পড়তে চেয়ে মাথা ফাটলো নাবালিকার

পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৭ এপ্রিল সুতাহাটা থানার কাশীপুরের বাসিন্দা রহিম মল্লিকের সঙ্গে বিয়ে হয়ে যায় আমিনার। কাজের সূত্রে রহিম দিল্লিতে থাকেন। কিন্তু জোর করে বিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে শ্বশুরবাড়িতে থাকতে অস্বীকার করে আমিনা। বাপের বাড়িতেই সে থাকত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হলদিয়া শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৭ ১২:৪০
Share:

সাহসিনী: আমিনা। নিজস্ব চিত্র

বিয়ে করতে চায়নি। তার বদলে সে চেয়েছিল পড়তে। কিন্তু মেয়ের সেই আর্তি রাখেননি বাবা। জোর করে পাশের গ্রামের বাসিন্দা দিল্লিতে কাজ করা ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেন। হলদিয়ার মোহনপুরের বাসিন্দা বছর ষোলোর আমিনা খাতুন বিয়ে রুখতে প্রতিবেশীদের দ্বারস্থও হয়। কিন্তু মেয়ের বাবার বদরাগ স্বভাবের কারণে কেউই তার পাশে দাঁড়াতে সাহস পাননি বলে অভিযোগ দশম শ্রেণির ছাত্রী আমিনার।

Advertisement

রাজ্যে নাবালিকা বিয়ে নিয়ে লাগাতার প্রচার চালাচ্ছে পুলিশ ও প্রশাসন। নাবালিকা বিয়ের কুফল নিয়ে নানা শিবিরও হচ্ছে। কিন্তু তারপরেও এমন ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে নাগরিক সচেতনতা নিয়ে।

পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৭ এপ্রিল সুতাহাটা থানার কাশীপুরের বাসিন্দা রহিম মল্লিকের সঙ্গে বিয়ে হয়ে যায় আমিনার। কাজের সূত্রে রহিম দিল্লিতে থাকেন। কিন্তু জোর করে বিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে শ্বশুরবাড়িতে থাকতে অস্বীকার করে আমিনা। বাপের বাড়িতেই সে থাকত। যদিও তার অভিযোগ, শ্বশুরবাড়িতে না যাওয়ার জন্য মাঝেমধ্যেই কপালে জুটত বাবার মার। সেই সঙ্গে চলত পড়াশোনা ছেড়ে সংসারের মন দেওয়ার পরামর্শ।

Advertisement

ঘটনার সূত্রপাত গত বৃহস্পতিবার। এ দিন দিল্লি থেকে ফিরে স্ত্রীকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য শ্বশুরবাড়িতে আসেন রহিম। কিন্তু আমিনা দৃঢ়ভাবে জানিয়ে দেয় সে পড়াশোনা করতে চায়। তাই শ্বশুরবাড়ি যাবে না। অভিযোগ, এ কথা শোনার পরেই রেগে যান বাবা সেখ ফজলুল ও রহিম। আমিনাকে রাস্তায় টেনে নিয়ে গিয়ে শুরু হয় মারধর। নিরুপায় আমিনা পঞ্চায়েত প্রধানকে সব জানাবে বললে নির্যাতন আরও বাড়ে। মারের চোটে মাথা ফেটে যায় আমিনার। প্রতিবেশীরা তাকে শুশ্রূষা করে কুকড়াহাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শেফালি ভৌমিকের কাছে নিয়ে যান। শেফালিদেবী আমিনাকে বিডিও সুরজিৎ শিকদারের কাছে নিয়ে যান। বিডিওকে সমস্ত ঘটনা বলে সে পড়াশোনা করতে চায় বলে জানায়। বিডিও আমিনাকে সঙ্গে নিয়ে সুতাহাটা থানায় গিয়ে বাবা ও স্বামীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। যদিও ঘটনার পর থেকেই পলাতক রহিম ও ফজলুল।

হলদিয়ার এসডিপিও তন্ময় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিডিও কাছ থেকে নাবালিকার অভিযোগ পেয়েছি। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিরাপত্তার কারণে মেয়েটিকে নিমতৌড়ির হোমে পাঠানো হয়েছে।’’ হলদিয়ার এসডিও পূর্ণেন্দু নস্কর বলেন, ‘‘আমিনা যাতে পড়াশোনা করতে পারে তার ব্যবস্থা করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন