CPIM

Fullora Mondal: জেলমুক্ত ফুল্লরার  ঠাঁই পার্টি অফিসেই

কঙ্কাল-কাণ্ডে দীর্ঘ দিন জেল খেটেছেন সুশান্তও। বহু দিন এলাকায় ফিরতে পারেননি। আপাতত নেতাইয়েফেরা হচ্ছে না ফুল্লরারও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২২ ০৭:৪৯
Share:

জেল থেকে বেরনোর পরে ফুল্লরাকে বামকর্মীদের সংবর্ধনা, মেদিনীপুরে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

শীর্ষ আদালত জামিন মঞ্জুর করেছিল আগেই। তারপর শুক্রবার মেদিনীপুর জেল থেকে ছাড়া পেলেন নেতাই গণহত্যা কাণ্ডে অভিযুক্ত সিপিএম নেত্রী ফুল্লরা মণ্ডল। গ্রেফতার হয়ে প্রায় ৮ বছর জেলবন্দি ছিলেন তিনি। তবে এখনই নেতাই গ্রামে ফিরছেন না ফুল্লরা। আপাতত তাঁর ঠিকানা ঝাড়গ্রাম শহরে সিপিএমের জেলা শাখা সংগঠন ‘শহিদ স্মৃতি ভবনে’র দোতলার একটি ঘর।

Advertisement

গত সোমবার ফুল্লরার জামিনের আবেদন মঞ্জুর করে সুপ্রিম কোর্ট। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র মেদিনীপুর জেলে পৌঁছনোর পরে এ দিন তিনি ছাড়া পান। এ দিন জেল থেকে বেরোতেই ফুলের মালায় ফুল্লরাকে বরণ করে নেন সিপিএম নেতা-কর্মীরা। ছিলেন দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষও। ফুল্লরা বলেন, ‘‘আমি আপ্লুত। এখানে আমার সব সাথীদের পেয়েছি।’’ বিশেষ ভাবে যোগ করেন, ‘‘এখানে আমার জেলা সম্পাদক আছেন। এই জয় তাঁকে উৎসর্গ করছি।’’ উল্লেখ্য, পশ্চিম মেদিনীপুর ভেঙে এখন ঝাড়গ্রাম জেলা হয়েছে। ফুল্লরা বর্তমানে দলের ঝাড়গ্রাম জেলা কমিটির সদস্য। সুশান্তের মন্তব্য, ‘‘রাজ্যের শাসক দল মাওবাদীদের সঙ্গে পরিকল্পনা করেই ওই ঘটনা (নেতাই গণহত্যা) সংগঠিত করেছিল। এখনও যাঁরা জেলে রয়েছেন, অনুজ পাণ্ডে-সহ সবাই চক্রান্তের শিকার।’’

কঙ্কাল-কাণ্ডে দীর্ঘ দিন জেল খেটেছেন সুশান্তও। বহু দিন এলাকায় ফিরতে পারেননি। আপাতত নেতাইয়েফেরা হচ্ছে না ফুল্লরারও। ফুল্লরা বলছেন, ‘‘বাড়ি যেতে খুব ইচ্ছে করছে। যেতে কোনও বাধা নেই। দলের নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে দেখব কবে যেতে পারি।’’ জানা যাচ্ছে, নেতাই গ্রামেই মামলার সাক্ষীরা রয়েছেন। তাই সাক্ষীদের প্রভাবিত করার মতো কোনও অভিযোগ যাতে না ওঠে, সে ব্যাপারে বাড়তি সতর্ক সিপিএম। নেতাই শহিদ স্মৃতিরক্ষা কমিটির সম্পাদক সরজিৎ রায় বলছেন, ‘‘গণহত্যার অভিযুক্ত জামিন পাওয়ায় মৃতের পরিবার ও আহতরা মুষড়ে পড়েছেন। বিচার যে কবে শেষ হবে সেটাই আমরা বুঝতে পারছি না।’’ ফুল্লরা গ্রামে ফিরলে কি কোনও সমস্যা হবে? সরজিতের জবাব, ‘‘এটা গ্রামবাসীর সম্মিলিত সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে।’’

Advertisement

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি লালগড়ের নেতাই গ্রামে সিপিএম কর্মী রথীন দণ্ডপাটের বাড়ি থেকে গ্রামবাসীদের লক্ষ্য করে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে। মৃত্যু হয় ৪ মহিলা-সহ ৯ জনের। ২০১৪ সালের ৩০ জুন গ্রেফতার হন ফুল্লরা। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নেতাই-কাণ্ডে জখমদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে বাধা দিয়েছিলেন। প্রথমে সিআইডি, পরে হাই কোর্টের নির্দেশে সিবিআই তদন্ত শুরু করে। ২০ জন সিপিএম নেতা-কর্মী গ্রেফতার হন। মামলাটি এখন বিচারাধীন। ফুল্লরাকে নিয়ে এখনও পর্যন্ত তিনজন জামিন পেলেন।

এ দিন বেলা বারোটা নাগাদ মেদিনীপুর থেকে ঝাড়গ্রাম রওনা দেন ফুল্লরা। মেদিনীপুরে তাঁকে আনতে যান দলের ঝাড়গ্রাম জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য দিবাকর হাঁসদা, সৌতম মাহাতো, হেনা শতপথী এবং জেলা কমিটির সদস্য যূথিকা মাহাতো ও প্রশান্ত দাস। ফুল্লরার ভাইপো অসিত মণ্ডলও সপরিবার পিসিকে আনতে গিয়েছিলেন। পথে রাধানগর মোড়ে গাড়ি থামিয়ে ফুল্লরাকে স্বাগত জানান সিপিএমের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। দুপুর দেড়টায় অরণ্যশহরে সিপিএমের জেলা কার্যালয়ের যাওয়ার আগেই রাজ্য সড়কের পাঁচ মাথার মোড়ের কাছে নেতা-কর্মীদের জমায়েত দেখে গাড়ি থেকে নেমে যান ফুল্লরা। সেখানেও তাঁকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানানো হয়। তারপর পদযাত্রা করে ফুল্লরাকে নিয়ে যাওয়া হয় জেলা কার্যালয়ে। শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে স্লোগানও ওঠে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপ সরকার এ দিন কলকাতায় গিয়েছিলেন। দলের তরফে জেলা কমিটির নেতা পার্থ যাদব, সৌমেন মাহাতো, তুষার দাস, বর্ষীয়ান নেতা নভেন্দু হোতা প্রমুখ ফুল্লরাকে স্বাগত জানান।

দল সূত্রে খবর, প্রথমে ঠিক ছিল ফুল্লরা আলিমুদ্দিনে থাকবেন। পরে রাজ্য নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত বদল করে ঝাড়গ্রামে থাকার ব্যবস্থা করেন। জেলা সিপিএমের এক নেতা জানাচ্ছেন, ফুল্লরা নেতাই গ্রামের বাড়িতে যাবেন কি-না সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দলই নেবে। অবিবাহিত ফুল্লরা এলাকাছাড়া হয়ে থাকার সময়ে মা ইন্দুবালার মৃত্যু হয়। পরে জেলে থাকাকালীন ফুল্লরার ছোড়দা ভোলানাথ মণ্ডলের মৃত্যু হয়। ভোলানাথের স্ত্রী অনেক বছর আগে ক্যানসারে প্রয়াত হন। এ প্রসঙ্গে তৃণমূলকে একহাত নেন সুশান্ত ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘মা মারা যাওয়ার পরেও ওঁকে প্যারোল দেয়নি। ভাই মারা গিয়েছে, তাতেও প্যারোলে আপত্তি করেছে। বর্তমান শাসক দলের কোনও মানবিক দিক নেই।’’

নেতাইয়ের বাড়িতে রয়েছেন ফুল্লরার দুই ভাইপো, ভাইপোদের স্ত্রী, নাতি-নাতনিরা। ফুল্লরা বারবারই বলছেন, ‘‘বাড়ি যেতে চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন