প্রতীকী ছবি।
সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্দ টাকা রাখার জন্য এতদিন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকেই বেছে নিত রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতর। এবার থেকে সমবায় ব্যাঙ্কের শাখাগুলিতেও ওই বরাদ্দ টাকা রাখা যাবে বলে নির্দেশিকা দিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। এর ফলে জেলার সমবায় ব্যাঙ্কগুলি আর্থিকভাবে শক্তপোক্ত হবে বলে দাবি প্রশাসনের।
সম্প্রতি জেলাশাসকের দফতর থেকে এ বিষয়ে জেলা পরিষদ, জেলা গ্রামোন্নয়ন শাখা, হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ, দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ-সহ সব সরকারি দফতরের কাছে নির্দেশিকা পাঠিয়েছে। জেলায় তমলুক-ঘাটাল, মুগবেড়িয়া, বলাগেড়িয়া এবং বিদ্যাসাগর কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কে কোর ব্যাঙ্কিং সিস্টেম ব্যবস্থা, এটিএম পরিষেবা রয়েছে। এছাড়া, সেখানে অন্যত্র টাকা পাঠানোর জন্য এনইএফটি বা আরটিজিএস পদ্ধতিও রয়েছে। নির্দেশকায় জানানো হয়েছে, কোনও দফতর চাইলে ওই সমবায় ব্যাঙ্কের শাখায় সরকারি অর্থ রাখার জন্য নতুন ব্যাঙ্ক আকাউন্ট খুলতে পারে। অথবা ওই দফতরের অন্য কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট থাকলে সেই অ্যাকাউন্ট ওই সব সমবায় ব্যাঙ্কগুলিতে স্থানান্তর করতে পারবে।
পাশাপাশি, নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, বিভিন্ন দফতরের সরকারি কর্মী চাইলে সংশ্লিষ্ট ওই সব সমবায় ব্যাঙ্কে তাঁদের ‘স্যালারি অ্যাকাউন্ট’ খুলতে পারবেন। ফলে জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েতে সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ টাকা সমবায় ব্যাঙ্কগুলির স্থানীয় শাখায় রাখাতে আর কোনও বাধা থাকছে না।
প্রশাসনিক ও সমবায় দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্দ অর্থ এবং রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরের কর্মীদের ‘স্যালারি অ্যাকাউন্ট’ যাতে সমবায় ব্যাঙ্কের মাধ্যমেও করা হয় সেজন্য তমলুক-ঘাটাল কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। এ বিষয়ে রাজ্য সরকারের অনুমোদন পাওয়ার পরেই জেলাশাসক গত ৫ সেপ্টেম্বর নির্দেশ দেন— সরকারি প্রকল্পের অর্থ জমা রাখা ও কর্মীদের বেতন পাওয়ার জন্য জেলায় চারটি কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক শাখায় অ্যাকাউন্ট খোলা যেতে পারে। উল্লেখ্য, এতদিন শুধুমাত্র প্রাথমিক, মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষক- শিক্ষিকা, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের একাংশ সমবায় ব্যাঙ্কের মাধ্যমে বেতন নিতেন।
সরকারি নির্দেশে স্বভাবতই খুশি জেলার তমলুক-ঘাটাল কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক-সহ অন্য সমবায় ব্যাঙ্ক কর্তারা। তমলুক-ঘাটাল কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান গোপাল মাইতি বলেন, ‘‘জেলার প্রতিটি ব্লকেই কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের শাখা রয়েছে। এই সব শাখায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মত পরিষেবার ব্যবস্থা রয়েছে। তাই সরকারি প্রকল্পের বরাদ্দ অর্থ জমা রাখা ও কর্মীদের বেতনের অ্যাকাউন্ট যাতে এই সব সমবায়ব্যাঙ্কে খোলা যায় সেজন্য রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম। এ বিষয়ে অনুমোদন মিলেছে। এতে সমবায় ব্যাঙ্কগুলি আর্থিকভাবেও শক্তিশালী হবে।’’
ওই অনুমোদনের ফলে জেলায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি কি আর্থিক দিক ক্ষতিগ্রস্ত হবে? জেলার লিড ব্যাঙ্ক ব্যাঙ্কের ম্যানেজার অসীম পণ্ডিত এ ব্যাপারে বলেন, ‘‘সরকারি প্রকল্পে বরাদ্দ অর্থ জমা রাখা বা কর্মীদের স্যালারি অ্যাকাউন্ট খোলার বিষয়টি সম্পূর্ণ ঐচ্ছিক। তাই এ নিয়ে আমাদের উদ্বেগের কিছু নেই।’’
নির্দেশিকা প্রসঙ্গে জেলাশাসক রশ্মি কমলের মতামত জানার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।