তাদের হদিস পাচ্ছে না প্রশাসন।

Advertisement

প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় গড়ে ১৫-২০টি মন্দিরে বিয়ে হয়। প্রতিটি মন্দিরে বছরে গড়ে বিয়ে হয় ৫০-৬০টি। এর মধ্যে অনেক নাবালিকার বিয়েও হয়।’’ গোয়ালতোড়ের সনকা মন্দিরেও প্রায়ই গোপনে অনেকে বিয়ে করতে আসে। এ বার কেউ মন্দিরে বিয়ে করতে হলে তাদের বয়সের প্রমাণ পত্র দেখা হবে। পাত্রের ক্ষেত্রে ২১ বছর আর পাত্রীর ক্ষেত্রে ১৮ হলে তবেই হবে বিয়ে। মন্দির কমিটির সভাপতি সুকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মন্দিরে অনেকে বিয়ে করতে আসেন। এ বার বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীকে বয়সের প্রমাণ পত্র দাখিল করতে হবে। রেজিস্টার খাতায় তাঁদের নাম, ঠিকানাও নথিভুক্ত করা হবে। তারপর বিয়ে।’’

সনকা মন্দির কমিটির এই সিদ্ধান্ত শুনে একই পথে হাঁটার কথা ভাবছেন অন্য মন্দির কর্তৃপক্ষও। ক্ষীরপাই শহরের ঘুঘুডাঙা কালী মন্দিরের পুরোহিত শিবু চক্রবর্তী বলেন, “আমরাও এ বার একই পথে হাঁটার কথা ভাবছি।” একই ভাবে, ঘাটালের বরদা বিশালাক্ষী মন্দির কমিটির এক সদস্যও বলছেন, “আমাদের মন্দিরেও বছরে প্রায় ৬০-৭০টি বিয়ে হয়। এতদিন তো পাত্র-পাত্রীর কোনও বয়সের প্রমাণপত্র দেখতে চাইনি। দ্রুত কমিটির বৈঠক ডেকে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে।”

এ নিয়ে ঘাটালের মহকুমাশাসক পিনাকীরঞ্জন প্রধান বলছেন, “মন্দিরে বিয়ে হতেই পারে। তবে বর-কনের বিয়ের উপযুক্ত বয়স হয়েছে কি না তা দেখা জরুরি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ঘাটাল মহকুমার কোন কোন মন্দিরে বিয়ের ব্যবস্থা হয়, তার তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মন্দির কমিটিগুলির কাছেও বয়সের প্রমাণপত্র নিয়ে বিয়ের ব্যবস্থা করার আর্জি জানাব।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement