রূপনারায়ণের তীরে জমে রয়েছে জঞ্জাল। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।
পরিচ্ছন্ন বাংলা গড়ার লক্ষ্যে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের উদ্যোগে আজ, সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে সপ্তাহব্যপী পরিচ্ছন্নতা অভিযান। কিন্তু খোদ পূর্ব মেদিনীপুর জেলা শহর তমলুকে জঞ্জাল ফেলার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ যেন প্রশাসনিক অবহেলার নিদর্শন।
শহরের বর্জ্য-আবর্জনা ফেলার জন্য শহর সংলগ্ন নদীর ধারে কয়েক একর চর জমি কিনেছিল তমলুক পুরসভা। নদী বাঁধের ধারে বসতি এলাকায় ওই জমিতে প্রায় ১১ বছর আগে জঞ্জাল ফেলা শুরু হয়েছিল। কিন্তু ওই জমির অধিকাংশ নদী ভাঙনের কবলে চলে গেলেও সেখানে জঞ্জাল ফেলা বন্ধ হয়নি। যার জেরে পুরসভার ফেলা জঞ্জালের স্তূপের একাংশ রূপনারায়ণের জলে মিশে যায়। দুর্গন্ধে নাভিশ্বাস উঠছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।
পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সদর তমলুক শহরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে দক্ষিণচড়া শঙ্করআড়া এলাকার এই হাল নিয়ে এলাকার বাসিন্দারা রীতিমতো বিরক্ত। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সারা শহরের জঞ্জাল লরি বোঝাই করে রূপনারায়ণের ধারে জমা করার ফলে জোয়ারের জলে আবর্জনা মিশে জল দূষণ করছে খোদ পুরসভা। আর বাঁধের ধারে বসতি এলাকায় জঞ্জাল ফেলার ফলে অস্বাস্থ্যকর ও দুর্গন্ধময় পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
সমস্যার কথা মেনে তমলুকের উপ-পুরপ্রধান দীপেন্দ্রনারায়ণ রায় বলেন, ‘‘দক্ষিণচড়া শঙ্করআড়া এলাকায় রূপনারায়ণের ধারে জমি কিনে সেখানে জঞ্জাল ফেলার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কয়েক বছরে ওই চরজমির অধিকাংশই নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় জঞ্জাল ফেলার সমস্যা হচ্ছে।’’
পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের বাসিন্দাদের আবর্জনা পুরসভার সাফাই কর্মীরা সংগ্রহ করে গাড়িতে বোঝাই করে নিয়ে আগে ফেলত শহরের পদুমবসান এলাকায়। শহরের ওই এলাকা আগে ময়লাবাড়ি হিসেবে পরিচিত ছিল।
কিন্তু ওই ময়লাবাড়ি সংলগ্ন এলাকায় জনবসতি বাড়তে থাকায় সেখানে জঞ্জাল ফেলা বন্ধ করার দাবি ওঠে। ফলে পুরসভা বিকল্প জমির খোঁজ শুরু করে।
রূপনারায়ণের চরে তিন একর জায়গা কিনে নতুন ময়লাবাড়ি তৈরি করে পুরসভা। ২০০৫ সাল থেকে পুরসভা এলাকার সব ওয়ার্ডের জঞ্জাল ফেলা শুরু হয় ওই জমিতে। কিন্তু রূপনারায়ণের ভাঙনের জেরে ওই জমি ক্রমশ নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় পুরসভার জঞ্জাল ফেলার জায়গা ক্রমশ কমতে থাকে। ফলে কম জায়গার উপরে পুরসভার ফেলা জঞ্জালের পাহাড় জমতে থাকে। আর ভাঙনের জেরে জঞ্জাল ফেলার জায়গা আগের চেয়ে কমে এখন মাত্র এক তৃতীয়াংশ ঠেকেছে
বলে অভিযোগ।
দিন কয়েক আগেই এলাকায় গিয়ে দেখা যায় রূপনারায়ণের বাঁধে তৈরি পাকা বাইপাস রাস্তার ধারেই রয়েছে জঞ্জালের পাহা়ড়। সদ্য ফেলা জঞ্জালের একাংশ রাস্তার উপর ছড়িয়ে রয়েছে। স্তূপের পাশে রয়েছে বেশ কিছু বসত বাড়ি। দুর্গন্ধময় ও অস্বাস্থ্য পরিবেশের মধ্যে থাকা সব বাড়ির দরজা জানালা বন্ধ।
ওই জঞ্জালের স্তূপের পাশেই ভাত রাঁধছিলেন গৃহবধূ সরস্বতী জানা। সরস্বতীদেবী বলেন, ‘‘আগে ওই জমির কিছুটা দূরে ওই জঞ্জাল ফেলা হত। তবে ওই জমির বেশিরভাগ নদীতে চলে গিয়েছে, এখন বাড়ির কাছে জঞ্জাল ফেলছে।’’
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ‘‘নদীধারে জমে থাকা জঞ্জালের স্তূপ ভরা জোয়ারের সময় স্রোতে মিশে নদীতেও দূষণ ছড়াচ্ছে। আমরা চাই কোন ফাঁকা জায়গায় শহরের জঞ্জাল ফেলা হোক।’’ স্থানীয় ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল কাউন্সিলর স্নিগ্ধা মিশ্র বলেন, ‘‘জঞ্জাল ফেলার ওই জায়গার অধিকাংশই নদী ভাঙনে চলে গিয়েছে। এখন বসতি এলাকা সংলগ্ন জমিতে জঞ্জাল ফেলা হচ্ছে। এটা বন্ধ করার জন্য আমি পুর কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছি। ’’