অভিযানের জের। শালপাতায় মুড়ে বিক্রি হচ্ছে মাংস।
শহর মেদিনীপুরে প্লাস্টিক বন্ধে অভিযানে নামল পুরসভা। আগাম ঘোষণা ছিলই। সেই মতো প্লাস্টিক বন্ধে সোমবার মেদিনীপুর শহরে অভিযানে নামল পুরসভা।
প্লাস্টিক বন্ধে নিষেধাজ্ঞা অবশ্য এই প্রথম নয়। আগেও মেদিনীপুর শহরে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে নির্দেশিকা জারি হয়েছে। দিন কয়েক পুরকর্মীরা দোকান-বাজারে হানা দিয়েছেন। তারপর যে কে সেই! পরবর্তী সময় আর নজরদারি ছিল না। ফলে, পরিবেশ বিধি ও প্লাস্টিক দূষণ নিরোধী আইনকে পাত্তা না দিয়ে শহরের দোকান- বাজারগুলোয় রমরমিয়ে ফের শুরু হয় প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহার। এ বারও সেই ঘটনার পুরনরাবৃত্তি হবে না তো, প্রশ্ন বিরোধীদের।
এমনিতেই প্লাস্টিকে অবরুদ্ধ শহরের প্রায় সব নিকাশি নালা। প্লাস্টিক-থার্মোকল জমে হাঁসফাঁস অবস্থা দ্বারিবাঁধ খালেরও। ফলে প্রতি বছর বর্ষায় নালা উপচে জলমগ্ন হয়ে পড়ে রাস্তা। নোংরা জল পেরিয়েই হাঁটাচলা করতে হয়। পরিস্থিতি দেখে ফের প্লাস্টিক বন্ধে তৎপর হয়েছেন পুর- কর্তৃপক্ষ। এ দিন সকাল থেকে পুরকর্মীরা শহরের একাধিক বাজারে হানা দেন। অভিযান চলে কোতয়ালিবাজার, স্কুলবাজারে। বেশ কিছু প্লাস্টিক বাজেয়াপ্ত করা হয়। জরিমানাও আদায় হয়।
অবৈধ প্লাস্টিক রাখার জন্য এক-একটি দোকান থেকে ৫০ টাকা করে জরিমানা আদায় করা হয়। অভিযানে সামিল হন পুর- কর্তারাও। ছিলেন পুরপ্রধান প্রণব বসু, উপপুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাস, পুর- পারিষদ (জঞ্জাল) শিপ্রা মণ্ডল প্রমুখ। পুরপ্রধান প্রণববাবু জানান, এই অভিযান চলবে। মেদিনীপুর পুর- এলাকায় ৪০ মাইক্রনের নীচে প্লাস্টিকের ব্যবহার ও মজুত সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ। নির্দেশ অমান্য করা হলে পুর- আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপপুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথবাবুও বলেন, “এ দিন প্রায় ৩০টি দোকান থেকে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এটা টোকেন জরিমানা। শুরুর দিকে টোকেন জরিমানা নিয়ে সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে। ৪০ মাইক্রনের কম ঘনত্বের প্লাস্টিক রাখলে পরবর্তী সময় আরও কড়া পদক্ষেপই করা হবে।” তাঁর দাবি, “শহরবাসী আগের থেকে এখন অনেক সচেতন। ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশও সচেতন হয়েছেন। অনেকে আর দোকানে প্লাস্টিক রাখছেন না।”
পুরসভার ঘোষণা ছিল, ১ মে থেকে শহরে প্লাস্টিক নিষিদ্ধ হবে। সেই মতোই এ দিন পুরকর্মীরা দোকান- বাজারে হানা দেন। এক পুর- কর্তা বলেন, “আগেই জানানো হয়েছিল, এ বার আর শুধু অনুরোধ জানিয়ে প্রচার শেষ হবে না। সরাসরি জরিমানা করা হবে। এ দিন তাই হয়েছে।” পুর-অভিযান দেখে শহরের বাসিন্দা সোমনাথ দাস, অনিন্দিতা অধিকারীরা বলেন, “প্লাস্টিক থেকে নানা সমস্যা দেখা দেয়। প্লাস্টিক দূষণ নিয়ন্ত্রণে আরও আগেই তৎপর হওয়া উচিত ছিল। দেরিতে হলেও পুরসভা পদক্ষেপ করছে। এটা ভাল দিক।”
পাশাপাশি শহরবাসীর একাংশের অভিযোগ, পুরসভার তৎপরতার অভাবেই মেদিনীপুরে প্লাস্টিক দূষণ বেড়েছে। এ নিয়ে সচেতনতা গড়ে তোলা হয়নি। সচেতনতা গড়ে তোলার দায়িত্ব তো পুরসভাকেই নিতে হবে।” উপপুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথবাবুর আশ্বাস, “পুরসভার নজরদারি ও কঠোর মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন উঠবে না! প্লাস্টিক দূষণের রাশ টানা হবেই! এ বার শহরে মাইকের মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। এ নিয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে।”
শুরু তো হল। মেদিনীপুর শহরের দোকান- বাজারে এই নজরদারি নিয়মিত হয় কি না, সেটাই দেখার!
ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।